ঘর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে রবিবার রাতে খানাকুলের ঘাসুয়া গ্রামের সিপিএম নেতা মুক্তরাম মাজি (৪৮)-কে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে জখম ওই সিপিএম নেতার মৃত্যু হল কলকাতার হাসপাতালে। তাঁর স্ত্রী শিখাদেবী ওই ঘটনায় তৃণমূলের কিশোরপুর-২ অঞ্চল সভাপতি অসিত গঙ্গোপাধ্যায়, ওই দলেরই দীপেন মাইতি-সহ ২৮ জন কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে বুধবার খুনের লিখিত অভিযোগ করেছেন খানাকুল থানায়।
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে অসিতবাবু এবং দীপেনবাবু বলেন, “ঘটনায় আমার নাম মিথ্যা জড়ানো হয়েছে। জনরোষেই প্রহৃত হন মুক্তরামবাবু।” খানাকুলের তৃণমূল বিধায়ক ইকবাল আহমেদের দাবি, “ঘটনাটিতে কোনও রাজনীতি নেই। মুক্তরামবাবু দুষ্কৃতী ছিলেন। ঘরে না থেকে ঘাটাল থেকে রাতে এসে নানা দুষ্কর্ম করতেন। স্থানীয় মানুষই তাঁকে পিটিয়েছেন। তাঁর মৃত্যু দুঃখজনক। কিন্তু আমাদের স্থানীয় নেতাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করে ঘটনাটিতে রাজনীতির রং লাগাচ্ছে সিপিএম।” অবশ্য পুলিশের কাছে তিনি নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন বলে জানিয়েছেন বিধায়ক।
পুলিশ জানিয়েছে, মুক্তরামবাবুর বিরুদ্ধে দুষ্কর্মের কোনও লিখিত অভিযোগ নেই থানায়। এসডিপিও (আরামবাগ) শিবপ্রসাদ পাত্র বলেন, “অভিযুক্তরা পলাতক। তাদের ধরার চেষ্টা চলছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধানসভা ভোটের পর থেকেই তৃণমূলের ‘হামলা’র ভয়ে ‘ঘরছাড়া’ ছিলেন কৃষকসভার নেতা তথা সিপিএমের অঞ্চল কমিটির সদস্য মুক্তরামবাবু। রাতে লুকিয়ে মাঝেমধ্যে বাড়ি এলেও ভোরের আগেই চলে যেতেন। রবিবার রাতে তিনি বৃদ্ধ বাবাকে দেখতে এসেছিলেন। অভিযোগ, সেই সময়ে অসিতবাবুর নেতৃত্বে শ’খানেক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ঘরের পাঁচিল ভেঙে মুুক্তরামবাবুকে মারতে মারতে স্থানীয় স্কুল মাঠে নিয়ে গিয়ে পেটায়। স্ত্রী-পুত্র বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদেরও মারধর করা হয়। সোমবার ভোরে মাঠ থেকে মুক্তরামবাবুকে উদ্ধার করে আরামবাগ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, মুক্তরামবাবুর বুকের একাধিক হাড়, দু’টি পা এবং হাতের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার সকালে তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়।
বুধবার থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরে শিখাদেবী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সোনার বাংলা গড়তে চান। এই তার লক্ষণ! কাউকে স্বামীহারা, কাউকে পিতৃহারা করছে তার দলের লোকেরা।” সিপিএমের খানাকুল জোনাল কমিটির সদস্য তথা ওই অঞ্চলেরই ‘ঘরছাড়া’ আর এক নেতা ভজহরি ভুঁইয়া বলেন, “কোনও প্রতিশ্রুতি পালন করেননি মুখ্যমন্ত্রী। না আছে গণতন্ত্র, না আছে শান্তি-শৃঙ্খলা। যাঁরা ঘরছাড়া, তাঁদের ঘরে ফেরানোর বদলে পিটিয়ে মেরে ফেলছে তাঁর দলের লোকেরা।” |