সম্পাদকীয় ২...
বিপন্নের পুনর্বাসন
শ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা হইতে বৃন্দাবনে বিধবার স্রোত কমে নাই, বরং বাড়িতেছে। এই দুইটি রাজ্যে সমাজ ও পরিবার যে অনাথা, পরিত্যক্তা, দুঃস্থ মেয়েদের প্রতি নিষ্করুণ, তাহার প্রমাণ মেয়েদের এই নির্বাসন। সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি এই বিষয়টির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া এই দুটি রাজ্যকে যথাযথ ব্যবস্থা লইবার নির্দেশ দিয়াছে। সমস্যাটির পরিসর বিস্তৃত। কেবল বৃন্দাবনেই নহে, একটি সমীক্ষায় প্রকাশ পাইয়াছে যে কালীঘাট, তারাপীঠ, দক্ষিণেশ্বর, ফুরফুরা শরিফ প্রভৃতি পশ্চিমবঙ্গের নানা তীর্থস্থানে বিধবা মহিলারা কোনও মতে জীবনধারণ করিতেছেন। তাঁহাদের অতি সামান্য অংশ ধর্মের টানে স্বেচ্ছায় ঘর ছাড়িয়াছেন, এমন মহিলাদের প্রধানত নবদ্বীপেই দেখা মিলিয়াছে। প্রায় সকল ক্ষেত্রে এই মহিলারা পরিবারের নিপীড়ন, অবমাননা, বা চরম দারিদ্রের শিকার হইয়া তীর্থক্ষেত্রগুলিতে কোনও মতে স্থান পাইয়াছেন। ভজন গাহিয়া, ভিক্ষা করিয়া অতি দীন জীবনযাপনের পর হীন মৃত্যুই তাঁহাদের ভবিতব্য। চটে মুড়িয়া নদীতে দেহ ভাসাইয়া তাঁহাদের অনেকের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। দেশের উচ্চতম আদালত আরও একটি কথা মনে করাইয়া দিয়াছে— সমস্যা তীব্র হইলেও তাহার সহজ কোনও সমাধান নাই। সরকার হইতে বিধবাদের ভাতা দিয়া দায় সারিবার প্রস্তাব আদালত মঞ্জুর করে নাই, যে হেতু এক শ্রেণির দালালরা ইহাদের শোষণ করিতে সিদ্ধহস্ত। কেবল টাকা দিয়া কাজ হইবে না, কোনও মতে একটি আশ্রয় তৈরি করিলেও নহে। বহু পথবাসিনী অতি বিপন্ন হইলেও সরকারি আবাসের গ্লানিময় পরিবেশে বাঁচিতে চাহেন না। অতএব মর্যাদাপূর্ণ জীবন কী করিয়া এই মহিলাদের দেওয়া যায়, কী করিয়া তাঁহাদের সমাজের মূলস্রোতে পুনর্বাসন করা সম্ভব, সে বিষয়ে রাষ্ট্রকে নূতন করিয়া ভাবিতে হইবে। বাঁধা দু-চারটি কাজের তালিকা হইতে কোনও একটি কি দুটি করিয়া ‘ওই অনেক হইয়াছে’ বলিলে চলিবে না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এই বার্তাই বহন করিতেছে।
এই রায়টির কেন্দ্রে বৃন্দাবন-নিবাসিনী বিধবারা রহিয়াছেন, কিন্তু পুনর্বাসনের সমস্যাটি কেবল তাহাদেরই নহে। অনাথ কিংবা নিরুদ্দিষ্ট শিশু, আইনভঙ্গকারী কিশোর, পাচার হওয়া বালিকা, মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী, ধর্ষণ বা পারিবারিক নির্যাতনের শিকার মহিলা, এমন বহু মানুষ পরিবারে স্থান না পাইয়া আতুর হইয়া ঘুরিয়া বেড়ান। সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি অপর একটি নির্দেশে বলিয়াছে যে, সকল পথবাসীর জন্য রাত্রির আবাসের ব্যবস্থা করিতে হইবে। রাজ্য এখনও সেই ব্যবস্থা করিয়া উঠিতে পারে নাই। রাত্রির আবাসের নানা হিসাব দাখিল করিতেছে বাস্তবের সহিত যাহার মিল অতি অল্প। সকল শ্রেণির আশ্রয়প্রার্থীকে নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়াই একটি জরুরি কাজ। কিন্তু তাহাই প্রধান কাজ নহে। সমাজ যাহাদের পরমুখাপেক্ষী করিয়া তুলিয়াছে, তাহাদের স্বনির্ভর, আত্মপ্রত্যয়ী করিয়া তোলা প্রয়োজন। দুঃখের বিষয়ে, এই দিকটি বর্তমানে উপেক্ষিত। এক দিকে মানসিক সুস্থতার জন্য পরামর্শ এবং চিকিৎসা, অন্য দিকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষানবিশির দ্বারা কর্মস্রোতে পুনর্বাসন, এই দুটির ব্যবস্থা না করিলে কোনও পুনর্বাসন প্রকল্প ফলপ্রসূ হইতে পারিবে না। এ রাজ্যের অনাথা বিধবাদের পূর্ণ নাগরিকের সম্মান দিতে হইবে। করুণাপ্রার্থী তাঁহারা নহেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.