মানকর হাসপাতাল
ওয়ার্ডেই ঘুরছে কুকুর, বিপর্যস্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা
হাসপাতাল চত্বরে ঘুরে বেড়াচ্ছে গরু, ছাগল, কুকুর। তাদের ভয়ে সিঁটিয়ে আছেন ভর্তি থাকা রোগীরা। মানকর গ্রামীণ হাসপাতালে গেলে এমন দৃশ্যই চোখে পড়বে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, ন্যূনতম পরিষেবা মেলে না এখানে। সমস্যা সমাধানে বিন্দুমাত্র উদ্যোগী নন হাসপাতাল সুপার বনানী রায়। যদিও বনানীদেবী অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গলসী ১ নম্বর ব্লকের এই গ্রামীণ হাসপাতালটিই একমাত্র ভরসা আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাদের। গলসি ১ ব্লক ছাড়াও আউশগ্রাম ১ ও ২ নম্বর ব্লক, কাঁকসা ব্লকের বাসিন্দারা চিকিৎসার প্রয়োজনে ওই হাসপাতালটিতে যেতে বাধ্য হন। তাঁদের দাবি, চিকিৎসাজনিত সুযোগ-সুবিধা ঠিকমতো পাওয়া যায় না এখানে। ডায়রিয়া চিকিৎসার জন্য ঘর তৈরি হলেও তা চালু করা হয়নি এখনও। রক্তের জোগানও মেলে না সবসময়। রোগীরা জানান, আগে এখানে বন্ধ্যাকরণ-সহ বেশ কিছু অস্ত্রোপচার হত। এখন তা বন্ধ। ইসিজি বা এক্সরেও প্রতিদিন হয় না। যিনি এই পরীক্ষাগুলি করেন তিনি প্রতিদিন আসেন না। বাইরে থেকে ইসিজি, এক্সরে করাতে হয় তাঁদের। রোগীদের আরও অভিযোগ, হাসাপাতাল চত্বরে শুয়োর থেকে গরু, ছাগল, কুকুর ঘুরে বেড়ায়। মাঝেমধ্যেই ওয়ার্ডে ঢুকে পড়ে তারা। ভর্তি থাকা রোগীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।
ছবি: বিশ্বনাথ মশান।
সুপার অবশ্য বলেন, “বাসিন্দাদের একাংশ এই হাসপাতালটিকে পশুপালন ক্ষেত্র মনে করেন। তারাই গৃহপালিত পশুদের এখানে ঢুকিয়ে দেন।” তাঁর কথায়, “হাসপাতালে গ্রুপ ডি কর্মীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তবুও যতটা সম্ভব নজর দেওয়া হয়। আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে এ’বিষয়ে নজর দেওয়ার অনুরোধ করেছি।”
অন্য দিকে, চিকিৎসা পরিষেবা সংক্রান্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বনানীদেবী বলেন, “প্রতিদিনই ইসিজি করা হয় এখানে। ফিল্মের অভাবে এখন এক্সরে বন্ধ আছে। বন্ধ্যাকরণের হার শীতকালেই বেশি।” বহির্বিভাগে রোগী কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তাঁর দাবি, আশপাশের পুরষা ওএ বননবগ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ভাল চিকিৎসা হওয়াতে রোগীদের একাংশ সেখানেই চিকিৎসা করাতে যাচ্ছেন। যদিও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবেই যে রোগীর সংখ্যা কমছে তা স্বীকার করেছেন সুপার। তিনি বলেন, “আগে এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তাঁরা থাকেন না। তাই রোগী আগের তুলনায় অনেক কমে গিয়েছে।” রক্তের অপ্রতুলতা নিয়ে তিনি জানান, শুধুমাত্র গর্ভবতী মহিলাদের রক্তের প্রয়োজন হলেই রক্ত দেওয়া যাবে। অন্যথায় কাউকে রক্ত দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই। বাসিন্দাদের একাংশের আবার দাবি, হাসপাতালে রাতে এক জন মাত্র হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক থাকেন। যদিও বনানীদেবীর দাবি, “রাতেএকজন অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকও থাকেন।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে বহির্বিভাগে ৬০০-র বেশি রোগী আসতেন প্রতিদিন। ভিড়ের চাপে ৩০ জনের বেডে ৬০ জনকেও রাখতে হত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। বহির্বিভাগে এখন সাকুল্যে ১৫০ জনও আসেন কিনা সন্দেহ। তাঁদের ক্ষোভ, হাসপাতালের চিকিৎসার মান তলানিতে ঠেকেছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের ব্যাপারে উদাসীন। অন্য দিকে, রোগীদের অভিযোগ, যেখানে সুপারের সপ্তাহে সাতদিনই হাসপাতালে থাকার কথা সেখানে তিনি শুধুমাত্র শনিবার সকাল থেকে রবিবার বিকাল পর্যন্ত থাকেন। অন্যান্যদিন তাঁকে হাসপাতালে পাওয়া যায় না। সুপার নিজের ইচ্ছামতো হাসপাতাল চালান। তাঁর ‘সদিচ্ছার অভাবেই’ হাসপাতালের বেহাল দশা। বনানীদেবীর অবশ্য দাবি, তিনি বেশিরভাগ দিনই হাসপাতালে থাকেন। তবে মাঝেমধ্যে স্বাস্থ্যভবন ও সিএমওএইচের সঙ্গে বৈঠক করতে যেতে হয় তাঁকে। একমাত্র তখনই হাসপাতালে থাকতে পারেন না তিনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.