নতুন বইপাগলের অপেক্ষায় রাইসিনা
প্রিয় বই দোকানে পেলে একসঙ্গে তিন-চার কপি কিনে নিতেন বুদ্ধদেব বসু। প্রিয়জনদের উপহার দেওয়ার জন্য নয়। বলতেন, ভাল বই একসঙ্গে অনেক কপি থাকলে বইয়ের তাকের শোভা নাকি বাড়ে!
এ ব্যাপারে বুদ্ধদেবের পদাঙ্কই অনুসরণ করেন ভাবী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রন্থ আমার কাছে বাইবেল। আমার কলকাতার বাসায় দু’সেট, এখানে (দিল্লি) তিন সেট, এমনকী গ্রামের বাড়িতেও একাধিক সেট তারাশঙ্কর গ্রন্থাবলী রয়েছে!”
শুধু তারাশঙ্কর গ্রন্থাবলীই যদি এতগুলো হয়, তা হলে আন্দাজ করাই যায় প্রণববাবুর বইয়ের সংগ্রহ ঠিক কতটা বড়। তালকাটোরা রোডের বাড়ি থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনে জিনিসপত্র সরানোর সময় মেয়ে শর্মিষ্ঠার সঙ্গত চিন্তা তাই বই নিয়েই। বলছেন, “যখন যে বই দরকার, সেটা না পেলেই বাবার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তাই ঠিকমতো সব নিয়ে যেতে হচ্ছে।” রাষ্ট্রপতি ভবনে সুবিশাল গ্রন্থাগার রয়েছে ঠিকই। কিন্তু শর্মিষ্ঠা জানাচ্ছেন, প্রণববাবুর নিজস্ব সংগ্রহ থাকবে তাঁর আলাদা স্টাডি এবং শোওয়ার ঘরে।
প্রবল ব্যস্ততা এবং জটিল রাজনৈতিক রোজনামচা থেকে অনেকটাই ‘মুক্ত’ প্রণববাবু এ বার পড়ার জন্য অনেক বেশি সময় পাবেন বলে আশা করা যায়। ইউপিএ-র দ্বিতীয় দফায় অজস্র মন্ত্রিগোষ্ঠীর চাপে নাজেহাল প্রণব এক বার বলেওছিলেন, “অন্য সব কিছু তা-ও চোখ বোলানোর সময় পাই। কিন্তু কবিতা পড়া আর হয়ে ওঠে না।”
শক্তি চট্টোপাধ্যায়, পূর্ণেন্দু পত্রীদের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এ বার সেই সুযোগ পাবেন কি না, সেটাই দেখার।
রাষ্ট্রপতি ভবনের গ্রন্থাগারের সিংহদরজা খুলে বোঝা যাচ্ছে, এ দেশে বইপাগল রাষ্ট্রপতির সংখ্যা খুব একটা কম নয়। প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদের শৈশব কেটেছিল মা কমলেশ্বরী দেবীর কাছে রামায়ণের গল্প শুনে। সেই থেকে আজীবন রামায়ণ-মহাভারতই ছিল তাঁর ‘স্টেপল রিডিং’। সংস্কৃত এবং ফারসি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেও প্রেসিডেন্সি কলেজে বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। মাস্টারমশাই তখন জগদীশচন্দ্র বসু এবং প্রফুল্লচন্দ্র রায়। সেখানে অসাধারণ ব্যুৎপত্তি দেখালেও যেই বুঝেছিলেন যে সাহিত্য-সমাজনীতিতেই তাঁর আসল টান, বিজ্ঞান ছেড়ে দিয়েছিলেন। প্রফুল্লচন্দ্র দুঃখ করে বলেছিলেন, “কেন তুমি এ ভাবে আমার ক্লাস করা ছেড়ে দিলে!”
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন আবার ডুবে থাকতেন রবীন্দ্রনাথে। কলকাতায় কবির ৭০তম জন্মদিন উপলক্ষে বক্তৃতায় রাধাকৃষ্ণন বলেছিলেন, “মহৎ সাহিত্যের এটাই প্রসাদগুণ, যে তার দ্যুতি রাজা বা সাম্রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি দিন টিঁকে থাকে।... হোমারের সমসাময়িক রাজনীতি আজ মুছে গিয়েছে, কিন্তু তাঁর গানগুলি এখনও অমর। রোমের অহঙ্কার ধুলিসাৎ, কিন্তু ভার্জিলের কবিতা আজও জীবন্ত। আমাদের নেতারা যখন বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাবেন, তখনও রবীন্দ্রনাথের গান আর কবিতা জীবনকে মধুময় করে রাখবে।” রাধাকৃষ্ণনের রাজনীতি-ঘেঁষা বক্তৃতাতেও ছড়িয়ে থেকেছে কালিদাস, ভবভূতি এবং উত্তর রামচরিত থেকে দেওয়া অজস্র উদ্ধৃতি। কালিদাসের রচনা হাতে ঘুমোতে যেতেন এই দার্শনিক। এই প্রসঙ্গেই বলা যায়, বার্ট্রান্ড রাসেলের ভক্ত ছিলেন আর এক রাষ্ট্রপতি জাকির হুসেন। এমনকী তাঁর একাধিক বই উর্দুতে অনুবাদও করেছেন। ইউরোপের দর্শন-অর্থনীতির নিমগ্ন পাঠক ছিলেন তিনি।
আজীবন বিজ্ঞানের ছাত্র এ পি জে আব্দুল কালাম। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ভবনে অবসরে তাঁর সঙ্গী ছিল তামিল কবি তিরুভাল্লুভারের কবিতা। প্রিয় বইয়ের একটা তালিকাও তৈরি করেছিলেন কালাম। যার মধ্যে তিরুভাল্লুভার ছাড়াও ছিল সিলভিয়া নাসিরের ‘গ্র্যান্ড পারসিউট’, মণি ভৌমিকের ‘কোড নেম গড’, জালালুদ্দিন রুমি-র (১৩ শতকের পারস্য কবি) কাব্যগ্রন্থ। চিরকুমার কালাম এক বার বলেছিলেন, “বই আমার কাছে চিরসুন্দর, বুদ্ধিদীপ্ত, মহৎ এক সঙ্গী।”
প্রণব মুখোপাধ্যায় সেই ধারাই বজায় রাখছেন। রাষ্ট্রপতি বদলাচ্ছে। বদলাচ্ছে না ‘সঙ্গী’!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.