নিজস্ব সংবাদদাতা • রামপুরহাট |
দশ বছরের বালক ঋজু দফাদারকে খুনের দায়ে কারাদণ্ড হল পড়শি যুবক অভিজিৎ দফাদারের। বুধবার রামপুরহাট ফাস্ট ট্র্যাক প্রথম আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সুধীর কুমার খুন, অপহরণ, হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ ও প্রমাণ লোপের চেষ্টার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের এই নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রমাণ লোপের চেষ্টায় আরও তিন বছর কারাদণ্ড ও জরিমানার ৫০ শতাংশ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সব সাজা এক সঙ্গে চলবে। |
সাজাপ্রাপ্ত অভিজিৎ দফাদার। |
এ দিন রায় শুনে কেঁদে ফেলেন একমাত্র সন্তান হারা মা ময়ূরেশ্বরের সনকপুর গ্রামের বধূ সুলেখাদেবী। তিনি বলেন, “এই রায়ে আমি খুশি নই। ছেলে খুনে আসামীর আমি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলাম। কারণ, এ ভাবে ও যেন আর কোনও শিশুকে খুন করতে না পারে।”
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল ওই খুনের ঘটনা ঘটেছিল। সনকপুর গ্রামের হাজরাপাড়ার বাসিন্দা ঋজু বীরচন্দ্রপুর নিত্যানন্দ হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল। ওই দিন সাড়ে ১০টা-১১টার সময়ে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি ফিরছিল ঋজু। পথে পড়শি যুবক অভিজিতের সঙ্গে তার দেখা হয়। তখন অভিজিৎ তার মোটরবাইকে করে ঋজুকে বাড়ি পৌঁছে দেবে বলে। কোনও রকম দ্বিধা-সঙ্কোচ না করে ঋজু কাকুর বাইকে বসে পড়ে। কিন্তু তাকে বাড়ি না নিয়ে গিয়ে বীরচন্দ্রপুর গ্রাম লাগোয়া ফাঁকা মাঠে নিয়ে যায় অভিজিৎ। |
মামলার স্পেশাল পাবলিক প্রসিকউটর রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “তাকে ফাঁকা মাঠে নিয়ে গিয়ে অভিজিৎ যৌন নির্যাতন করে। ঋজু বাড়িতে সে কথা বলে দেবে বললে, অভিজিৎ পকেটে থাকা রুমাল দিয়ে ঋজুর গলায় জড়িয়ে খুন করে। পরে দেহটি মাঠের ছোট খালে ফেলে দিয়ে খড় চাপা দিয়ে দেয়।” এ দিকে ঋজু বাড়ি না পৌঁছলে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। ওই দিন ময়ূরেশ্বর থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও হয়েছিল। পরের দিন অভিজিতের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা রুজু হয়। ওই বছর ২৮ এপ্রিল পুলিশ অভিজিতকে গ্রেফতার করে।
তবে অভিজিৎকে জেরা করে মৃতদেহ তুলে গেলে ৫-৬টি গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। ঘটনায় কয়েক জন পুলিশকর্মীও আহত হন। এমন কী অভিজিতের বাড়িতে ভাঙচুরও করেন উত্তেজিত জনতা। রণজিৎবাবুও বলেন, “এই ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কী হতে পারে।” বুধবার ছেলের ছবি হাতে স্ত্রীর সঙ্গে আদালতে উপস্থিত ছিলেন কার্তিক দফাদার। তিনিও বলেন, “এই রায়ে আমরা খুশি নই।” |