|
|
|
|
‘কোথায় বসেছিলি?’ মমতার ডাক শুনে জিজ্ঞাসা ‘প্রণবদা’র |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পর সেন্ট্রাল হলের করিডর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রোটোকল অনুযায়ী সঙ্গে ছিলেন সদ্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল এবং উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি। হঠাৎই পাশ থেকে ডাক “প্রণবদা!” শুনেই দাঁড়ালেন রাষ্ট্রপতি। এতক্ষণ লক্ষ করেননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে পেয়ে প্রণববাবু জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘কোথায় বসেছিলি তুই!” ব্যস ওইটুকুই। আর কথা হয়নি দু’জনের। কিন্তু এটুকুতেই যেন ধরা থাকল অনেকখানি।
সংসদের সেন্ট্রাল হলে কোনও যৌথ সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হালফিলে কখনও প্রথম সারিতে বসতে দেখা যায়নি। বরং তিনি দলীয় সাংসদদের সঙ্গে পিছনের সারিতেই বসতে পছন্দ করেন। রাষ্ট্রপতির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রীদের বসার ব্যবস্থা হয়েছিল সামনের দিকে। সেখানে গিয়ে নীতীশ কুমার, অখিলেশ যাদবদের সঙ্গে মমতা আজ কুশল বিনিময় করেন ঠিকই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গিয়ে বসেন একেবারে পিছনের সারিতে। সঙ্গে রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। প্রণববাবুর শপথগ্রহণের সময় সেখানে বসেই আজ সকলের সঙ্গে হাততালি দিয়ে নতুন রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন জানান মমতা। তার পর অনুষ্ঠান শেষ হতেই সেন্ট্রাল হলের গেটের মুখে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন প্রণববাবুর জন্য। |
|
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে। ছবি: পিটিআই |
রাষ্ট্রপতির শপথের জন্য গত রাতে দিল্লি পৌঁছে সোজা প্রণববাবুর বাসভবনে গিয়েছিলেন মমতা। তার পর একান্ত কথোপকথনে ভাবী রাষ্ট্রপতিকে বলেছিলেন, “আমি রাগারাগি করলে আপনি এ বার থেকে আমাকে ডেকে ধমকে দেবেন।” প্রণববাবুকে চকোলেট-সহ কিছু উপহারও দেন মমতা। স্বাভাবিক ভাবেই ব্যক্তিগত সম্পর্কের অতীত টানাপোড়েন কেটে যাওয়ায় প্রণববাবু খুশি। তবে কংগ্রেস নেতারা বিষয়টি অন্য ভাবে দেখছেন। তাঁদের মতে, ব্যক্তি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্ক এখন ভাল করতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী। কারণ, প্রণববাবু এখন সরকারে নেই। ফলে তাঁর সঙ্গে মমতার বিশেষ কোনও লেনদেন নেই। বরং ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো রাখলে ভবিষ্যতে সুবিধা হতে পারে। এর মানে অবশ্য এই নয় যে ইউপিএ-র সঙ্গে মমতা এ রকমই নরম মনোভাব নিয়ে চলবেন। বস্তুত, পেট্রোল-ডিজেলের দামবৃদ্ধির খবর পেয়েই আজই নতুন করে কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি। এ ছাড়া, খুচরোয় বিদেশি লগ্নি বা পেনশন বিলের মতো আর্থিক সংস্কার কর্মসূচির ক্ষেত্রে তাঁর আপত্তি তো রয়েইছে। এই অবস্থায় আজ সেন্ট্রাল হলে এনসিপি শীর্ষ নেতা শরদ পওয়ারের কন্যা সুপ্রিয়া সুলের সঙ্গে মমতার কথোপকথনের দৃশ্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে হয়েছে অনেকেরই।
মমতা অবশ্য আজ দিল্লিতে কোনও রাজনৈতিক মন্তব্য করেননি। বরং শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে সংসদে রেলমন্ত্রীর ঘরে গিয়ে খোশমেজাজে গল্প করেছেন। মমতার সঙ্গে কলকাতা থেকে এসেছিলেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আজ আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন তিনি। এমনকী আজ লালকৃষ্ণ আডবাণী পর্যন্ত মিঠুনকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে কথা বলেছেন।
সেন্ট্রাল হলে আজ উপস্থিত ছিলেন প্রণববাবুর স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ-সহ পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে বসেছিলেন অনাবাসী শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়। আজ তাঁদের সঙ্গেও কথা হয় মমতার।
মুখ্যমন্ত্রী যখন তাঁর ‘প্রণবদা’র শপথ অনুষ্ঠান শেষ করে কলকাতার বিমান ধরছেন, তখন রাষ্ট্রপতি থিতু হয়েছেন ‘নতুন বাড়িতে’। সারা দিনের ধকলের পর বিশ্রাম নিলেন। রাষ্ট্রপতি হয়েছেন বলে খাদ্যাভ্যাস কিন্তু আদৌ বদলাননি। সেই চিরাচরিত ভাত, ডাল, পোস্ত আর মাছের ঝোল। যে দিন জিতেছিলেন, চতুর্দিকে যখন উৎসবের মহড়া, সে দিনও কি কোনও বিশেষ মেনু ছিল প্রণববাবুর পাতে? মেয়ে শর্মিষ্ঠা বলেছিলেন, “না। আমাদের বাড়ি তো জানেনই। বাবা বাঁধাধরা খাবারের গতের বাইরে যেতে পছন্দ করেন না।” তবে এখন তফাৎ একটাই রাষ্ট্রপতি ভবনের খাবার বাইরে থেকে আসে না। বেশির ভাগটাই আসে কিচেন গার্ডেন থেকে।
আরও অনেক কিছুর মতো বদল হয়নি আর এক জায়গাতেও। এত দিন কর্মসূত্রে যাঁদের সঙ্গে নর্থ ব্লকে ওঠাবসা করেছেন প্রণববাবু, নতুন বাড়িতে সেই পুরনো সঙ্গীদের মধ্যেই রয়ে গেলেন কয়েক জন। যেমন, অমিতা পল, রজনীশ ও প্রদীপ গুপ্ত। আজ বিকেলেই রাষ্ট্রপতির সচিব পদে নিযুক্ত হয়েছেন অমিতা। |
|
|
|
|
|