পশ্চিমবঙ্গের সাগরে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে আর কোনও ঢিলেমি চাইছেন না প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বরং কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের এই ‘ফ্ল্যাগশিপ পরিকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের দ্রুত রূপায়ণের জন্য এ বার সুনির্দিষ্ট ‘রোডম্যাপ’ তৈরি করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, আগামী বুধবার, অর্থাৎ ১ অগস্ট এই প্রকল্পের জন্য চুক্তি সই করবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার (স্টেট সাপোর্ট এগ্রিমেন্ট)। তার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থবিষয়ক কমিটির বিবেচনা ও চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্প সংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করা হবে।
সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, সাগরে গভীর সমুদ্র বন্দরটি গড়ে তোলার জন্য একটি স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল (এস পি ভি) গড়ে তোলা হবে। তাতে রাজ্যের ২৬ শতাংশ এবং কেন্দ্রের ৭৪ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকবে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের (পিপিপি) মাধ্যমে প্রকল্পটি গড়ে তোলার জন্য দরপত্র হাঁকবে ওই এসপিভি।
কেন্দ্রে প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে সাধারণ বাজেটে সাগরে গভীর সমুদ্র বন্দর পত্তনের বিষয়টি ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এ ব্যাপারে রাজ্য সাংহাই-মডেল অনুসরণ করার পক্ষপাতী ছিল। চিনের সাংহাইয়ে সমুদ্র তীর থেকে ৩০ কিলোমিটার ভেতরে গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ে উঠেছে। সেই ধাঁচে এ রাজ্যেও গভীর সমুদ্রে একটি বন্দর গড়ে তোলার কথা ভাবা হয়েছিল। এ ব্যাপারে গোড়ায় কিছুটা অগ্রগতি হলেও পরে প্রকল্পটিই বাতিল হয়। পরবর্তী সময়ে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট নতুন করে সাগরে বন্দর গড়ার ব্যাপারে এগোয়। এ ব্যাপারে উৎসাহীদের সাড়া পেতে ২০০৯ সালে ইচ্ছেপত্র চেয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। একাধিক সংস্থার সাড়া পেয়ে ২০১০ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে বন্দর গড়ার সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখতে কমিশনের কথা ঘোষণা করে। ২০১০-এই রাইটস-কে সমীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি বছর মে মাসে রাইটস প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করে। তার পরে কাজে গতি আসে।
|
সরকারি সূত্রের খবর, প্রস্তাবিত এই বন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হবে না। এখানে ‘রিক্লেম’ করা হবে, অর্থাৎ সমুদ্রের পলি তুলে পাড়ের কিছুটা অংশ ভরাট করে বন্দরের জন্য জমি তৈরি করা হবে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, সাগরের পশ্চিম দিকে, বেগুয়াখালি এলাকার সামান্য উত্তরে বন্দরটি তৈরি হবে। নির্মাণ করতে সময় লাগবে প্রায় তিন বছর। এর নাব্যতা হলদিয়া বন্দরের মতোই হবে। খরচ হতে পারে আনুমানিক তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা। রাজ্যের যোজনা আয়তন স্থির করতে সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে যোজনা কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তখন এই যৌথ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে আজ বলা হয়েছে, ইউপিএ সরকারের মুখ্য পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে মনমোহন সম্প্রতি একটি বৈঠক করেন। মন্দার বাতাবরণ কাটিয়ে উঠতে পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে আরও বিনিয়োগ টানতে আগ্রহী প্রধানমন্ত্রী। আর পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির অন্যতম সাগরের গভীর সমুদ্র বন্দর।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে আরও জানানো হচ্ছে, কেবল মাত্র প্রকল্পটিতে অনুমোদন দিয়ে থেমে থাকতে চান না মনমোহন। বরং প্রকল্পটির অগ্রগতি হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটি স্টিয়ারিং কমিটিও গড়েছেন তিনি। ওই কমিটিতে জাহাজ মন্ত্রক, অর্থ বিষয়ক সচিব ও যোজনা কমিশনের সদস্যরা থাকবেন। সংশ্লিষ্ট কমিটি এসপিভি গঠনের বিষয়টি যেমন চূড়ান্ত করবে, তেমনই নজর রাখবে দরপত্র হাঁকার ব্যবস্থার ওপর। আবার প্রকল্পটি পত্তনের জন্য কোনও আর্থিক উৎসাহ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কি না এবং তা কতটা, তা-ও ওই কমিটি নির্ধারণ করে দেবে।
পাশাপাশি অন্ধ্রে একটি সমুদ্র বন্দর, নবি মুম্বই বিমানবন্দর, মুম্বইয়ে এলিভেটেড রেল করিডর এবং মুম্বই থেকে আমদাবাদের মধ্যে দ্রুতগতিসম্পন্ন রেল করিডর গড়ে তোলার প্রস্তাবিত প্রকল্পের রোডম্যাপও নির্ধারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি রেল স্টেশন উন্নয়নের জন্য ‘ভারতীয় রেল স্টেশন উন্নয়ন কর্পোরেশন’ নামের নিগম গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ব্যাপারে যোজনা কমিশন একটি খসড়া চুক্তি পত্র তৈরি করছে। |