পিছোচ্ছে ধান রোয়া, এখন ভরসা শুধু অগস্টের বৃষ্টিই
জুন-জুলাইয়ের বৃষ্টির ঘাটতি অগস্ট পূরণ করতে পারবে কি না, সে দিকেই এখন হাপিত্যেশ করে তাকিয়ে রাজ্যের কৃষি দফতর।
দফতরের হিসেব মতো গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ১ জুন থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত গড়ে ২৮% কম বৃষ্টি হয়েছে। উত্তরবঙ্গের চারটি জেলা বাদে রাজ্যের অন্য সব জেলায় বৃষ্টি হয়েছে কম। তবে জুন মাসের তুলনায় জুলাইয়ে পরিস্থিতি কিছুটা ভাল। জুন মাসে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি ৪৬% কম ছিল। কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা বর্ধমান, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া ঘুরে এসে বুধবার মহাকরণে সেখানকার চাষ আবাদের অবস্থা এবং বৃষ্টি পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেন। কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “কৃষি অধিকর্তার কাছ থেকে আজ রিপোর্ট পেয়েছি। পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে।” তবে তিনি এ দিন স্বীকার করেন, “এখনও পর্যন্ত ধান রোয়া হয়েছে মাত্র ১৮ থেকে ২০% জমিতে।”
বৃষ্টিপাতে ঘাটতির জেরে ধান রোয়ার কাজ যে পিছিয়ে যাচ্ছে, কৃষি দফতরও তা মানছে। অল্পসল্প জলের ব্যবস্থা করে চাষিরা বীজতলা তৈরি করেছেন। সেখানে ধানের চারা বড় হচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টি কম হওয়ায় ধানের চারা রোয়ার জন্য জমি তৈরিই করা যাচ্ছে না। জুনে একেবারেই বৃষ্টি ছিল না। ফলে একটু দেরিতে, জুলাইয়ের প্রথম দিকেই বেশির ভাগ চাষি বীজতলায় ধান ছিটিয়ে দেন। সেই চারার বয়স কোথাও কোথাও ২১ দিন হয়েছে। ওই চারা এখনই রোয়ার ব্যবস্থা না করলে ধানের উৎপাদন কমার আশঙ্কা রয়েছে। বীজতলা তৈরি করতে দেরি হলে কিংবা ২৫ দিনের বেশি বয়সের চারা রোপণ করলে ধানের ফলনের মোট সময়টাও যায় কমে। তাতে শিস ছোট হয় এবং সব ধান পুষ্ট হয় না। ফলে উৎপাদনও কমে।
বৃষ্টি বৃত্তান্ত...
কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানান, বিভিন্ন জেলায় বীজতলা তৈরি হয়েছে দু’-তিনটি ধাপে। চাষিরা বৃষ্টিপাতের খামখেয়ালিপনা আঁচ করে বীজতলাও পর্যায়ক্রমে তৈরি করেছেন। ফলে প্রথম দিকে তৈরি ধানের চারা কিছু জমিতে রোয়া হয়ে গিয়েছে। পরবর্তী ধাপের কম বয়সি চারা প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু ওই চারা রোয়ার জন্য আর বেশি দিন অপেক্ষা করা যাবে না।
কিন্তু বৃষ্টির এই ঘাটতি হচ্ছে কেন? আলিপুরের আবহবিদেরা বলছেন, ভারী বৃষ্টির জন্য প্রয়োজন নিম্নচাপ অথবা জোরালো নিম্নচাপ অক্ষরেখা। সাধারণত জুলাইয়ে তিন থেকে চারটি নিম্নচাপ পায় দক্ষিণবঙ্গ। বর্ষার মরসুমে চার মাসে অন্তত পাঁচ-ছ’টি নিম্নচাপ হওয়ার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত একটিও কপালে জোটেনি। পাশাপাশি, নিম্নচাপ অক্ষরেখাতেও মন্দ কপাল। বর্তমানে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা থাকলেও সেটি তেমন জোরালো নয়। তাই আকাশ মেঘলা থাকলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে না।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলছেন, “আগামী দু’-তিন দিন দক্ষিণবঙ্গে হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে। কিন্তু তাতে ঘাটতি মিটবে না।” আলিপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রের খবর, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও এই মুহূর্তে নেই। আর তা না হলে ভারী বৃষ্টিও পাবে না দক্ষিণবঙ্গ।
শুধু গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গই নয়, ঘাটতি বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, কর্নাটক, গুজরাতেও। ওই রাজ্যগুলিতে ঘাটতির পরিমাণ ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশের মধ্যে। দিল্লির মৌসম ভবন সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, কর্নাটক, রাজস্থানের কয়েকটি জেলায় ইতিমধ্যেই খরা ঘোষণা করা হয়েছে। বৃষ্টি কম হওয়ায় হিমাচলপ্রদেশ বা উত্তরাখণ্ডের মতো জলবিদ্যুতের উপরে নির্ভরশীল রাজ্যগুলিও বিপদে পড়েছে। সেখানকার নদীগুলিতে জলের পরিমাণ কম হওয়ায় যথেষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। সেচের জন্য ব্যবহৃত জলাধারগুলিতেও পর্যাপ্ত জল নেই। রাজ্যে কৃষিমন্ত্রী এ দিন বলেন, “আমরা প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন জেলার বৃষ্টিপাতের হিসেব পর্যালোচনা করে দেখছি কোথাও খরা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে কি না। পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকলেও একটা প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, অগস্ট মাসে কতটা বৃষ্টি হবে।” এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে সেচ ও ক্ষুদ্র সেচ দফতরকে অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে রাজ্যে সব রকম সেচ প্রকল্প চালু রাখা যায়। মন্ত্রী বলেন, “বৃষ্টি দেরিতে হলেও আমাদের আশা, আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা, ১ কোটি ৬২ লক্ষ টন পূরণ করা সম্ভব হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.