প্রবন্ধ ২...
পাঁজি বলে কি বই নয়?
স্কুল থেকে ফেরার পর ছেলেটিকে তার মা বললেন, ‘খোকা আজ আর খেলতে বেরোস না। আজ তোর ছোট মামা সিউড়ি থেকে আসবে। বি এ অনার্স পাশ করেছে, কলকাতায় এম এ পড়ার জন্য আসবে।’
—‘ছোট মামা? সিউড়ি থেকে? তবে যে তাঁকে ও-বাড়িতে কাল বিকেলে দেখলাম!’ ছেলেটির গলায় বিস্ময়ের সুর।
—‘ও-বাড়ির ছোট মামা তোর নিজের মামা নয়। এ হল পল্টু, আমার নিজের ছোট ভাই।’
পরে মা-র (শ্রীমতী অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়) কাছে জানলাম, ও-বাড়ির ছোট মামারা বীরভূম জেলায় আমার মামার বাড়ি মিরাটি সংলগ্ন ব্রাহ্মণপাড়ার বিখ্যাত পণ্ডিত প্রয়াত বৃন্দাবন ভট্টাচার্যের বংশধর। প্রয়াত ভট্টাচার্য ছিলেন আমার মাতামহ, প্রয়াত কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে যে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়, তার পুরোহিত। বৃন্দাবন ভট্টাচার্যের পৌত্র প্রয়াত জগবন্ধু ভট্টাচার্য ছিলেন তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সহকারী সচিব। তিনি হাওড়ার কদমতলায় যে-বাড়িটি ভাড়া নেন, তারই লাগোয়া একটি ঘর আমার বাবা, প্রয়াত দুলালচন্দ্র  বন্দ্যোপাধ্যায় ভাড়া নেন। জগবন্ধু ভট্টাচার্যের ছেলে-মেয়েদের আমি ‘মামা’-‘মাসি’ বলে ডাকতাম। ‘ও-বাড়ি’র ‘ছোট মামা’ হলেন সেই মামা-মাসিদের এক জন।
যা-ই হোক, ঘটনার দিন সিউড়ি থেকে এলেন আমার নিজের ছোট মামা প্রণব মুখোপাধ্যায়। ২০/২১ বছরের ঝকঝকে যুবক। মাথাভর্তি কোঁকড়ানো চুল, বড় বড় চোখ, সরু করে ছাঁটা গোঁফ, গায়ের রং ধবধবে ফর্সা, পরনে লম্বা লম্বা স্ট্রাইপ দেওয়া শার্ট ও ধুতি, ধুতির কোঁচার একটা অংশ শার্টের বাঁ-দিকের পকেটে ঢোকানো। হাতে এক ঠোঙা চকলেট। ঠোঙাটি আমার হাতে দিলেন।
ওই বাড়ি থেকে কিছু দিনের মধ্যে আমরা আর একটা নতুন বাড়িতে উঠে এলাম। হাওড়ার কদমতলার ব্যাঁটরা থানার পিছনে ছিল বাড়িটি। মালিকের নাম শ্রীমতী সবিতারানি বসু। দীর্ঘ দু’দশকের বেশি এই বাড়িতে মামাদের সঙ্গে ছিলাম। এই বাড়ি থেকেই মামারা এবং পরে আমি এম এ পাশ করে চাকরিতে যোগ দিই। বড় (পুতুল) মাসি, মেজ (সতী) মাসিও ওই বাড়ি থেকে বিভিন্ন কাজে যোগ দেয়। দুই মামার বিয়ে হয় এই বাড়ি থেকে। ছোট মামার ছেলে বাবু (অভিজিৎ) বর্তমানে নলহাটির বিধায়ক ও মেয়ে মুন্নির (শর্মিষ্ঠার) জন্ম হয়। রাজনীতিতে মামার হাতেখড়িও এই বাড়ি থেকে।
কখনও কাছ থেকে, কখনও দূর থেকে, মামাকে যতটুকু দেখেছি, তাতে তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দুটো দিক সব চেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছে। সেগুলি হল কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা এবং বই-প্রেম। ২৪ ঘণ্টাও তাঁকে কাজ করতে দেখেছি। আর বই-প্রেম? একটি ছোট্ট ঘটনার কথা বলি। সত্তরের দশকের শেষের দিকের কথা। মামা গাড়িতে কাটোয়া হয়ে কলকাতা যাচ্ছেন। মাঝ রাস্তায় গাড়ি খারাপ। রাস্তার ধারে একটি চালাঘরে অপেক্ষা করতে থাকেন। একটু পরে চালাঘরের মালিককে জিজ্ঞেস করলেন, ঘরে কোনও বই-টই আছে কি না। পাঁজি ছাড়া আর কিছু নেই শুনে পাঁজিই পড়তে শুরু করে দিলেন। গাড়ি সারানো হলে মামা তাতে উঠে কিছু ক্ষণ যাওয়ার পরে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, মুলো, বাঁধা ও ফুলকপির ভাল ফলনের জন্য কী ধরনের সার ভাল, সেটা আমি জানি কি না। অজ্ঞতা জেনে বেশ গম্ভীর স্বরে একটা সারের নাম করে বললেন, ওই সার ব্যবহার করলে ওই সব্জিগুলির চাষ ভাল হয়। জানলাম, পাঁজিতে শাকসব্জির বিভিন্ন ধরনের সারের বিজ্ঞাপন পড়ছিলেন।
এই মানুষটি অতি সাধারণ অবস্থা থেকে আজ রাইসিনা হিলের অধিবাসী হতে চলেছেন। রূপকথাই যেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.