সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এবং জেলা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে একশোরও বেশি পদ শূন্য। সেখানে শিক্ষকতার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের ডেপুটেশনে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর। এর ফলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকদের অভাব প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও দফতরের দাবি, যে-সব স্কুলে অতিরিক্ত শিক্ষক আছেন, শিক্ষক পাঠানো হবে সেখান থেকেই।
প্রতিটি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বা পিটিটিআইয়ে এক জন অধ্যক্ষ এবং ফাউন্ডেশন কোর্সের জন্য এক জন শিক্ষক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের (মেথডোলজি) জন্য তিনটি শিক্ষকপদ মঞ্জুর করা হয়। পাঁচ জনের জায়গায় কোথাও দুই, কোথাও বা তিন জন শিক্ষক নিয়ে বহু পিটিটিআই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, সরকারি পিটিটিআইয়ে ৫২, সাহায্যপ্রাপ্ত পিটিটিআইয়ে ৭০ এবং জেলা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বা ‘ডায়েট’-এ ৬০টি শিক্ষকপদ ফাঁকা। তার মধ্যে ৬০-৬৫টি পদ অধ্যক্ষ ও ফাউন্ডেশন কোর্সের শিক্ষকদের। বাকিগুলিতে মেথডোলজির শিক্ষক দরকার।
এই শিক্ষকদের স্নাতকোত্তর এবং বি এডে ৫৫ শতাংশ নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক। সেই পদগুলিতে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অধ্যক্ষ ও ফাউন্ডেশন কোর্সের শিক্ষকদের আবার এমএড ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক। এই ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা বেশি নয়। সেই কারণে ওই সব পদে প্রয়োজনে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়োগ করার কথাও ভাবা হয়েছে। এ বছর ছাত্র ভর্তি করা হয়েছে সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মোট ৬০টি পিটিটিআই এবং ডায়েটে। ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন বা এনসিটিই-র নিয়ম অনুযায়ী ১ জুলাই থেকে সেগুলিতে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনেক পিটিটিআইয়েই ক্লাস শুরু হয়নি। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য বলেন, “এনসিটিই-র অনুমোদন পেতেই অনেক পিটিটিআইয়ে দেরি হয়েছে। তার পরে আবেদনপত্র জম্য নিয়ে মেধা-তালিকা তৈরি করে ছাত্র ভর্তিতে সময় লেগে গিয়েছে। তবে এনসিটিই-র নিয়ম মেনে সকলকেই ন্যূনতম ক্লাস করানো হবে।”
পিটিটিআইয়ে পড়ানোর জন্য স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেছে নেওয়া হবে কী ভাবে? স্কুলশিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানান, সংশ্লিষ্ট জেলার স্কুল পরিদর্শক, জেলাশাসক ও অন্যদের নিয়ে একটি বাছাই কমিটি তৈরি করা হবে। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে কারা পিটিটিআই বা ডায়েটে পড়াবেন, তাঁদের বাছাই করবে সেই কমিটিই। ওই দফতরের এক কর্তা বলেন, “যে-সব স্কুলে অতিরিক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন, সেখান থেকেই ডায়েট-পিটিটিআইয়ে ডেপুটেশনে পাঠানো হবে। এটা একটা সাময়িক বন্দোবস্ত।”
এই সিদ্ধান্তে স্কুলগুলির সমস্যা বাড়বে বলে মনে করছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। ওই সব সংগঠনের নেতাদের বক্তব্য, স্কুলগুলিতে এমনিতেই শিক্ষকের অভাব। তাই ডেপুটেশনের জন্য অতিরিক্ত শিক্ষক মেলা ভার। এবিটিএ-র এক নেতা বলেন, “এত শিক্ষককে একসঙ্গে অন্য জায়গায় নিয়োগ করা হলে স্কুলগুলির সমস্যা হবেই।” সরকারি স্কুলশিক্ষক সমিতির এক নেতা বলেন, “এমনিতেই শিক্ষকের অভাব। ডেপুটেশনে শিক্ষক নিলে সঙ্কট তৈরি হবে।” |