প্রার্থিপদ ঘোষণার পর থেকেই আবেগ আর উচ্ছ্বাস চলছিল। বুধবার রাষ্ট্রপতি হিসাবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের শপথ গ্রহণের দিনও তার ব্যতিক্রম হল না। জেলার নানা প্রান্তে উৎসবে মাতলেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা তো বটেই, বহু সাধারণ মানুষও। দিনভর চলল শোভাযাত্রা থেকে মিষ্টি বিলি।
বুধবার সকাল থেকেই ‘প্রণব-উৎসবে’ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল নতুন রাষ্ট্রপতির জন্মভিটে মিরাটি এবং তাঁর দিদির বাড়ি কীর্ণাহারের পরোটা গ্রাম। স্থানীয় বাসিন্দারা আবির নিয়ে মেতে ওঠেন। প্রচুর বাজি পোড়ানো হয়। তবে সব চেয়ে বেশি উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে প্রণববাবুর ছেলেবেলার স্কুল কীর্ণাহার শিবচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ দিন স্কুলের ভিতরে লাগানো হয়েছিল বড় এলসিডি টিভি। সেখানে প্রণববাবুর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার দেখানো হচ্ছিল পড়ুয়াদের। |
কীর্ণাহার শিবচন্দ্র হাইস্কুলে তিনি পড়েছেন পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে
ঘুরেফিরে আসে এই স্কুলের কথা। শপথগ্রহণ উপলক্ষে স্কুলের প্রাক্তন ও বর্তমান পড়ুয়া মিলে প্রায়
৩ হাজার জনকে পাত পেড়ে খাওয়ানো হল। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি। |
বস্তুত, এ দিন সকাল থেকেই স্কুলে ছিল সাজো সাজো রব। স্কুলের বর্তমান ছাত্র, প্রাক্তন ছাত্র ও শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরা সমবেত হয়েছিলেন। স্কুল থেকে প্রণববাবুর দিদি অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি পর্যন্ত পথ পরিক্রমায় সামিল হন তাঁরা। স্কুলের এনসিসি ইউনিট ব্যান্ডে জাতীয় সঙ্গীত বাজাচ্ছিল। জাতীয় পতাকার সঙ্গে সঙ্গেই পড়ুয়াদের হাতে ছিল প্রণববাবুর ছবি ও কাটআউট। প্রণববাবুর রাষ্ট্রপতি পদে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে দুপুরেই স্কুলে প্রায় ৩ হাজার মানুষকে পাত পেড়ে খাওয়ানো হয়। শালপাতার থালায় একে একে পড়ল গরম ভাত, ডাল, আলুপোস্ত। এর পরেই মুরগির মাংস। শেষ পাতে মিষ্টি। বর্তমান ছাত্রদের পরিবেশন করলেন প্রাক্তনরা। আর প্রাক্তনদের বর্তমান। ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র নীলকান্ত দত্ত, সাধন ঘোষদের পাশাপাশি বর্তমান ছাত্র দশম শ্রেণির প্রবীণ দে, নবম শ্রেণির কিশোর মণ্ডলরা বলেন, “প্রণববাবু এই স্কুলের ছাত্র ছিলেন, ভাবতেই গায়ে শিহরণ জাগছে। অন্যের কাছে গর্ব করে বলতে পারব, দেশের রাষ্ট্রপতির স্কুলে আমরা পড়েছি।” পঞ্চম শ্রেণির জিৎ যশ, অষ্টমের প্রদীপ মণ্ডলদের কথায়, “বছরে একবার স্কুল থেকে বনভোজন হয়। প্রণববাবুর শপথগ্রহণ উপলক্ষে আরও একবার পিকনিকের স্বাদ পেলাম!” |
নতুন রাষ্ট্রপতির শপথগ্রহণ উপলক্ষে পুজো সাঁইথিয়া নন্দীকেশ্বরী মন্দিরে। ছবি: অনির্বাণ সেন। |
রাষ্ট্রপতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রণববাবুর প্রতি এলাকাবাসীর প্রত্যাশাও ঊর্ধ্বমুখী। দেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি তথা প্রাক্তন ছাত্রের প্রতি এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীলকমল বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিচালন সমিতির সম্পাদক প্রণবানন্দ দাসদের আবেদন, “আমরা চাই প্রণববাবু এক বার আমাদের স্কুলে আসুন। স্কুলের উদ্বৃত্ত ১০ বিঘা জমিতে এলাকার উন্নতির জন্য তিনি একটা কলেজ নির্মাণের ব্যবস্থা করুন।” স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি নাসিম-এ-আলম চান, “প্রণববাবু বছরে অন্তত দু’জন মেধাবী দুঃস্থ ছাত্রের বৃত্তির ব্যবস্থা করলে এলাকার গরিব ঘরের পড়ুয়ারা কমপক্ষে দ্বাদশ শ্রেণির পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারবে।”
মিরাটির বাসিন্দা গৌতম সরকার, মাধব দে-রা বলেন, “দেশের এক নম্বর ব্যক্তি আমাদের গ্রামেরই লোক, তা ভেবে গর্ব বোধ করছি।” এ দিন সকাল থেকেই হরি মন্দির, ঠাকুরঘর এবং টিভির সামনেই কেটেছে রাষ্ট্রপতির দিদি অন্নপূর্ণাদেবীর। শারীরিক কারণে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যেতে না পারার আক্ষেপও রয়েছে। অন্নপূর্ণাদেবী বলেন, “পল্টু আমাকে বলেছে, মন খারাপ কোরো না। শরীর ঠিক হলে আমি নিজে এসে আমাকে রাষ্ট্রপতি ভবনে নিয়ে যাব।” পরিবার সূত্রের খবর, প্রণববাবু পুজোর আগে একবার মিরাটি-কীর্ণাহারে আসতে চান। |
কীর্ণাহারে পড়ুয়াদের শোভাযাত্রার দর্শক দিদি অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি। |
অন্য দিকে, সাঁইথিয়ায় প্রণব-ঘনিষ্ঠ প্রয়াত জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীহার দত্ত-র ছেলে, কংগ্রেস নেতা সব্যসাচী দত্ত-র নেতৃত্বে স্থানীয় নন্দীকেশ্বরী মন্দিরে ত্রয়োদশ তম রাষ্ট্রপতি প্রণববাবুর জন্য পুজোর আয়োজন করা হয়। পুজো শেষে উপস্থিত সকলকে মিষ্টিমুখও করানো হয়। এ দিন প্রণববাবুকে শুভেচ্ছা জানাতে সাঁইথিয়া হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মীরা একটি বণার্ঢ্য শোভাযাত্রার বের করেছিলেন। এ দিকে সাঁইথিয়া অভেদানন্দ মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডি কলেজের বিগত প্রেসিডেন্ট তথা ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। সকলকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। বোলপুর এবং ইলামবাজারেও ব্লক কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রণববাবুর সম্মানে মিছিল হয়। |