সম্পাদকীয় ২...
সর্বজনীন ক্ষতি
শ্চিমবঙ্গে একটি অত্যাশ্চর্য পরিস্থিতি সৃষ্টি হইয়াছে। জ্বালানির দাম বাড়িয়াছে, কিন্তু দীর্ঘ দিন ভাড়া বাড়ে নাই ফলে বাস চালাইয়া মালিকদের তেমন লাভ হইতেছে না। ফলে, তাঁহারা ক্রমে বাস উঠাইয়া লইতেছেন। তাহার ফলে রাস্তায় বাসের সংখ্যা কমিতেছে। পরিবহণ ক্ষেত্রের সহিত জড়িত পরিবারগুলি আর্থিক সংকটে পড়িতেছে। অন্য দিকে, যে বাসগুলি চলিতেছে, সেগুলিতে স্বভাবতই ভিড় উপচাইয়া পড়িতেছে। তাহাতে যাত্রীদের অসুবিধা। ফলে, তাঁহারা ক্রমে বিকল্প পরিবহণের দিকে ঝুঁকিতেছেন। যাঁহাদের সামর্থ্য আছে, তাঁহারা গাড়ি কিনিতেছেন বা ট্যাক্সি চড়িতেছেন। বেশির ভাগ মানুষেরই সেই সামর্থ্য নাই, ফলে তাঁহারা কোনও ক্রমে অটো চড়িতেছেন। সকলেরই খরচ বাড়িতেছে যাঁহাদের সামর্থ্য কম, এই বর্ধিত খরচ তাঁহাদেরই অধিকতর বিপাকে ফেলিয়াছে। আর, বাসের পরিবর্তে অটো রিকশা, ট্যাক্সি অথবা ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহারে পরিবেশ দূষণের মাত্রাও বাড়িতেছে।
অর্থাৎ, রাজ্যে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হইয়াছে, যাহাতে প্রত্যেকের ক্ষতি। পরিস্থিতিটি রাজনীতিকদের সৃষ্ট। তাঁহারা বাস-ট্যাক্সির ভাড়া বাড়াইতে নারাজ। কেন, তাহার একটি পরিচিত উত্তর আছে ভাড়া বাড়িলে আম আদমির (আঞ্চলিক অনুবাদে মা-মাটি-মানুষের) সমস্যা হয়। তাঁহাদের উপর চাপ বাড়ে। অফিসের সময়ে বাসে বাদুড়ঝোলা হইতে বাধ্য হইলে অথবা বায়ুদূষণের ফলে সন্তানের শ্বাসকষ্টের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাইলে আম আদমির বেশি সমস্যা হয়, নাকি বাসভাড়া বাবদ এক-দুই টাকা অতিরিক্ত খরচ হইলে তাহার উপর বেশি চাপ পড়ে, এই প্রশ্নটির সদুত্তর রাজনীতিকদের নিকট আছে বলিয়া বোধ হয় না। অবশ্য, এই প্রশ্নের এখন আর কোনও তাৎপর্যও নাই। ভাড়া বাড়াইব না, ইহা জেদমাত্র। পশ্চিমবঙ্গবাসী ক্রমে জেদের সহিত সহবাসে অভ্যস্ত হইতেছেন।
বাস-ট্যাক্সির ভাড়া না বাড়াইয়াও তাহাকে কী ভাবে লাভজনক রাখা সম্ভব, গত এক বৎসর যাবৎ সরকার সেই পথের সন্ধান করিতেছে। পথটি মেলে নাই। তাহাতে শুধু বেসরকারি ক্ষেত্র নহে, সরকারি পরিবহণ সংস্থাও সংকটে পড়িয়াছে। ছয় মাস পূর্বে পরিবহণ মন্ত্রী জানাইয়াছিলেন, সরকারি পরিবহণকে লাভজনক করিবার বিকল্প পথ তৈরি করা হইবে। স্বভাবতই তাহা হয় নাই। হওয়া সম্ভবও নহে। অর্থনীতির যুক্তিকে কুলার বাতাস দিয়া বিদায় করিলে প্রকৃত সমাধানসূত্র পাওয়া সম্ভব নহে। কোনও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হইলে সেই বোঝাটি অন্তিম ব্যবহারকারীকেই বহন করিতে হয়। তেলের দাম বাড়িলে সেই বোঝা যাত্রীদের উপরই চাপিবে। ভাড়া না বাড়াইবার অর্থ, মধ্যবর্তী শ্রেণিকে এই বোঝা বহন করিতে বাধ্য করা। ইহা অর্থনীতির যুক্তির পরিপন্থী। যাত্রীদের উপর বাড়তি ভাড়া চাপাইতে মুখ্যমন্ত্রীর খারাপ লাগিতেই পারে। সেই ক্ষেত্রে কর্তব্যটি সরল বর্ধিত ভাড়াবাবদ যে টাকা বাড়তি খরচ হইবে, সরকার তাহা প্রত্যক্ষ ভর্তুকিবাবদ বাসযাত্রীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠাইয়া দিক। নির্বাচন সমীপবর্তী হইলে সম্পূর্ণ বাসভাড়াই ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়েও না হয় ভাবিয়া দেখা যাইতে পারে। কিন্তু, সরকারের খারাপ লাগিতেছে বলিয়া বাসমালিকদের ঘাড়ে বোঝা চাপাইয়া দেওয়া চলে না। তাহাতে সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটি বিপর্যস্ত হয়। পশ্চিমবঙ্গে যেমন হইতেছে। বাজার নামক প্রতিষ্ঠানটির প্রতি রাজনীতিকরা কিঞ্চিৎ শ্রদ্ধাবান হইলে মা-মাটি-মানুষেরই সুবিধা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.