মাঝরাতে রাস্তা দিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলেছেন এক প্রৌঢ়। পরনে রাতের পোশাক। ওই ব্যক্তির পিছনে দৌড়চ্ছেন আরও কয়েক জন। এত জনকে একসঙ্গে দৌড়াতে দেখে সন্দেহ হয় রাস্তায় রাতপাহারায় থাকা পুলিশকর্মীদের। তাই পিছু নেন তাঁরাও। ছোটার গতি বাড়িয়ে গঙ্গার ঘাটের কাছে এসে জলে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করতেই এক পুলিশকর্মী জাপটে ধরেন ওই প্রৌঢ়কে। মঙ্গলবার রাতে হাওড়ার মালিপাঁচঘড়ার ঘটনা।
কে ওই প্রৌঢ়? কেনই বা তিনি ঝাঁপ দিতে চাইছিলেন গঙ্গায়? পুলিশ জানায়, ওই ব্যক্তি বালি থেকে নিখোঁজ কলেজছাত্র বান্টি সিংহের বাবা। নাম রামশঙ্কর সিংহ। আট দিন আগে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ওই যুবকের কোনও হদিস দিতে পারেনি পুলিশ। বাড়ির লোকের অভিযোগ, তাঁকে খুন করা হয়েছে। এবং ত্রিকোণ প্রেমের কাজিয়ায় বান্টিকে খুন করেছে তাঁর কিছু ‘বন্ধু’ই। পুত্রশোকে কাতর হয়েই রামশঙ্কর গঙ্গায় ঝাঁপ দিতে গিয়েছিলেন বলে জানান তাঁর আত্মীয়স্বজন। |
রামশঙ্কর সিংহ। —নিজস্ব চিত্র |
সুরেন্দ্রনাথ কলেজের বাণিজ্য বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র বান্টি গত ১৮ জুলাই সালকিয়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি। তাঁর তিন বন্ধুর কাছ থেকে বাড়ির লোকজন জানতে পারেন, ওই দিন বিকেলে বালির পুনমচাঁদ বাগারিয়া ঘাটে স্নান করতে নেমে গঙ্গায় ডুবে যান বান্টি। কিন্তু গঙ্গায় অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তাঁর সন্ধান মেলেনি। সেই ঘটনার দু ’দিন পরেই রামশঙ্কর ছেলের তিন জন বন্ধুর বিরুদ্ধে বালি থানায় অপহরণ এবং খুনের মামলা দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, ওই তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পুলিশ এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
বুধবার বান্টির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উদ্বিগ্ন আত্মীয়স্বজন ভিড় করে আছেন। মঙ্গলবার মাঝরাতের ঘটনার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন রামশঙ্করও। তাঁর প্রতিবেশী রজত সরকার বলেন, “মঙ্গলবার রাতে পরিবারের সকলে শুয়ে পড়ার পরেই বাড়ি থেকে
বেরিয়ে যান উনি। স্থানীয় কয়েক জন দেখতে পেয়ে ওঁর পিছু নেয়। আমাদেরও খবর দেয়।”
বান্টির কাকা ডাব্লু সিংহ বলেন, “মঙ্গলবার বিকেলে তদন্তকারীরা গঙ্গার ঘাট থেকে পাওয়া বান্টির জামাপ্যান্ট ও মোবাইল বাজেয়াপ্ত করতে বাড়িতে এসেছিলেন। কিন্তু তার বেশি তাঁরা কিছুই করেননি।” হাওড়া কমিশনারেটের এডিসি (উত্তর) রশিদমুনির খান অবশ্য বলেন, “সব দিক খতিয়ে দেখছি। বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বান্টির মোবাইলের কললিস্টও পরীক্ষা করা হচ্ছে।” এ ছাড়া কোথায় কোথায় বান্টিদের যাতায়াত ছিল, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। |