সচরাচর না গেলেও শপথের আগে রাজঘাটে
ন্যরা বছরে দু’দিন নিয়ম করে সেখানে যান। কিন্তু প্রণব মুখোপাধ্যায়কে এত দিন সচরাচর দেখা যায়নি মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর সমাধিস্থল রাজঘাটে। সেই মানুষটিই আজ শপথ গ্রহণের আগে সকালে রাজঘাটে গেলেন শ্রদ্ধা জানাতে। গেলেন এর পাশে ইন্দিরা গাঁধীর সমাধিস্থল শক্তিস্থলে, গেলেন রাজীব গাঁধীর ‘বীরভূমি’, জওহরলাল নেহরুর ‘শান্তি বন’, লালবাহাদুর শাস্ত্রীর সমাধি ‘বিজয় ঘাটে’ও।
গাঁধীজির জন্ম ও মৃত্যুদিনে নিয়ম করে রাজঘাট যান সনিয়া গাঁধী, মনমোহন সিংহ, লালকৃষ্ণ আডবাণীরা। সম্প্রতি
গাঁধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা।
ছবি: অশোক মজুমদার।
বিদেশে চিকিৎসা করিয়ে ফেরার পরে সনিয়াকে প্রথম প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল গাঁধী জয়ন্তীর দিনই। কিন্তু প্রণববাবুকে বিশেষ একটা দেখা যায়নি। অথচ অনেক রাতে ঘুমোলেও তিনি সাধারণত ভোরবেলায় উঠে পড়েন। ফলে অনায়াসেই গাঁধীজির জন্ম বা মৃত্যু দিনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজঘাটে যেতেই পারতেন। কংগ্রেস সূত্রের মতে, প্রণববাবু মনে করতেন, গাঁধীজির প্রতি তাঁর যে অপার শ্রদ্ধা রয়েছে, সেটি জন্ম বা মৃত্যুর প্রতীকী অনুষ্ঠানে গিয়ে ভিড় বাড়িয়ে প্রকাশ না করলেও চলে। রাজঘাটে অনেক কংগ্রেস নেতাই উপস্থিত হন সনিয়া গাঁধীর সামনে হাজিরা দিতে।
প্রশ্ন হল, যদি এটাই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অভিমত হয়, তা হলে আজ কেন তিনি রাষ্ট্রপতি পদে শপথ নেওয়ার আগেই পাঁচ নেতার সমাধিস্থলে গেলেন? রাষ্ট্রপতির যাবতীয় গতিবিধি প্রোটোকলের ব্যাকরণে বাঁধা। সেই ব্যাকরণে বলা নেই, রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে রাজঘাটে যেতে হবে। প্রতিভা পাটিলও সেখানে গিয়েছিলেন শপথ নেওয়ার পরেই। কিন্তু মিলিটারি সেক্রেটারির অনুমতি নিয়ে প্রণববাবু আজ গেলেন। কেন? তা নিয়েই আজ কৌতূহল তুঙ্গে রাজধানীতে।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “প্রণববাবুর কাছে আজকের দিনটি স্মরণীয়। ফলে আজকের দিনে আধুনিক ভারতের স্থপতি, জাতির জনক মহাত্মা গাঁধীর প্রতি তিনি শ্রদ্ধা জানাবেন, এটা তো স্বাভাবিক। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর সংসদের সেন্ট্রাল হলে প্রথম বিবৃতিতেও তো গাঁধীর প্রতি প্রণববাবুর অপার ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রতিফলিত হয়েছে। গাঁধীজির শান্তি ও অহিংসার বার্তা যে আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রদান করেছে, সে কথাও উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রপতি।”
কিন্তু কেউ কেউ মনে করেন, আজ রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে প্রণববাবু যে রাজঘাট-সহ নেহরু-শাস্ত্রী-ইন্দিরা-রাজীবের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন, তার পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের সৌজন্য। তবে ইন্দিরা গাঁধীর ক্ষেত্রে শুধু সৌজন্যই নয়, সেখানে কাজ করেছে তাঁর প্রতি রাজনৈতিক ঋণস্বীকারও। অনেকে আবার অন্য কথা বলছেন। আজই যন্তর মন্তরে আন্দোলনে বসেছেন গাঁধীবাদী নেতা অণ্ণা হজারে ও তাঁর সঙ্গীরা। কংগ্রেসের এক তরুণ নেতার বক্তব্য, শপথের দিন যাঁরা গাঁধী টুপি পরে আন্দোলন করছেন, রাজঘাটে গিয়ে প্রণববাবু আজ তাঁদেরও বার্তা দিলেন। বোঝাতে চাইলেন, গাঁধী টুপি পরেছেন বলেই গাঁধী অণ্ণাদের সম্পত্তি হয়ে যাননি।
কারণ যা-ই হোক, অভ্যাসে না থাকলেও আজ প্রণববাবু যে ভাবে গাঁধীজির সমাধিতে গিয়ে তাঁর নতুন ইনিংস শুরু করলেন, তাতে উৎসাহিত অনেকেই। বিশিষ্ট গাঁধীবাদী ব্যক্তিত্ব গাঁধী-স্মৃতি ও দর্শন সমিতির ভাইস-চেয়ারপার্সন তারা গাঁধী ভট্টাচার্যর কথায়, “রাষ্ট্রপতি আজ রাজঘাটে গিয়েছেন, এটি খুব খুশির খবর। গোটা বিশ্বের নেতাদের মাধ্যমে এ ভাবে গাঁধীজির বার্তা আরও প্রসারিত হওয়াটা জরুরি।” পাশাপাশি প্রণববাবুর কাছে তাঁর অনুরোধ, “রাষ্ট্রপতি এক বার দিল্লিতে গাঁধীজির মৃত্যুস্থল গাঁধীস্মৃতিতেও আসুন। রাষ্ট্রপতির প্রোটোকলে এই বিশেষ জায়গাটিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হোক।”
সেখানে রাষ্ট্রপতি কবে যাবেন, সে তো পরের প্রশ্ন। নতুন রাষ্ট্রপতির সামনে এখন প্রশ্ন, কোথা থেকে তিনি সফর শুরু করবেন? নীতীশ কুমার অনুরোধ জানিয়ে রেখেছেন, রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর প্রণববাবু যেন দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের রাজ্য বিহার থেকেই সফর শুরু করেন। আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আব্দার করেছেন, তাঁর রাজ্যে প্রথমে যেতে হবে। নতুন রাষ্ট্রপতি এখন নীতীশের কথা রাখবেন, নাকি ‘ছোট বোন’-এর দাবি মানবেন, সেটাই দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.