নামনি অসমে সংঘর্ষ
হাঙ্গামা থামাতে আরও সেনা, নিহত বেড়ে ৪১
রাস্তা সুনসান। এখানে সেখানে পোড়া ঘরবাড়ি। কোথাও রাস্তায় রক্তের দাগ। মাত্র কিছু দিন আগেই বানভাসি হয়েছিল নামনি অসমের যে তিন জেলা, এ বার গোষ্ঠী সংঘর্ষের পরে সেখান থেকে বন্যার মতো মানুষ ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছেন অন্যত্র আশ্রয়ের সন্ধানে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বুধবার তিন জেলাতেই কয়েক হাজার সেনা জওয়ান নামানো হয়েছে। বিলাসীপাড়া, চাপড় এবং গোলকগঞ্জে ফ্ল্যাগ মার্চ করেছে সেনা।
গত কয়েকদিনের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা অন্তত ৪১। কোকরাঝাড়ে কার্ফু ও দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ বলবৎ রয়েছে। চিরাং ও ধুবুরিতে রাতে কার্ফু জারি রয়েছে। তবে পরিস্থিতি এই দিনও স্বাভাবিক হয়নি। সকালে চিরাং জেলার বিজনি থেকে পাওয়া গিয়েছে পাঁচটি দেহ। কোকরাঝাড় থেকে উদ্ধার হয়েছে তিনটি দেহ। ধুবুরির বিলাসীপাড়ার জিয়াগুড়িতে এই দিন সন্ধ্যায় হামলা হয়। তাতে এক জন মারা যান। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দু’জন। অনেক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। চিরাং ও কোকরাঝাড়েও নতুন করে আগুন লাগানোর খবর মিলেছে। এই দিনও অসমের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। অন্তত ৩০ হাজার ট্রেন যাত্রী বিপাকে পড়েছেন। বিকেলে আলিপুরদুয়ার, কোকরাঝাড় থেকে গুয়াহাটির দিকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
শুধু কোকরাঝাড়েই সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কমপক্ষে ২ লক্ষ মানুষ। ৭০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া। কয়েকশো গ্রাম ফাঁকা। বাসিন্দারা কে কোথায় আশ্রয় নিয়েছে কেউ বলতে পারছে না। ১২০টি ত্রাণ শিবির খুলতে হয়েছে। ধুবুরির বিলাসীপাড়ায় ২০টি শরনার্থী শিবিরে চলে এসেছেন অন্তত ২৫ হাজার মানুষ। তাঁদের বেশিরভাগই কোকরাঝাড় থেকে পালিয়ে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরের ওই শিবিরে মাথা গুঁজেছেন। এ দিন সকালে জখম ৭ জনকে উদ্ধার করে ধুবুরি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জলপাইগুড়ির বারভিশায় শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত দু’হাজার জন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুয়াহাটিতে এই দিন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ রাজ্য সরকারের উচ্চ পদস্থ অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেনা ও আধা সেনা নামানো হয়েছে তিন জেলাতেই। সেনাবাহিনীর ১০০০ জওয়ান কোকরাঝাড়, চিরাং, ধুবুড়ি ও বঙ্গাইগাঁও জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা দফতরের মুখপাত্র কর্নেল এস ফোগাত জানিয়েছেন, কয়েকটি স্পর্শকাতর জায়গা তাঁরা চিহ্নিত করতে পেরেছেন। সেখানে আরও বেশি নজরদারির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কোকরাঝাড়ের পুলিশ সুপার জিৎমল কোলে বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। ৪০ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী আগেই ছিল। আরও ১৫ কোম্পানি চাওয়া হয়েছে।” ধুবুরির পুলিশ সুপার প্রদীপ সালোই বলেন, “এলাকায় ৫ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী রয়েছে। আরও ৫ কোম্পানি চাওয়া হয়েছে।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব আর কে সিংহ বলেন, “অসম সরকারকে সংঘর্ষের মূল হোতাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে বলা হয়েছে। সংঘর্ষে ইন্ধন দিয়েছেন এমন কাউকে ছাড়া হবে না।” তবে সীমান্তের ওপার থেকে কোনও ইন্ধন আসছে না বলেই সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। বিজেপি এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ‘জবাব’ চেয়েছে। দলের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী অসমের সাংসদ। অথচ তিনি হাতপা গুটিয়ে বসে আছেন।
এ দিন অসম বিধানসভার সর্বদলীয় প্রতিনিধিরা বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের দুই সদস্যের প্রতিনিধি দলও এলাকায় যান। তবু ভয় কাটছে কোথায়! রাস্তায় সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ানের টহল দেখেও স্বাভাবিকতা সে ভাবে ফেরেনি। চাপা আতঙ্কে সকাল থেকেই দমবন্ধ অবস্থা ছিল কোকরাঝাড় ও ধুবুরির। বুধবার সকালে চার ঘন্টা কার্ফু শিথিল করে প্রশাসন। শহরের ঘরবন্দি লোকজন রুদ্ধশ্বাসে রাস্তায় নামেন। ছ’দিন থেকে স্তব্ধ শহর জুড়ে তীব্র হয়েছে দু’বেলা খাবার জোগারের চিন্তা। সামান্য কিছু সময় ছাড় পেয়ে পচাগলা জিনিসও কিনতে হচ্ছে। উপায় কী! সেটাও হাত ছাড়া হলে উপোসে দিন কাটবে, এমনটাই পরিস্থিতি।
পাশাপাশি, বামফ্রন্টের তরফে প্রস্তাব এলেও এখনই অসমের সীমানাবর্তী এলাকায় সর্বদল প্রতিনিধিদল পাঠানোর প্রয়োজন দেখছে না পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “অসম থেকে অনেক মানুষ এ রাজ্যের সীমানা এলাকায় চলে এসেছেন। উত্তেজনা কমাতে এবং মানুষের মনে আস্থা ফেরাতে সর্বদল প্রতিনিধিদের পাঠানো যেতে পারে।” কিন্তু মুখ্য সরকারি সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক পদক্ষেপ করেছে। শরণার্থীদের যাতে কোনও সমস্যা না-হয়, তা দেখভাল করতে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকে পাঠাচ্ছে সরকার। এই অবস্থায় সব দলের প্রতিনিধিরা আর কী করবেন?”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.