ধর্ষিতার চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন হাসপাতাল সুপার |
ধর্ষণের পরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিলেন এক বিধবা মহিলা। আরামবাগের কেশবপুর গ্রামের মোল্লাপাড়ার বাড়ি থেকে তাঁকে তাড়িয়ে দেয় সৎ ছেলেরা। পাড়া-প্রতিবেশীরও মদত ছিল তাতে। নাবালক দুই সন্তানকে নিয়ে মহিলা আশ্রয় নেন আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে।
বহির্বিভাগের সামনে গাছতলায় তাঁকে দেখতে পান হাসপাতালের সুপার নির্মাল্য রায়। বুধবার ওই ঘটনা চোখে পড়ায় মহিলাকে প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করিয়ে নেন তিনি। যত দিন না প্রসব হচ্ছে, তত দিন ওই মহিলা হাসপাতালেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুপার। ছোট ছোট দুই ছেলেমেয়েও তাঁর সঙ্গে থাকবে। এই ব্যবহারে অভিভূত মহিলা।
প্রশংসায় পঞ্চমুখ হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ। মহিলার কথায়, “গত পনেরো দিন ধরে হাসপাতাল চত্বরে গাছতলায় ছেলেমেয়েকে নিয়ে আছি। কেউ না কেউ হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে নেবে, এই বিশ্বাস ছিল। ভাল মানুষ এখনও অনেক আছে।”
নির্মাল্যবাবু বলেন, “মহিলার এই পরিস্থিতির জন্য যারা দোষী, তাদের খুঁজে শাস্তি দেওয়া দরকার। কিন্তু ওঁকে বাড়ি থেকেই বা তাড়িয়ে দেওয়া হল কোন যুক্তিতে? বিষয়টি আমি থানায় জানিয়েছি।” পুলিশ জানায়, মহিলার প্রসব হয়ে গেলে তাঁর কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ নেওয়া হবে। সেই মতো আইনি পদক্ষেপ করা হবে।
প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে বছর দ’শেক আগে এই মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন মোল্লাপাড়ার এক ব্যক্তি। বছর ছ’য়েক আগে মারা যান তিনি। ন’বছরের মেয়ে এবং সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে স্বামীর ভিটেতেই কোনও মতে দিন কাটছিল বছর তিরিশের ওই মহিলার। ভিক্ষে করে দু’বেলা খাওয়া জুটত। মহিলা জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে মুণ্ডেশ্বরী নদীর চরে তাঁকে ধর্ষণ করে কিছু লোক। লোক জানাজানির ভয়ে থানায় জাননি। কিন্তু কিছু দিন বাদে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। ভেবেছিলেন গর্ভপাত করিয়ে নেবেন। কিন্তু টাকার অভাবে তা-ও করতে পারেননি। দিন পনেরো আগে তাঁর সৎ ছেলেরা বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন ওই মহিলাকে। গ্রামের লোকেরও ‘মদত’ ছিল তাতে।
মহিলার দুই সৎ ছেলে বলে, “যা হয়েছে, প্রতিবেশীদের মদতেই হয়েছে।” প্রতিবেশী এক ব্যক্তি অবশ্য দাবি করেছেন, ওই মহিলার সঙ্গে পাড়ার লোকের মেলামেশা ছিল না। তবে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় প্রতিবেশীরা কেউ যুক্ত নন।” |