বাণিজ্যিক সংস্থার মাধ্যমে বাস চালিয়ে রাজ্যের গণ পরিবহণ ব্যবস্থায় বড় ধরনের ‘পরিবর্তন’ আনতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তাদের লক্ষ্য, এর মাধ্যমে এক দিকে সরকারি পরিবহণের ভর্তুকিতে ‘রাশ’ টানা। অন্য দিকে, সাধারণ মানুষের কাছে উন্নত মানের পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। নতুন এই পরিষেবা যত দ্রুত সম্ভব চালু করতে চান মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ফি বছর রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থাগুলিকে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয় সরকারকে। তাতেও পরিষেবা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ সাধারণ মানুষের। অন্য দিকে, বেসরকারি পরিবহণের ক্ষেত্রে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য উপেক্ষা করা, মোটর ভেহিক্যালস আইন না মানা, বাসে-বাসে রেষারেষি এবং দাবি আদায়ের নামে বাসমালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলির হুমকির জেরে সরকারের কার্যত বেসামাল অবস্থা চলছেই। এই দুইয়ের হাত থেকেই ‘মুক্তি’ চায় সরকার। তাই বিকল্প নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে পরিবহণ দফতর।
পরিবহণ দফতরের এক মুখপাত্র জানান, গত কয়েক বছরে সরকারি-বেসরকারি পরিবহণ মিলিয়ে একাধিক রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তথ্য সংগ্রহ করে পরিবহণ দফতর দেখেছে, চাহিদা থাকলেও বৃহত্তর কলকাতায় এমন ২০০টি রুটে কোনও বাস চলাচল করে না। নতুন ব্যবস্থায় এই বন্ধ হয়ে যাওয়া রুটগুলিতে শুরুতে পরীক্ষামূলক ভাবে বাণিজ্যিক সংস্থাকে দিয়ে ফের বাস চলাচল চালু করতে চায় সরকার। ওই মুখপাত্র জানান, বাস চালাতে আগ্রহী সংস্থার কাছ থেকে আবেদন পেতে মাস তিনেক আগে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল পরিবহণ দফতর। তাতে প্রায় ৩০০টি বাণিজ্যিক সংস্থা ‘সাড়া’ দিয়ে আবেদন পাঠিয়েছে। কলকাতার মধ্যে ছোট ছোট রুটে তো বটেই, দূরপাল্লায় জেলাগুলির মধ্যেও এদের দিয়ে বাস চালাতে চায় সরকার।
গণ পরিবহণ ব্যবস্থায় ‘পরিবর্তন’ আনতে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিকেও কাজে লাগাতে চাইছে সরকার। ওই মুখপাত্র জানান, প্রতিটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থারই কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনের (কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি) দায়িত্ব থাকে। তার ভিত্তিতেই সম্প্রতি বেশ কয়েকটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র।
ওই সংস্থাগুলিকে বলা হয়েছে, হাওড়া স্টেশন, শিয়ালদহ স্টেশন, বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে সাধারণ মানুষের জন্য তারা বাস চালানোর ব্যবস্থা করুক। এই বাসগুলি যাতে আরামদায়ক পরিষেবা দিয়ে ট্যাক্সির ‘বিকল্প’ হয়ে উঠতে পারে, লক্ষ্য থাকবে সেটাই। ওই সংস্থাগুলির সঙ্গে আবার আলোচনায় বসা হবে।
গণ পরিবহণের এই পরিবর্তন যজ্ঞে নতুন ধরনের বাসের কত ভাড়া হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে সরকারের ওই মুখপাত্র জানান, এখন সরকার নিয়ন্ত্রিত যে ভাড়ার হার রয়েছে, নতুন ধরনের বাসের ভাড়া তার চেয়ে বেশিই হবে। কারণ, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা-সহ আরও কিছু অতিরিক্ত পরিষেবা দেওয়া হবে এই বাসগুলিতে। অর্থাৎ, ভাল পরিষেবার বিনিময়ে বেশি কড়ি ফেলতে হবে যাত্রীদের। যেমনটি এখন হয় ভলভো বাস পরিষেবায়। |
