অবশেষে অসমের ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
রেল সূত্রের খবর, বুধবার দুপুর আড়াইটের পর থেকে নিউ জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জংশন, নিউ কোচবিহার, ধূপগুড়ি, হাসিমারা স্টেশনে দাঁড়ানো ১১টি ট্রেন অসমের দিকে রওনা হয়েছে। গত দু’দিনে ২৫টি ট্রেন বাতিল হয়েছে। আরও ২৫টি ট্রেন হয় থেমে থেকেছে, না হলে অন্য পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার কেন্দ্রীয় যুগ্ম স্বরাষ্ট্র সচিব শম্ভু সিংহ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিনিধিদল কোকরাঝাড় যান। পুলিশ ও উত্তর-পূর্ব রেলের সঙ্গে বৈঠকের পরে, নিউ জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কামাখ্যাগুড়ি ও নিউ বঙ্গাইগাঁও স্টেশনে আটকে থাকা প্রায় ৩০ হাজার যাত্রীকে ধাপে ধাপে গুয়াহাটি আনার সিদ্ধান্ত হয়। আরপিএফ, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ, অসম পুলিশ ও সিআরপি প্রহরায় প্রায় আড়াই হাজার যাত্রী নিয়ে রওনা হয় সম্পর্ক ক্রান্তি।
এদিন রাতে গুয়াহাটি থেকে গরিবরথ, অবধ-অসম, লোকমান্য এক্সপ্রেস, দাদার এক্সপ্রেস নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়েছে। রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, গুয়াহাটি থেকে বৃহস্পতিবার কলকাতা, নয়াদিল্লি ও মুম্বইয়ের জন্য তিনটি বিশেষ ট্রেন দেওয়া হয়েছে। তবে আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে কামাখ্যা, লামডিং এবং সিপং ইন্টারসিটি বাতিল হয়েছে। ট্রেনের সময়সূচিতে গোলমালের জেরে এদিন কলকাতা থেকে দার্জিলিং মেল, পদাতিক, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস বেলা ১১টার পর এক এক করে এনজেপিতে পৌঁছয়। |
এ দিন দুপুরের পর থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্টেশনে আটকে থাকা ট্রেনগুলি অসমের উদ্দেশ্যে রওনা হতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন যাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, ট্রেন সময়সূচির অনিশ্চয়তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই অনিশ্চিত ছিল খাবার ও পানীয় জল। শৌচাগার বেহাল হয়ে যাওয়ায় তিষ্ঠনোই দায় হয়ে উঠেছিল অনেক ট্রেনে। যাত্রীদের দাবি, রেলের চিকিৎসকদের দেখা মেলেনি কোনও স্টেশনে। ক্ষুদ্ধ খোদ রেলের যাত্রী পরিষেবা কমিটির চেয়ারম্যান জোয়াকিম বাক্সলাও। তিনি বলেন, “রেলের অফিসারদের বারবার যাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধা দেখতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে রেলের অফিসারেরা উদাসীন ছিলেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। রেলমন্ত্রী মুকুল রায়কে বিষয়টি জানিয়েছি।” এই বিষয়ে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সিতুসিংহ হাজং বলেন, “আমরা যতটা সম্ভব যাত্রী পরিষেবায় নজর রেখেছি। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন-সহ বিভিন্ন সংগঠনও সাহায্য করছে। তবে যে সব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।”
এরই মধ্যে নিউ কোচবিহার স্টেশনে আটকে পড়া যাত্রীদের জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জল, বিস্কুট, মুড়ি, চিড়া, পাউরুটি, গুড়, বাতাসা বিলি করেন। পরে দুপুরে যাত্রীদের খিচুড়ি-সবজি খাওয়ানো হয়। আলিপুরদুয়ারে তৃণমূল, যুব কংগ্রেস, ডিওয়াইএফ ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যরা রেল যাত্রীদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন। যাত্রীদের খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানো হয়। শিশুদের কেক, দুধ, কলা, পাউরুটি বিলি করা হয়। চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয় দক্ষিণেশ্বর আদ্যাপীঠের তরফে। আলিপুরদুয়ার পুরসভার তরফে পানীয় জলের ট্যাঙ্কার স্টেশনে পাঠানো হয়। |