জোড়া লাগেনি ভাঙা হাড়, ক্ষতিপূরণ প্রায় ১০ লক্ষ
ভাঙা হাত জোড়া দিতে গিয়ে ‘মরচে ধরা পুরনো ধাতব প্লেট’ বসিয়েছিলেন অস্থি বিশেষজ্ঞ। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাওড়া ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন রোগিণী। চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে যৌথ ভাবে ৯ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। রোগিণীর ক্ষয়ক্ষতি এবং হয়রানি বাবদ এই টাকা ধার্য হয়েছে। জেলা ক্রেতা কল্যাণ তহবিলে আরও ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে।
ছবি: হিলটন ঘোষ
উলুবেড়িয়ার ফুলেশ্বরের বাসিন্দা কাকলি চক্রবর্তী নামে ওই রোগিণীর দায়ের করা মামলায় গত ১০ জুলাই এই রায় দিয়েছেন ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য। এক মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিতে হবে। দেরি হলে বাৎসরিক ১২ শতাংশ হারে কাকলিদেবীকে সুদ দিতে হবে বলেও জানিয়েছেন বিচারক।
ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে বাড়িতে পড়ে গিয়ে চোট পান বছর পঁয়ত্রিশের বধূ কাকলিদেবী। তাঁর ডান হাতের দু’টি হাড় ভেঙে যায়। উলুবেড়িয়ার একটি নার্সিংহোমে তিনি চিকিৎসার জন্য যান। সেখানেই গত ১৮ এপ্রিল অস্থি বিশেষজ্ঞ ভাস্কর চট্টোপাধ্যায় কাকলিদেবীর ডান হাতে অস্ত্রোপচার করেন। ইস্পাতের প্লেট বসানো হয়। তিন দিন পরে কাকলিদেবী ফের ওই চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সেলাই কাটিয়ে আসেন।
কিন্তু তার পর থেকে কাকলিদেবীর হাতে যন্ত্রণা কমেনি। বার বার ওই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া সত্ত্বেও উপশম না-হওয়ায় কাকলিদেবী উলুবেড়িয়ার অন্য এক অস্থি বিশেষজ্ঞের কাছে যান। ওই চিকিৎসক তাঁকে জানান, ভুল অস্ত্রোপচারের ফলে হাতের হাড়ের ভাঙা অংশে সংক্রমণ হয়েছে। কাকলিদেবী ভাস্করবাবুকে সে কথা জানালেও তিনি তাতে আমল দেননি। উল্টে কাকলিদেবীকে বলেন, হাতে ফের প্লাস্টার করে তিন মাস রেখে দিতে হবে।
ভাস্করবাবুর উপরে আর ভরসা না রেখে ৩০ অগস্ট কাকলিদেবী রওনা দেন ভেলোরে। সেখানে একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অস্থিবিশেষজ্ঞ জানিয়ে দেন, ভুল অস্ত্রোপচার হয়েছে। ইস্পাতের প্লেটটি বার করে তাঁরা দেখেন, সেটি পুরনো। এমনকী মরচে ধরা। ভাঙা হাড়ও জোড়া লাগেনি। ভেলোরের হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁর হাতে অস্ত্রোপচার করেন। হাড়ের ভাঙা অংশ জুড়ে গেলেও কাকলিদেবীর হাতটি লম্বায় ইঞ্চি দু’য়েক ছোট হয়ে গিয়েছে।
হাতের বদলে...
• শারীরিক ক্ষতি বাবদ: ৫ লক্ষ।
• মানসিক হয়রানি বাবদ: ১ লক্ষ ৫০ হাজার।
• চিকিৎসা খরচ বাবদ: ৩ লক্ষ।
• মামলার খরচ বাবদ: ২০ হাজার।
 
• চিকিৎসক ও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ যৌথ ভাবে ক্ষতিপূরণ দেবেন।
• এক মাসের মধ্যে টাকা না দিলে বার্ষিক
১২% হারে সুদ দিতে হবে।
• জেলা ক্রেতা কল্যাণ তহবিলে আরও ৫০ হাজার
টাকা জমা দিতে হবে চিকিৎসককে।
অস্থি বিশেষজ্ঞ ভাস্কর চট্টোপাধ্যায় এবং ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ১৩ জুলাই ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেন কাকলি। তাঁর স্বামী গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা চালাতে গিয়ে পরিবারটি জেরবার। বার বার ভেলোরে যাতায়াত করতে গিয়ে গৌরাঙ্গবাবুকে চাকরি খোওয়াতে হয়েছে বলে দাবি চক্রবর্তী পরিবারের। তাঁদের দুই ছেলেমেয়ে। কাকলিদেবীর কথায়, “এত দিন ধরে
চিকিৎসা চালাতে গিয়ে বহু টাকা ধার হয়ে গিয়েছে। বহু হেনস্থা হতে হয়েছে। আদালতের রায়ে আমরা খুশি।”
অন্য দিকে, ভাস্করবাবুর দাবি, “অস্ত্রোপচারের পরে আমি কাকলিদেবীকে যে ভাবে ওষুধ খেতে এবং নিয়ম মেনে চলতে পরামর্শ দিয়েছিলাম, তা তিনি পুরোপুরি করেননি। তাঁর হাতের যে ক্ষতি হয়েছে সে জন্য আমি দায়ী নই।
উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হব।” নার্সিংহোমের মালিক কল্যাণ চট্টোপাধ্যায় আবার বলেন, “আমার নার্সিংহোমে অস্ত্রোপচার হলেও আমি তো আর চিকিৎসা করিনি। একটি পয়সাও দেব না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.