রাষ্ট্রপতি পদে শপথ নেওয়ার দিনই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাল অণ্ণা হজারে শিবির। তবে তা ‘প্রতীকী’।
লোকপাল বিলের দাবিতে আজ থেকে যন্তর-মন্তরে ফের অনির্দিষ্টকালের ধর্না-অনশন শুরু করেছে অণ্ণা শিবির। সম্প্রতি মনমোহন সিংহের মন্ত্রিসভায় তাদের চোখে আর্থিক দুর্নীতিতে ‘অভিযুক্ত’ ১৫ জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনি পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছিল তারা। কিন্তু কেন্দ্র তা না মানায় আজ ওই মন্ত্রীদের ছবি ধর্নাস্থলে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা। এর মধ্যে ছিল প্রণববাবুর ছবিও। কিন্তু প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি পদে শপথ নেওয়ার পরেই তাঁর ছবিটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। |
রাজনৈতিক সূত্রের একাংশের বক্তব্য ছিল, রাষ্ট্রপতি কার্যত আইনের ঊর্ধ্বে। তাই প্রণববাবুর ছবি ঢেকে তাঁকে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অণ্ণা শিবির। কিন্তু অরবিন্দ কেজরিওয়াল অন্য ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, “ইউপিএ নেতৃত্ব আসলে প্রণববাবুকে রাষ্ট্রপতি পদে বসিয়ে তাঁর নামে থাকা সমস্ত অভিযোগ আড়াল করার সুযোগ করে দিলেন। আমরা প্রণববাবুর ছবিতে আবরণের মাধ্যমে দেশবাসীকে সেই বার্তাই দিতে চেয়েছি।” বস্তুত, কেজরিওয়ালদের দাবি ছিল, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন শেষ হওয়ার আগেই প্রণববাবুর বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের নিষ্পত্তি হোক। আজ সেই প্রসঙ্গ টেনে কেজরিওয়াল বলেন, “আমরা দু’মাস আগেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রণববাবুর বিরুদ্ধে প্রমাণ জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু এখনও কোনও তদন্ত শুরু হয়নি।” অণ্ণা নিজেও তাঁদের চোখে অভিযুক্ত মন্ত্রী-সাংসদদের বিরুদ্ধে বিশেষ ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে মামলা শুরুর দাবি জানিয়েছেন। যদিও তাঁদের যাবতীয় অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী বলেছেন, “অণ্ণা শিবিরের অভিযোগ ভিত্তিহীন।” কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদের বক্তব্য, “যদি অণ্ণা শিবিরের দেশের আইনব্যবস্থায় আস্থা না থাকে, তা হলে তাঁরা রাষ্ট্রপুঞ্জের দ্বারস্থ হতে পারেন।”
ইতিমধ্যে আজ কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন এনএসইউআই অণ্ণাদের ধর্নাস্থলে পাল্টা বিক্ষোভ দেখিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। বিজেপি নেতা রাজীবপ্রতাপ রুডি বলেন, “কংগ্রেস হতাশ হয়ে এই ধরনের কাজ করছে।” বিক্ষোভের জেরে প্রাথমিক ভাবে অণ্ণা শিবির কিছুটা চাপেও পড়ে যায়। কিন্তু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই বিক্ষোভে শাপে বর হয়েছে। অণ্ণা শিবির কিছুটা হলেও জনতার সহানুভূতি ফিরে পেয়েছে। বেলা গড়াতেই ভিড় বেড়েছে অণ্ণার সভায়। যা দেখে অণ্ণা ফের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “চিকিৎসকদের নিষেধ মেনে ভেবেছিলাম এ বার অনশন করব না। কিন্তু আগামী চার দিনের মধ্যে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে যদি বিশেষ তদন্তকারী দল গড়া না হয়, তা হলে অনশনে বসতে বাধ্য হব। এ বার এই লড়াইয়ের শেষ দেখে ছাড়ব। তাতে প্রাণ গেলেও কোনও ক্ষতি নেই।”
সব দেখে অনেকেরই মনে হচ্ছে, ফের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে ‘টিম অণ্ণা।’ |