|
|
|
|
দারিদ্র মোচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন প্রথম দিনেই |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
রাজনীতিক প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অজস্র স্মরণীয় বক্তৃতার সাক্ষী সংসদ ভবন। সেই সংসদের সেন্ট্রাল হলে আজ রাষ্ট্রপতি হিসেবে রূপান্তরিত হওয়ার পরে জাতির উদ্দেশে তাঁর প্রথম বক্তৃতাও নিছক ‘নিয়মতান্ত্রিকতায়’ সীমাবদ্ধ রইল না।
শপথ গ্রহণের পরই দেশকে দারিদ্র দূরীকরণের এক সুনির্দিষ্ট দিশা দেখাতে চাইলেন ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি। বললেন, “অনাহারের থেকে বড় অপমান আর হয় না। সুযোগ সুবিধাকে ধীরে ধীরে নিচুস্তর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার তত্ত্ব (ট্রিক্ল ডাউন থিওরি) দরিদ্র মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে না। যাঁরা নীচে রয়েছেন তাঁদের উপরে তুলে আনতে হবে, যাতে আধুনিক ভারতের অভিধান থেকে দরিদ্র শব্দটাই মুছে যায়।”
সেই ছোটবেলায় দেখা বাংলার দুর্ভিক্ষের প্রসঙ্গ তুলে প্রণববাবু বলেন, “তখন আমি খুবই ছোট ঠিকই। কিন্তু বহু লক্ষ মানুষের মৃত্যুর যন্ত্রণা ও শোক আমার মন থেকে মুছে যায়নি।” এবং নতুন রাষ্ট্রপতির আশা, এই সব দুঃসহ স্মৃতি পিছনে ফেলে নতুন প্রজন্মের হাত ধরে কৃষি, শিল্প, সামাজিক পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিপুল উন্নতি করবে ভারত। সেই উন্নয়ন যজ্ঞে পিছনের সারির মানুষদেরও সামিল করতে হবে। প্রণববাবুর কথায়, “দেশের প্রকৃত উন্নতি তখনই হবে যখন হতদরিদ্ররাও অনুভব করতে পারবেন যে তাঁরা উদীয়মান ভারত গঠনের শরিক।” |
|
নতুন ভূমিকায়। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র |
স্বাভাবিক ভাবেই দারিদ্র দূরীকরণের প্রশ্নে কারও দ্বিমত নেই। কিন্তু যে ভাবে ‘ট্রিক্ল ডাউন থিওরি’কে খারিজ করে আজ নতুন দিশা দেখাতে চেয়েছেন প্রণববাবু, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাষ্ট্রপতি কি এ ভাবে ব্যক্তিগত মত দিতে পারেন? সংসদের বাজেট অধিবেশনের শুরুতে দুই কক্ষের যৌথ সভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত বক্তৃতা পাঠ করেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু রাষ্ট্রপতি পদ গ্রহণ করে আজকের বক্তৃতা প্রণববাবুর নিজের লেখা। তাঁর ব্যক্তিগত মত।
কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “মূলত সরকারের নীতি, অবস্থানই রাষ্ট্রপতির নীতি হওয়া উচিত। তা সে বক্তৃতা মন্ত্রিসভায় পাশ হোক বা না হোক। ব্রিটিশ সংসদীয় ব্যবস্থাও সে কথা মেনে চলে। তার মানে এ-ও নয় যে ব্যক্তিগত মত দেওয়ার অধিকারই রাষ্ট্রপতির নেই। কিন্তু মুশকিল হল রাষ্ট্রপতি নিজের মত দিতে শুরু করলে বিতর্কের আশঙ্কা রয়েছে।”
|
|
রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে (বাঁ দিক থেকে) পি চিদম্বরম,
সনিয়া গাঁধী,
গুরশরণ কৌর, মনমোহন সিংহ এবং হামিদ আনসারি। বুধবার সংসদে। ছবি: অশোক মজুমদার। |
আসলে প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তা হল, অতীতের অনেকের মতো তিনি কি শুধু ‘রবার স্ট্যাম্প’ রাষ্ট্রপতি হয়ে থাকবেন? নাকি সরকারের কোনও নীতি নিয়ে আপত্তি থাকলে প্রশ্ন তুলবেন? বিরোধীদের প্রত্যাশা, প্রণববাবু সরকারের হাতে পুতুল হয়ে থাকবেন না। আজ প্রণববাবুর বক্তৃতাকে অনেকেই সেই প্রেক্ষাপটে দেখছেন। মনে
|
‘গার্ড অফ অনার’ নিচ্ছেন
রাষ্ট্রপতি। ছবি: রয়টার্স। |
করছেন প্রথম দিনেই স্বাধীন চিন্তার ইঙ্গিত দিলেন নতুন রাষ্ট্রপতি।
দারিদ্র দূরীকরণের উপায় হিসেবে সংস্কারপন্থীদের একাংশ ‘ট্রিকল ডাউন থিওরি’-র কথা বলেন। এই তত্ত্ব বলে, সরকার বিভিন্ন শিল্প-বাণিজ্য সংস্থা ও ধনীদের করছাড়-সহ বিভিন্ন সুবিধা দিলে লগ্নি বাড়বে। ফলে কম দামে পণ্য মিলবে। নিচু ও মাঝারি তলায় তৈরি হবে কাজের সুযোগ। পরোক্ষে যার সুফল পাবেন সমাজের নিম্নতম শ্রেণির মানুষ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান প্রথমে এই নীতি কার্যকর করেছিলেন। পরে আশির দশকে তা অনুসরণ করেন
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার। এই তত্ত্বের সমালোচকরা অবশ্য বলেন, এতে আদতে গরিব মানুষের কোনও উপকারই হয় না। যদিও বা হয়, তা যৎসামান্য।
কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, “আসলে রাষ্ট্রপতি যা বলেছেন, তা পুরনো কংগ্রেসিদের কথা। সনিয়া-রাহুল সেই কথাই বলেন। সে জন্য একশো দিনের কাজ বা খাদ্য সুরক্ষা আইন রূপায়ণের উপর তাঁরা জোর দিচ্ছেন। কিন্তু এই বক্তব্যের পর, মনমোহনের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মতের ফারাক নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।”
এ দিন তাঁর বক্তৃতায় সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন প্রণববাবু। বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই আসলে ‘চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ’। বিশ্বযুদ্ধ এই কারণেই যে, সন্ত্রাসবাদ যে কোনও মুহূর্তে পৃথিবীর যে কোনও অংশে মাথা তুলতে পারে। বিষয়টি অনেকে উপলব্ধি করার আগেই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ভারত। স্বামী বিবেকান্দকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “ভারতের উদয় হবে, তবে পেশিশক্তি দিয়ে নয়, মনের শক্তি দিয়ে। ধ্বংসের ধ্বজা উড়িয়ে নয়, শান্তি ও প্রেমের ধ্বজা উড়িয়ে।”
|
“অনাহারের থেকে বড় অপমান আর হয় না।
যাঁরা
নীচে রয়েছেন তাঁদের উপরে তুলে আনতে হবে,
যাতে
আধুনিক ভারতের অভিধান থেকে দরিদ্র শব্দটাই মুছে যায়।”
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় |
|
|
|
|
|
|