৮৭ ছুঁই ছুঁই বয়স। রাজনীতির অনেক ওঠাপড়া সামলে আসা মানুষটির টকটকে ফর্সা চেহারাটা কেমন দাঁড়িয়েছিল, কেউই তা দেখতে পেলেন না আজ। বাইরেই এলেন না তিনি। গেটের বাইরে অপেক্ষায় থাকা সাংবাদিকদের জন্য দেরাদুনের বন গবেষণা কেন্দ্রের অতিথিশালা থেকে এল একটা বিবৃতি। কী না, এটা সম্পূর্ণই তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। অকারণে যেন এ নিয়ে হইচই করা না হয়। তাঁরই বিশ্বাসভাজন কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করে এ সব করেছেন। এবং এটা সম্ভব হয়েছে তাঁরই ‘সারল্যের কারণে’। তবে কোনও আফশোস নেই তাঁর। রাগ নেই রোহিতশেখর শর্মার উপরেও।
এই দিনটাকেই ঠেকিয়ে রাখার জন্যই গত চার বছর ধরে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি, নারায়ণদত্ত তিওয়ারি। আদালতে আর্জি ঠুকেছেন সাত-সাতটি বার। আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন তাঁর ডিএনএ পরীক্ষা রোখার। কিন্তু শেষরক্ষা করতে পারলেন না। রোহিত শর্মার সঙ্গে বাবা-ছেলের সম্পর্কটা জানিয়ে দিল তাঁর রক্তই। পূর্ব-ঘোষণা মোতাবেক দিল্লি হাইকোর্ট আজ প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিল, উজ্জ্বলা শর্মার ছেলে রোহিতের বাবা নারায়ণদত্ত তিওয়ারিই। |
কংগ্রেসের এই প্রবীণ নেতা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তিন বার, উত্তরাখণ্ডের এক বার। ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপালও। সে পর্বে ইতি পড়ে এক যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে। তিন মহিলার সঙ্গে রাজ্যপালের অশালীন ভিডিও প্রকাশ করে দেয় একটি চ্যানেল। প্রকাশ্যে ক্ষমা চান তিওয়ারি। এর পরই সুর পাল্টে দাবি করেন, ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। আর আজ সম্ভবত জীবনের সবচেয়ে বড় অস্বস্তির মুখে পড়েও সেই ষড়যন্ত্রের তত্ত্বকেই সামনে রেখে আড়াল খুঁজছেন তিনি। পিতৃত্বের পরীক্ষা চার্লি চ্যাপলিন, ইমরান খান, স্টিভ জোবসের মতো ব্যক্তিত্বের ভাবমূর্তিতে আঁচ ফেলেছে এর আগে। তালিকায় আছেন তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডন্ট টমাস জেফারসনও। কিন্তু ভারতে কোনও শীর্ষস্থানীয় নেতার এমন পরিণতির কথা শোনা যায় না। কংগ্রেস এ দিন এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
কঠিন আইনি লড়াইয়ে হাইকোর্ট পর্যন্ত জিতে ৩২ বছরের রোহিত কঠিন চোয়ালে বলেছেন, “নিজের প্রাপ্যটা বুঝে নেব।” প্রাপ্যের দু’টো দিক। সম্পত্তি ও সম্পর্ক। নারায়ণদত্ত বিয়ে করেছিলেন ২৯ বছর বয়সে। স্ত্রী সুশীলা সনোয়াল মারা যান ১৯৯৩-এ। কোনও সন্তান না থাকায় ভাইপো মণীশকে দত্তক নিয়েছেন তিনি। ফলে সম্পত্তি নিয়ে নতুন টানাপোড়েনের ক্ষেত্র তৈরি হল আজকের রায়ে। নারায়ণদত্ত সুপ্রিম কোর্টে গেলে সেখানেও আর এক দফা লড়াই অপেক্ষা করে আছে রোহিতের জন্য। কিছুটা আবেগতাড়িত রোহিত জানিয়েছেন, “এত বছর ধরে মাকে যে যন্ত্রণা দেওয়ার মূল্য দিতে হবে ওঁকে।
কী বলছেন উজ্জ্বলা? “সত্যের জয় হয়েছে।” নারায়ণদত্তের সন্তানের আকাঙ্ক্ষাকেই মর্যাদা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সন্তানের ‘স্বীকৃতি’ এল কি না এত তিক্ততায়! এত অনিচ্ছায়! উজ্জ্বলা তাই বলেছেন, “রোহিত নামের শেষে তিওয়ারি লিখবে কি না, সেটা সে-ই ঠিক করবে।” |
পিতৃত্বের খোঁজে |
• পিতৃত্ব পরীক্ষা কী? |
এই পরীক্ষার সাহায্যে সন্তানের বাবা কে, তা জানা যায়। |
• কী ভাবে পরীক্ষা? |
১) প্রথমে সন্তান এবং সম্ভাব্য বাবার মুখের ভিতরের কোষ নেওয়া হয়। অনেক সময়ে রক্তও নেওয়া হয় (তিওয়ারির ক্ষেত্রে যা হয়েছিল)।
২) কোষ থেকে ডিএনএ নিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তার সংখ্যা বাড়ানো হয়।
৩) সম্ভাব্য বাবা ও সন্তানের ডিএনএ-র রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করে মিলিয়ে দেখা হয়। (এ ক্ষেত্রে কিছু ব্যান্ড তৈরি হয়)।
৪) সন্তান ও সম্ভাব্য বাবার ব্যান্ডের অবস্থান মিলে গেলে পিতৃত্ব প্রমাণিত হয়। |
|