শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রুখতে এখনও চিকিৎসকদের কাছে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনও বিকল্প নেই। সেই অ্যান্টিবায়োটিককে এ বার হয়তো বিদায় জানানোর সময় এসে গিয়েছে! মোনাশ, রকফেলার এবং মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানীর অন্তত তেমনটাই দাবি। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হতে পারে ভাইরাসের দেহের এক রকম প্রোটিন। তাঁদের আরও দাবি, অ্যান্টিবায়োটিকের মতো এই ভাইরাস-প্রোটিনের তেমন ক্ষতিকারক প্রভাব নেই। অথচ কাজ করে অনেক সুচারু ভাবে।
নিউমোনিয়া, ডিপথেরিয়া বা ব্রঙ্কাইটিসের মতো প্রাণঘাতী রোগই হোক বা সাধারণ কাটা-ছেঁড়া, বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ভরসা এখনও অ্যান্টিবায়োটিক। তাতে আসল রোগটা হয়তো সারে, কিন্তু অনেক সময়ই উপরি পাওনা হয় মাথা ধরা, বমি, অ্যালার্জির মতো নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া। তা ছাড়া প্রয়োজন ছাড়াও যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে অনেক ওষুধের বিরুদ্ধেই প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া। ফলে অনেক দিন ধরেই অ্যান্টিবায়োটিকের একটা বিকল্পের খোঁজ করছিলেন বিজ্ঞানীরা।
আর সেই খোঁজ করতেই করতেই বিজ্ঞানীদের মাথায় আসে ব্যাকটিরিওফাজের কথা। এই জাতের ভাইরাসের প্রধান কাজই হল ব্যাকটেরিয়ার দেহে বাসা বেঁধে ব্যাকটেরিয়াটিকে ধ্বংস করে দেওয়া। প্রধানত ফাজ ভাইরাসের দেহ থেকে বার হওয়া এক ধরনের এনজাইম ‘লাইসিন’ ব্যাকটেরিয়ার আবরণ ফাটিয়ে তাকে মেরে ফেলে। ফাজ ভাইরাসের দেহে থাকা অনেক রকমের লাইসিন এনজাইমের মধ্যে ‘পিএলসি’ এনজাইম ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে সব থেকে কার্যকরী বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। সেই ১৯২৫ সালে এই ‘পিএলসি’ এনজাইম আবিষ্কার হলেও এত দিন তার সঠিক গঠন আর কী ভাবে এটি কাজ করে, তা না জানার জন্যই ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধক হিসেবে একে ব্যবহার করা যেত না।
গত ছ’ বছর ধরে গবেষণার পরে অবশেষে ওই ‘পিএলসি’ এনজাইমটির গঠন জানতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন ওই তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ম্যাকগোয়ান জানিয়েছেন, আকারে ‘পিএলসি’ এনজাইম অনেকটা উড়ন্ত চাকির মতো দেখতে। কোনও ব্যাকটেরিয়াকে দেখতে পেলেই তার উপরে চড়ে বসে এই এনজাইম। আর এর পরেই নিজের ধ্বংসকারী দু’হাত দিয়ে ব্যাকটেরিয়ার আবরণকে খেয়ে ফেলে। আবরণ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ব্যাকটেরিয়াটিও আর বাঁচতে পারে না। তবে কবে এই এনজাইমটি ওষুধ আকারে বাজারে আসবে তা জানাতে পারেননি গবেষকরা। |