|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত |
সংস্কার কবে |
বিপদ-সরণি |
প্রসেনজিৎ পাঠক |
পাশাপাশি দু’টি বাস চললেই পথচারীর হাঁটার জায়গা নেই। বিপাকে পড়তে হয় সাইকেল, মোটরবাইক এবং রিকশার মতো ছোট যানবাহনকেও। তার উপরে রাস্তার ধারে বিক্ষিপ্ত ভাবে গড়ে উঠেছে দখলদারি। বৃষ্টিতে রাস্তার ধারে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় খানাখন্দ। সব মিলিয়ে ২১১ নম্বর বাসরাস্তায় এখন কার্যত প্রাণ হাতে করে যাতায়াত। প্রতি মুহূর্তেই রয়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।
এই রাস্তাটির একাংশ চওড়া করার কাজ বছরখানেক আগে শুরু হলেও বাগুইআটির জোড়ামন্দির থেকে রাজারহাট পর্যন্ত অংশ চওড়া হয়নি দীর্ঘ দিনেও। পূর্ত বিভাগ (সড়ক) সূত্রে খবর, বাম আমলে পূর্ত বিভাগের এই রাস্তা চওড়া করার প্রস্তাব অর্থ দফতর থেকে ফিরে এসেছিল। এ ব্যাপারে আর একটি পরিমার্জিত প্রস্তাব পূর্ত দফতর খতিয়ে দেখছে। সেখান থেকে তা পাঠানো হবে অর্থ দফতরে। সেখানকার অনুমোদন মিললে কাজটি করা যাবে। |
|
বাগুইআটি ভিআইপি রোডে জোড়ামন্দির থেকে টাকি রোডের বেলিয়াঘাটা পর্যন্ত ২১১ বাসরাস্তাটি কম-বেশি ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ। ওই পথে বসিরহাট, হাসনাবাদ, এমনকী বাংলাদেশ সীমান্ত থেকেও রাজারহাট খড়িবাড়ি হয়ে বহু গাড়ি চলাচল করে। বিভিন্ন জেলা থেকে বহু গুরুতর অসুস্থ রোগীকে এই রাস্তা দিয়েই অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে আসা হয় কলকাতার হাসপাতালগুলিতে। এই রাস্তা লাগোয়া এলাকায় বেশ কিছু স্কুল আর একটি কলেজ থাকায় অসংখ্য পড়ুয়ারও যাতায়াত রয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও রাস্তাটি গুরুত্বপূর্ণ। সেই হিসেবে ২১১ নম্বর বাসরাস্তাটি কার্যত জাতীয় সড়কের মতোই গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।
জোড়ামন্দির থেকে রাজারহাট চৌমাথা পর্যন্ত কম-বেশি ৭ কিমি দীর্ঘ অংশের মধ্যেই যানচলাচল বেশি। দিন দিন বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তাটি অপরিসর হয়ে উঠেছে। ১৫-১৬ ফুট চওড়া এই রাস্তার দু’ধারে বিক্ষিপ্ত ভাবে গড়ে উঠেছে ‘অবৈধ’ দখলদারি। যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিত ভাবে ফেলা হচ্ছে নির্মাণসামগ্রী, যা অধিকাংশ সময়েই পথচারী, সাইকেল ও মোটরবাইক চালকদের পক্ষে বিপজ্জনক। বর্ষায় পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় বাস, ট্রাকের মতো ভারী গাড়ির চাকায় ছোট-বড় খানাখন্দ তৈরি হচ্ছে রাস্তার ধারে। সেগুলিতে জল জমে থাকায় বড় গাড়িকে পাশ দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন পথচারীরা। বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। প্রতি বছরের মতো চলতি বর্ষাতেও রাস্তাটি বিপজ্জনক হয়ে ওঠায় ভুগতে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের।
এই পথে নিত্য যাতায়াতকারী কলেজছাত্র প্রবীরকুমার সাহা বললেন, “গাড়ি চললে রাস্তার ধার দিয়ে হাঁটার উপায় থাকে না। যতটুকু জায়গা থাকে, কোথাও জলকাদায় ভরা গর্ত, কোথাও আবার নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা। সাইকেল চালিয়ে যেতে গেলেও যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।”
বছরখানেক আগে টাকি রোডের বেলিয়াঘাটা থেকে রাজারহাট চৌমাথা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিমি দীর্ঘ অংশ চওড়া করার কাজ শুরু করেছিল পূর্ত দফতর। কিন্তু ভিআইপি-র জোড়ামন্দির থেকে রাজারহাট চৌমাথা পর্যন্ত ৭ কিমি দীর্ঘ এই অংশ চওড়া করার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও দীর্ঘ দিন রাজ্য পূর্ত বিভাগ (সড়ক) সেই কাজ করেনি বলে অভিযোগ।
|
|
রাজ্য পূর্ত বিভাগ (সড়ক)-এর এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “২০১২ সাল নাগাদ ভিআইপি রোড থেকে রাজারহাট চৌমাথা পর্যন্ত প্রায় ৭ কিমি রাস্তা চওড়া করার প্রস্তাব করা হয়। বাম সরকারের আমলে প্রস্তাবটি অর্থ দফতরের অনুমোদন না পেয়ে ফিরে এসেছিল। ওই প্রস্তাবটি সংশোধন করে ফের পাঠানো হয়েছে অর্থ দফতরের কাছে। প্রস্তাবটি পূর্ত দফতর খতিয়ে দেখছে। সেখান থেকে যাবে অর্থ দফতরে। ‘নাবার্ড’-এর টাকায় কাজটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” যে ভাবে এই পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে দখলদারির জন্য খুব সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না বলে মনে করছেন ওই আধিকারিক। কারণ যাঁরা রাস্তা জুড়ে রয়েছেন, রাস্তার কাজ হলে তাঁরা উঠে যাবেন বলেই তাঁর আশা।
কবে হবে কাজ?
পূর্ত বিভাগ (সড়ক) অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ ইঞ্জিনিয়ার (৩) কাশীনাথ দাস বলেন, “রাস্তা চওড়া করার প্রস্তাবটি এখন আমাদের কাছে রয়েছে। এর পরে অর্থ মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হবে। তাদের অমুমোদন পেলে তহবিল পাওয়া যাবে। তখন কাজ করা যাবে। কত দিন সময় লাগবে, এখনই বলা যাচ্ছে না।”
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাসরাস্তাটি চওড়া করা ও অন্যান্য খরচের জন্য কমবেশি ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব পাঠানোর কথা অর্থ দফতরে। যার মধ্যে রাস্তার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি। রাস্তার ধারে নিকাশি নালার নির্মাণে ধরা হয়েছে ৯ কোটি টাকা এবং আনুষঙ্গিক খরচ ধরা হয়েছে আরও ১ কোটি টাকা। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে এখনকার সাড়ে ৫ মিটার চওড়া রাস্তা বেড়ে হবে ৭ মিটার। বাসস্টপগুলির স্থান হবে ১১ মিটার চওড়া। এ ছাড়া রাস্তার ধারে নর্দমা এবং ফুটপাথ নির্মাণ করা হবে। কিন্তু ‘নাবার্ড’ নর্দমা গড়ার টাকা দেবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
|
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
|
|
|
|
|