এ বার মনোজের কথা
ভাবতেই হবে
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় |
|
|
হাম্বানটোটায় দু’নম্বর ওয়ান ডে-তে অসাধারণ খেলে সিরিজে ফিরে এল শ্রীলঙ্কা। মঙ্গলবার হেরে গেলে লড়াইয়ে ফিরে আসাটা ওদের পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যেত। কিন্তু সিরিজ ১-১ করার পক্ষে দিনটা শ্রীলঙ্কার জন্য খুব ভাল গেল। হাম্বানটোটায় দুটো ম্যাচের সারফেসই অসাধারণ ছিল। এমনিতে শ্রীলঙ্কায় নিচু, স্লো টার্নার পাওয়া যাবে ধরে নেওয়া হয়। অন্তত মুরলী যত দিন ওদের দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিল, তত দিন তাই হয়ে এসেছে। কিন্তু হাম্বানটোটার পিচটা দেখলাম বেশ শক্ত। শ্রীলঙ্কার পিচের কথা মাথায় রাখলে বাউন্স আর ক্যারি-ও যথেষ্ট ভাল। হাম্বানটোটা হল শ্রীলঙ্কা প্রেসিডেন্টের নির্বাচনী কেন্দ্র এবং দ্বীপরাষ্ট্রের একেবারে শেষ প্রান্তে। যার জন্য মাঠের চার পাশে প্রচুর খোলা জায়গা আছে। মাঠেও খুব হাওয়া দেয়। এর জন্য দুটো ম্যাচেই বল সুইং করেছে। দিনের চেয়ে রাতে একটু বেশি।
ভারতীয় ব্যাটিং দলগত ভাবে ব্যর্থ হল। খেলাধুলোয় এ রকম হয়েই থাকে। এক-একটা দিন যায় যখন কোনও কিছুই কাজ করে না। আর সেটা ঠিকঠাক বুঝে ওঠার আগেই দিনটা শেষ হয়ে যায়। মঙ্গলবার বেশ কিছু আউট দেখলাম, যেখানে উইকেট উপহার দেওয়া হল। বিশেষ করে স্টাম্পের দিকে ইনসাইড এজ। এগুলো দেখে বোঝা যায় ব্যাটসম্যানদের ফোকাস ভাল ছিল না। কিন্তু এ রকম ঘটনাও খুব স্বাভাবিক। ধোনিকে সাংবাদিক সম্মেলনে বলতে শুনলাম যে কোহলির উইকেটটাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। বাইরে থেকে ব্যাপারটা দেখছি বলে বলছি, আশা করব সব ক্রিকেটারদের মনোভাব এ রকম নয়। হ্যাঁ, হালফিলে কোহলি খুব ভাল খেলছে। কিন্তু দলে আরও অনেক ভাল ক্রিকেটার আছে যারা একা হাতে ম্যাচ বের করার ক্ষমতা রাখে। যা দরকার সেটা হল আরও বেশি কার্যকরিতা।
ধোনির জন্য আর একটা চিন্তার বিষয় হতে পারে ওর চার নম্বর ব্যাটসম্যান। তরুণ ব্যাটিং লাইন আপে দলের চার নম্বর যদি নিয়মিত ব্যর্থ হতে থাকে, তা হলে নতুন বলে কয়েকটা উইকেট হারালে বাকিদের উপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়। ধোনিকে এ বার খুব তাড়াতাড়ি মনোজ তিওয়ারির কথা ভাবতে হবে। আমি তো বুঝতেই পারছি না দেশের হয়ে শেষ ম্যাচে সেঞ্চুরি পাওয়া একজন ক্রিকেটারকে কী ভাবে দলের বাইরে রাখা হচ্ছে। বিশেষ করে যেখানে ধোনির অন্যতম প্রধান ব্যাটার যখন প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারছে না। আমি বলব ১৩৮ রানে অল আউট হয়ে গেলেও ভারতীয় ব্যাটিং নিয়ে খুব একটা চিন্তার কিছু নেই। প্রথম ওয়ান ডে-তে ভারত খুব ভাল ব্যাট করেছে। পরের ম্যাচের আগে গোটা ব্যাটিং বিভাগেরই আত্মবিশ্বাসী থাকা উচিত।
প্রেমদাসায় অন্য রকম পিচের মোকাবিলা করতে হবে ভারতকে। প্রথম দুটো ম্যাচের তুলনায় কলম্বোয় টসটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আগেও বলেছি, মুরলী অবসর নেওয়ার পর শ্রীলঙ্কার পিচ অনেক পাল্টে গিয়েছে। বিশেষ করে ওয়ান ডে ম্যাচের পিচ। আমি কোনও দিন দেখিনি শ্রীলঙ্কা দলে চারজন পেসার খেলছে। তবে মনে হয় ওরা বুঝতে পেরেছে এখন ওদের স্পিন বিভাগ বেশ দুর্বল। তাই নিজেদের খেলার ধরনটাও ওদের পাল্টাতে হবে।
ব্যাটিংয়ের চেয়েও ধোনিকে অনেক বেশি চিন্তায় রাখবে বোলিং। প্রেমদাসায় সে রকম হাওয়া থাকবে না তাই খুব বেশি ওয়াইড বল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমবে। জাহির আর উমেশ দু’জনেই খুব বেশি রান দিয়ে ফেলছে। উমেশ উইকেট-টেকিং বোলার। কিন্তু দলের দুই প্রধান বোলার যদি ওভারে ছয়ের বেশি রান দিতে থাকে তা হলে সেটা দলের অধিনায়ককে চিন্তায় তো রাখবেই। মনে হচ্ছে জাককে কম রান দেওয়ার উপর নজর দিতে হবে। তাতে ও উইকেট না পেলেও ক্ষতি নেই। মনে রাখবেন, টেস্ট বা ওয়ান ডে-তে জাক যখন এক দিক থেকে রানের গতি আটকে রাখে, তখন ব্যাটসম্যানদের উপর একটা চাপ তৈরি হয়। উল্টো দিক থেকে যে বল করেছে তার বিরুদ্ধে ব্যাটসম্যান ঝুঁকি নেওয়ার চেষ্টা করে। উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়। অতীতে অনেক বার এ রকম হয়েছে।
মঙ্গলবারের ম্যাচটা থেকে শ্রীলঙ্কা নিশ্চয়ই যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস পেয়েছে। মনে রাখতে হবে, শেষ দুটো ম্যাচের চারটে সেশনের মধ্যে তিনটেতেই কিন্তু ওরা নিয়ন্ত্রণে ছিল। |