নিয়মমাফিক দরপত্র চাওয়া হয়েছিল। তাতে সাড়াও দিয়েছিল একাধিক সংস্থা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কোনও কারণ না-দেখিয়েই দরপত্র বাতিল করে দেওয়া হয়। তার পরে কোনও রকম দরপত্র ছাড়াই দু’টি সংস্থাকে বেশ কিছু বাস মেরামতির বরাত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম
বা এসবিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, পছন্দের সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দিতেই তিনি এই কাজ করেছেন।
দরপত্র বাতিলের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন অভিযুক্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর জয়ন্ত আইকত। তবে তাঁর যুক্তি, “যে-সংস্থা সর্বনিম্ন দর দিয়েছিল, তাদের হিসেবে অসামঞ্জস্য ছিল। তা ছাড়া রাস্তায় দ্রুত বাস নামানোর চাপ ছিল। তাই এই কাজ করতে হয়েছে।” তবে নির্দিষ্ট কোনও সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এমডি।
রাজ্যের পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, চলতি বছরের প্রথম দিকে বিশ্বজিৎ দত্তের জায়গায় দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হন জয়ন্তবাবু। তাঁর যোগদানের আগে, গত জানুয়ারিতে নিগমের প্রায় ২০টি বাস সারানোর জন্য দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া শুরু করেন বিশ্বজিৎবাবু।
তার পরেই তিনি পরিবহণ দফতরের যুগ্মসচিবের দায়িত্ব নিয়ে মহাকরণে চলে যান। তাঁর জায়গায় নিগমে এমডি হয়ে আসেন জয়ন্তবাবু। এসেই তিনি ওই দরপত্র বাতিল করে দেন। শুধু তা-ই নয়, দরপত্র ছাড়াই দু’টি সংস্থাকে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার কাজের বরাত দেন জয়ন্তবাবু। অভিযোগ, যে-সংস্থা ওই কাজের জন্য সর্বনিম্ন দর দিয়েছিল, তাদের বরাত দেওয়া হয়নি।
এই অভিযোগের ব্যাপারে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিশ্বজিৎবাবু। মন্তব্য করেননি পরিবহণসচিব বি পি গোপালিকাও। তবে নিগমের চেয়ারম্যান তমোনাশ ঘোষ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “সব কিছু নিয়ম মেনেই হয়েছে। যে-সংস্থা সব চেয়ে কম দর দিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। তাই তাদের বাস সারানোর বরাত দেওয়া হয়নি। পরিবহণসচিব আমাদের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিলেন। আমরা তা দিয়েও দিয়েছি।”
চেয়ারম্যানের সুরে এমডি জয়ন্তবাবুও বলেন, “সব চেয়ে কম দর দেওয়া সংস্থাটির বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। তাই গোটা প্রক্রিয়া বাতিল করে অন্য দু’টি সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছে।” তা হলে নতুন করে দরপত্র ডাকা হল না কেন? এমডি-র সাফাই, “মার্চ মাস এসে যাওয়ায় টাকা ফেরত চলে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তা ছাড়া রাস্তায় দ্রুত বাস নামানোর চাপও ছিল। তাই নতুন করে দরপত্র ডাকা যায়নি।” দ্রুত কাজের জন্য কীসের ভিত্তিতে নতুন দুই সংস্থাকে বেছে নেওয়া হল? জয়ন্তবাবুর জবাব, “ওরা ভাল কাজ করে।” একই সঙ্গে এমডি বলেন, “আমাদের উচিত ছিল, আগে ওই সংস্থাকে (সব চেয়ে কম দর দেওয়া সংস্থা) কালো তালিকাভুক্ত করে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করা। এখানেই ভুল হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল না।”
সর্বনিম্ন দর দেওয়া সংস্থাটির কর্ণধার আশিসকুমার দাসের অভিযোগ, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না-করে নিগম খুশিমতো কাজের বরাত দিয়েছে। নিগম-কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই প্রমাণ করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন তিনি।
আশিসবাবু বলেন, “পরিবহণসচিবকে সব জানিয়ে তদন্তের আবেদন করেছি। পরিবহণ দফতর এ ব্যাপারে ব্যবস্থা না-নিলে আমরা আইনি পথে যেতে বাধ্য হব।” আশিসবাবুর দাবি, নতুন বরাত অনুযায়ী বাস-প্রতি প্রায় ৭০ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হবে সরকারের। |