তেলের দাম নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ফের সংঘাতের পথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রশ্নে ফের রাস্তায় নামার হুমকির পাশাপাশি ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় সরকারে থাকা না-থাকা নিয়ে ভাবনা-চিন্তার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।
তেলের দামের উপর রাজ্য সরকারগুলি যে কর আদায় করে, তার একটা অংশ তেল কোম্পানিগুলিকে ফিরিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। ২০০৩ সালে পেট্রোলের দামের বিনিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরুর সময় থেকেই এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এখন তেল সংস্থাগুলির বক্তব্য, কেন্দ্র পরিশোধযোগ্য অর্থের হার না বাড়ালেও বিভিন্ন রাজ্যে ইতিমধ্যে স্থানীয় করের হার বেড়েছে অথবা কমেছে। কোথাও কোথাও নতুন কর চাপানো হয়েছে। কোথাও বা কিছু কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু গোটা দেশের নিরিখে সব মিলিয়ে কেন্দ্র যা টাকা দিচ্ছে, তার থেকে বেশি কর দিতে হচ্ছে তাদের।
সেই কারণে এই গড় ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে তেল সংস্থাগুলি। সামগ্রিক ভাবে গোটা দেশের জন্য হিসেব করার বদলে প্রতি রাজ্যের জন্য আলাদা আলাদা হিসেব করে কেন্দ্রের দেয় অংশ বাদ দিয়ে বাকি টাকা ক্রেতাদের কাছ থেকে আদায় করে নিতে চায় তারা। বুধবার মধ্যরাত থেকে চালু হওয়া এই ব্যবস্থায় এ রাজ্যে পেট্রোল বাড়ছে ২ টাকা ৫২ পয়সা, ডিজেল ৯২ পয়সা। আবার রান্নার গ্যাস ও কেরোসিনে দাম কমছে যথাক্রমে ৪ টাকা ও ৬ পয়সা। পশ্চিমবঙ্গের মতো পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়েছে সাত রাজ্যে। যার মধ্যে অন্যতম মহারাষ্ট্র। কিন্তু ওই একই সিদ্ধান্তে কর্নাটক, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশের মতো ১১ রাজ্যে কমছে তেলের দাম।
এ দিন বিকেলে দিল্লি থেকে কলকাতায় পা-দিয়েই পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির খবর শোনেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে তিনি মহাকরণে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা দিল্লিতেই ছিলাম (রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে), তবু আমাদের কিছুই জানানো হল না! ওরা ঠান্ডা ঘরে বসে একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এটা রাজনৈতিক সংঘাতের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এ সব করলে কিন্তু রাস্তায় নামতে এবং সংঘাতে যেতে বাধ্য হব।”
|
কলকাতার নতুন দর |
পেট্রোল
৭৬.১৩ (+২.৫২)
ডিজেল
৪৪.৬৬ (+০.৯২) |
রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার
৪০১ (-৪.০০)
|
কেরোসিন
১৪.৭৮ (-০.০৬) |
* টাকায় আইওসি-র দর |
|
২০০৩ সালের জানুয়ারিতে ‘ইরিকভারেবল ট্যাক্সেস কম্পেনসেশন স্কিম’ চালু করার সময়ই কেন্দ্র জানিয়েছিল, স্থানীয় করের হার বদলালে বা নতুন কর আরোপ হলে তা পরিশোধ করা হবে না। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন দাবি করেন, তাঁর সরকার পেট্রোপণ্যের দাম এক পয়সাও বাড়ায়নি। অতিরিক্ত করও চাপায়নি। অর্থাৎ, করের হার পরিবর্তন যা হওয়ার বাম আমলেই হয়েছে। একই সঙ্গে মমতার বক্তব্য, “৯ বছর আগের সিদ্ধান্ত কার্যকর যদি করতেই হয়, তবে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। তা না করে ভর্তুকি আচমকাই তুলে দিল কেন্দ্র। এর চাপ পড়বে সাধারণের ওপরে। এটা কি ক্যালিব্রেশন (পুনর্বিন্যাস), না পলিটিক্যাল ক্যালকুলেশন (রাজনৈতিক হিসেবনিকেশ)?” তিনি আরও বলেন, “আমাদের না-জানিয়ে, আলোচনা না-করে বারবার এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এমন হতে থাকলে (কেন্দ্রীয় সরকারে) আমাদের থেকে কী লাভ!”
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সেই চিঠিতে তিনি বলছেন, এই ভাবে তেলের দাম বাড়ানো অশোভন এবং অনভিপ্রেত।
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে এ দিন কেন্দ্রীয় সরকারকে ফের কাঠগড়ায় তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রতিদিন সকাল থেকে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়, কখন দাম বাড়ার খবর শুনতে হবে। এমনিতেই চার দিকে এত মূল্যবৃদ্ধি, লোকে শান্তিতে থাকতে পারছে না। তার ওপর দিল্লিতে ঠান্ডা ঘরে বসে যখন-তখন ওরা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছে।”
এ প্রসঙ্গেই মমতা জানিয়ে দেন, অনেক বিষয়েই কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর বিরোধ রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা অনেক দিন আগে থেকেই সেজ-এর (বিশেষ আর্থিক অঞ্চল) বিরোধী। কৃষকের চাষের জমি কেড়ে নেওয়ার বিরোধী। প্রভিডেন্ট ফান্ড খোলা বাজারে ছেড়ে দেওয়ার বিরোধী। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগেরও বিরোধী। আমরা বিদ্যুতের দাম বাড়াইনি। এ নিয়ে তো আমাদের কোনও দ্বিধা নেই। নির্বাচনী ইস্তাহারেই এ সব বলে দিয়েছি।” |