পেট্রোল-ডিজেলের দাম নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার লক্ষ্যে ২০০৩ সালে একটি প্রকল্প চালু করে কেন্দ্র। যার নাম ‘ইররিকভারেব্ল ট্যাক্সেস কম্পেনসেশন স্কিম’। এতে বলা হয়, রাজ্য বা অন্য স্থানীয় প্রশাসনের বসানো নির্দিষ্ট কয়েকটি কর (যেমন, অশোধিত তেলে প্রবেশ কর, বিক্রয় করের উপর বসানো সারচার্জ ইত্যাদি) বাবদ তেল সংস্থাগুলিকে যে টাকা গুনতে হয়, তাদের তা পুষিয়ে দেবে কেন্দ্র। যে খাতে এই অর্থ দেওয়া হবে, তার নাম হবে ‘স্টেট সারচার্জ’। কিন্তু ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আইওসি)-এর জনসংযোগ বিভাগের কর্তা এন শ্রীকুমারের দাবি, ২০০৩ সালের পর এই ‘স্টেট সারচার্জ’-এর অঙ্ক বদলায়নি। অথচ এই মাঝের সময়ে বিভিন্ন রাজ্যের কর-কাঠামো বদলে গিয়েছে অনেকটাই। কোথাও নতুন কর বসেছে, কিংবা হার বেড়েছে পুরনো করের। তেমনই কোথাও আবার করের হার তো কমেইছে, সেই সঙ্গে উঠে গিয়েছে কিছু করও। তা ছাড়া, মাঝের ন’বছরে বিশ্ব এবং তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বাজারে আমূল বদলে গিয়েছে তেলের দাম। ফলে সেই সব কিছু খতিয়ে দেখেই জ্বালানির দাম নির্ধারণের এই নতুন পথে হেঁটেছেন তাঁরা।
নতুন নিয়মে প্রত্যেক রাজ্যে প্রতি ধরনের জ্বালানির উপর ওই সব নির্দিষ্ট কর কী পরিমাণে বসানো হয়েছে, তা আলাদা-আলাদা ভাবে হিসেব করা হয়েছে। ফলে ২০০৩ সালের তুলনায় যে সব রাজ্যে যে সব পণ্যে করের বোঝা বেড়েছে, সেখানে তার দাম বেড়েছে। আর তার উল্টোটা ঘটলে, দাম কমেছে। এই কারণেই কিছু রাজ্যে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়েছে (যেমন, পশ্চিমবঙ্গ), তেমনই তা কমেছে অন্য কিছু রাজ্যে (যেমন, গুজরাত)। এমনকী একই রাজ্যে (পশ্চিমবঙ্গ) যেখানে তেলের দাম বেড়েছে, সেখানে দাম কমেছে রান্নার গ্যাসের।
শ্রীকুমার জানান, এখন থেকে প্রতি ত্রৈমাসিকে রাজ্যের কর-কাঠামো, ইররিকভারেব্ল ট্যাক্স’-এর আওতায় থাকা কোনও কর বসানো, রাজ্যে বিভিন্ন পেট্রোপণ্যের বাজার দর এবং বিশ্ব বাজারে তেলের দামের ওঠা-পড়া নজরে রাখবেন তাঁরা। সেই অনুসারে বদলাবে দামও। এই পদক্ষেপকে ডিজেলের দাম বিনিয়ন্ত্রণের পথে এক ধাপ এগোনো বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথেই এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে বিহারের অর্থমন্ত্রী তথা রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের এমপাওয়ার্ড কমিটির চেয়ারম্যান সুশীল মোদী বলেন, “রাজ্যগুলির হাতে কর আদায়ের যতটুকু ক্ষমতা আছে, কেন্দ্র তা-ও কেড়ে নিতে চায়।” রাজ্যগুলি থেকে কেন্দ্রের আদায় করা করের যে অংশ রাজ্যগুলিকে দেওয়া হয়, তার পরিমাণ বৃদ্ধির দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও একই সুরে বলেছেন, কর থেকে কেন্দ্রের মোট উপার্জনের ৭০ শতাংশই আসে রাজ্যগুলি থেকে। এর মাত্র ৩২ শতাংশ রাজ্যগুলিকে ফিরিয়ে দেয় কেন্দ্র। যে হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ গোটা দেশে মোট কর আদায়ের মাত্র ২.৩ শতাংশ পায় বলে অমিতবাবু জানান। কেন্দ্রীয় করের অন্তত ৫০ শতাংশ রাজ্যগুলিকে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। |