কোর্টের নির্দেশে চাকরি দৃষ্টিহীনের
রীক্ষায় সফল হয়েও প্রাথমিক-শিক্ষকের চাকরি মেলেনি। কারণ, তিনি দৃষ্টিহীন।
আদালতের নির্দেশের পরেও স্কুল-শিক্ষা দফতর উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ। অনেক লড়াইয়ের পর অবশেষে চাকরি পেলেন দৃষ্টিহীন নারায়ণ চৌধুরী। আদালত অবমাননার মামলার তোড়জোড় হচ্ছে জেনে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদকে নিয়োগের নির্দেশ দেয় স্কুল শিক্ষা দফতর। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ নারায়ণ চৌধুরীকে ডাকে নিয়োগপত্র পাঠায় গত ২০ জুলাই। মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই চাকরিতে যোগ দেন তিনি। তার আগে নারায়ণের কাছেই জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি কোন স্কুলে চাকরি করতে চান। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি স্বপন মুর্মু বলেন, “এক জন দৃষ্টিহীন ব্যক্তির জীবন যে কী যন্ত্রণার, তা অনুভূতি থাকলেই বোঝা যায়। এমন একজন প্রার্থীর তো আদালতে যাওয়ারই কথা নয়, উল্টে তাঁকে আদালত অবমাননার মামলা করার জন্য উকিলের চিঠি দিতে হয়েছে। তার পরে নিয়োগের অনুমতি মিলেছে। আমরা বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গেই দেখেছি। ওঁকে ওঁর গ্রামের স্কুলেই নিয়োগ করার কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু উনি নিজেই ১ কিলোমিটার দূরে চাকরি করার কথা জানিয়েছেন।” কেন গ্রামের স্কুল নয়? নারায়ণের কথায়, “গ্রামের ছেলেরা আমাকে শিক্ষক হিসেবে কতটা মেনে নিতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সকলেই তো পরিচিত। বকাবকি করলেও শুনবে না। এতে ছাত্রদেরই ক্ষতি হবে।”
সংসদ সভাপতির সঙ্গে নারায়ণ চৌধুরী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
নারায়ণ চৌধুরীর বাড়ি গড়বেতার বেড়াচাঁপা গ্রামে। জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন। নারায়ণের দৃষ্টি ফেরাতে আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ নিতে পারেননি তাঁর গরিব বাবা-মা। তবে খোঁজ পেয়েছিলেন হলদিয়ার ‘বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম রেসিডেন্সিয়াল স্কুল ফর ব্লাইন্ডে’র। ছোট থেকেই নারায়ণ সেখানে পড়েছেন। মাধ্যমিকে ৮৩ শতাংশ ও কলা-বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিকে ৭৭ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করা নারায়ণ এখন ইংরাজি অনার্সের ছাত্র। নারায়ণের বাবা চিত্তরঞ্জন চৌধুরীর কথায়, “ছেলেকে ট্রেনে তুলে দিয়ে প্রণাম করতাম। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম, ছেলে যাতে হলদিয়ায় নির্বিঘ্নে পৌঁছয়। আমাদের পক্ষে তো এক দিনও কাজ ফেলে হলদিয়া গিয়ে ছেলেকে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব ছিল না। লোকের দোকানে কাজ করে খাই। কাজ না করলে সংসারই চলবে না। তাই দৃষ্টিহীন ছেলেকেও ছেড়ে দিতে হত।”
২০০৯ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করেন নারায়ণ। ২০১০ সালে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। পাশও করেন। কিন্তু দৃষ্টিহীন নারায়ণকে নিয়োগের অনুমতি দেয়নি স্কুল-শিক্ষা দফতর। অনেক আবেদন-নিবেদনেও সাড়া না মেলায় ২০১১-র মার্চে আদালতে যান নারায়ণ। ওই বছরই জুনে আদালত নিয়োগের নির্দেশ দেয়। স্কুল-শিক্ষা দফতরের কমিশনারও রাজ্য স্কুল-শিক্ষা দফতরের চেয়ারম্যানকে নিয়োগ-সংক্রান্ত সুপারিশ করেন ২০১১-র ২৮ জুন। তার পরেও নিয়োগের কোনও উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি। তখন আদালত অবমাননার মামলা করতে হবে জানিয়ে উকিলের চিঠি পাঠান নারায়ণ। তার পরেই নড়েচড়ে বসে স্কুল-শিক্ষা দফতর। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদকে নারায়ণকে নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়। সংসদ সভাপতির কথায়, “আমি চাই, উনি আদর্শ শিক্ষক হোন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.