ট্যাক্সি ধর্মঘটে ভোগান্তি, মোকাবিলায় কঠোর মমতা
ট্যাক্সি ধর্মঘটে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু বুধবার রাস্তায় ট্যাক্সি কম থাকায় নাকাল হলেন যাত্রীরা। তবে দিনের শেষে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, চাপ দিয়ে দাবি আদায়কে কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। সরকারি সূত্রের খবর, প্রয়োজনে বিকল্প ট্যাক্সি-পরিষেবাও চালু করা হবে।
এ দিন সন্ধ্যায় মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রোজ রোজ যাঁরা ধর্মঘট করছেন, তাঁরা ঘরে বসে থাকুন। এক-দু’দিন মানুষের কষ্ট হবে। কিন্তু এই ব্ল্যাকমেলিং, চিটিংবাজি সহ্য করব না।” মহাকরণ সূত্রের খবর, এ রকম চলতে থাকলে ট্যাক্সি-লাইসেন্স বাতিল করার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেও সরকার পিছপা নয়। এ দিন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “ওঁরা শুনলেন না। আমরাও ঠিক করেছি, ধর্মঘটীদের সঙ্গে আর আলোচনা করব না।”
ধর্মঘট রুখতে শিয়ালদহে বাসের ব্যবস্থা করেছিল রাজ্য সরকার। অটোগুলিও স্টেশন-চত্বরে ঢোকার অনুমতি পায়। ছিলেন ধর্মঘট-বিরোধী ট্যাক্সিচালকেরাও। সকালে দিল্লি থেকে শিয়ালদহে পৌঁছে অনুপ রায় নামে এক যাত্রী দেখেন, বাইরে ট্যাক্সি নেই। কিছু অপেক্ষার পরে ধর্মঘট-বিরোধী একটি ট্যাক্সিতে ওঠার মুখে তিনি বলেন, “ধর্মঘটের সংস্কৃতিতে কোনও পরিবর্তন এল না।” এ দিকে, শিয়ালদহে অটোচালকেরা ইচ্ছেমতো ভাড়া চেয়েছেন। তাঁরা স্টেশন থেকে গিরিশ পার্কের ভাড়া হেঁকেছেন ১৫০ টাকা। সকালে শিয়ালদহ স্টেশনে যান পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। নিজেদের সংগঠনের একটি মাইক লাগানো গাড়ি ডেকে শিশু-সহ এক দম্পতিকে গন্তব্যে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, “সকালে বেশ কিছু ট্যাক্সি রাস্তায় নেমেছিল। ধর্মঘটীরা চালকদের মারধর করে জনজীবন ব্যাহত করার চেষ্টা করছে।” এর পিছনে ‘সিপিএমের চক্রান্ত’ রয়েছে বলেও তাঁর দাবি।
শিয়ালদহ স্টেশনে ফাঁকা ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র
ট্যাক্সির জন্য দুর্ভোগে পড়েন বিমানযাত্রীরাও। বিমানবন্দরের বাইরে ট্যাক্সির সংখ্যা ছিল নগণ্য। শহরে নেমে অনেকে ট্যাক্সি ধর্মঘটের কথা জানতে পারেন। বেলগাছিয়া যাবেন বলে প্রি-পেড কাউন্টার থেকে ট্যাক্সির স্লিপ নিয়ে বেরিয়ে এসে হায়দরাবাদের রবি কান্তকে আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। তিনি বলেন, “বেলগাছিয়ার এক অফিসে জরুরি বৈঠক ছিল। আধ ঘণ্টা অপেক্ষার পরে আমার সঙ্গে ট্যাক্সিতে অন্য এক যাত্রীকে তুলে দেওয়া হয়। তিনিও একই দিকে যাচ্ছিলেন।” অভিযোগ, দু’জনের থেকেই পুরো ভাড়া নেওয়া হয়। ভাড়াও কেন ভাগ করা হল না, প্রশ্ন তোলেন রবি কান্ত। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, যাত্রীদের ছাড়তে আসা ট্যাক্সিগুলি আটকে কলকাতায় নামা যাত্রীদের সেগুলিতে করেই গন্তব্যে পাঠায় পুলিশ। রোজ ১৫টি করে ভল্ভো বাস বিমানবন্দর থেকে যাতায়াত করলেও এ দিন তা বাড়িয়ে ১৯টি করা হয়। বিমানবন্দর থেকে গড়িয়া পর্যন্ত নতুন রুটও এ দিন চালু হয়। বিকেলের পরে বিমানবন্দরে ট্যাক্সির সংখ্যা বাড়ে।
দুপুরেও হাওড়া স্টেশনের প্রি-পেড ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ছিল ফাঁকা। পুলিশের সামনেই প্রাইভেট গাড়ির চালকেরা যাত্রী নেন দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়ায়। হাওড়া থেকে পার্ক সার্কাস বা কসবা, সব ক্ষেত্রেই ন্যূনতম ভাড়া চাওয়া হয়েছে ৩০০ টাকা। চেন্নাই থেকে অসুস্থ মাকে নিয়ে ফিরছিলেন কৃষ্ণনগরের তারক দাস। হাওড়া থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ২৫০ টাকা ভাড়া চান এক চালক। ২০০ টাকায় রফা হয়। তারকবাবুর কথায়, “অসুস্থ মাকে নিয়ে তো বাসে উঠতে পারব না।”
হাওড়া স্টেশনে যে ক’টি ট্যাক্সি ছিল, সেগুলি চলেছে বেশি ভাড়ায়। অনেকে গ্যারাজে ট্যাক্সি রেখে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে প্রচুর ভাড়া হেঁকেছেন। এমনই এক চালক বিনোদ সাউ বলেন, “রাস্তায় ট্যাক্সি ভেঙে দেওয়ার ভয় থাকায় প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছি।” এ দিন ফাঁকা ছিল ধর্মতলা, বড়বাজার, ব্রেবোর্ন রোডের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডও।
ধর্মঘটের মূল আহ্বায়ক ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি বিমল গুহ বলেন, “ধর্মঘটের ডাক নস্যাৎ করার নানা চেষ্টা করেছেন পরিবহণমন্ত্রী ও তাঁর অনুগামী কিছু সংগঠন। কাদের কথা ঠিক হল, সবাই দেখেছেন।” পরিবহণ দফতরের দাবি, অন্য দিনের চেয়ে বিভিন্ন রুটে বাড়তি সরকারি বাস চালানো হয়েছে। সিএসটিসি ও সিটিসি-র হিসেবে, গত দু’দিনের তুলনায় এ দিন বেশি বাস চলেছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.