যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁদের কেউ সফল হননি! যিনি পরীক্ষাই দেননি, তিনি সফল!
এমনই অদ্ভুত অভিযোগ উঠেছে নদিয়া জেলার কল্যাণীতে সাহায্যকারী অগ্নি নির্বাপক কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে। অসামরিক প্রতিরক্ষা ও দমকল মন্ত্রী জাভেদ খান এবং জেলাশাসক অভিনব চন্দ্র অভিযোগের তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে নদিয়ার অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের আধিকারিক অসীম বালার দাবি, অভিযোগ ভুল। চাকরিতে নির্বাচিতদের তালিকা তৈরির সময় ‘নিছক ভুল’-এর জেরে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়িয়েছে।
রাজ্য সরকারের অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতর দমকল এবং জরুরি পরিষেবার জন্য কলকাতা বাদে বাকি ১৮টি জেলায় সাহায্যকারী অগ্নি নির্বাপক কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই দফতর জানায়, যাঁদের অসামরিক প্রতিরক্ষার প্রশিক্ষণ নেওয়া আছে, কেবল তাঁরাই ওই পদে আবেদনের যোগ্য। তবে চাকরি হবে চুক্তি ভিত্তিতে। যাঁরা চাকরি পাবেন, তাঁদের এক বছর প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ২২ দিন করে কাজ দেওয়া হবে। বিনিময়ে তাঁরা দৈনিক ২৮৯ টাকা পাবেন। আবেদনকারীদের বয়সসীমা, ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা, উচ্চতা এবং ছাতির মাপও বেঁধে দেয় অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতর। কোন জেলায় কত জন কর্মী প্রয়োজন, তারও তালিকা তৈরি করে তারা। এই সমস্ত তথ্য জানিয়ে ওই দফতর কলকাতা বাদে বাকি ১৮টি জেলার জেলাশাসক তথা অসামরিক প্রতিরক্ষা নিয়ামককে চিঠি দেয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি। নদিয়ার কল্যাণীতে যাঁরা ওই পদের জন্য আবেদন করেছিলেন, তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা হয় গত ১৪ জুন। তাতে ২৪ জনকে ১৭ জুন লেখা-পরীক্ষার জন্য বাছা হয়। পরীক্ষাও হয়। ১৩ জুলাই নদিয়ার জেলাশাসকের দফতর থেকে চূড়ান্ত বাছাই তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, কল্যাণী মহকুমা থেকে মাত্র এক জন নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নাম আহমেদ হোসেন। অথচ, শারীরিক পরীক্ষার পর যে ২৪ জন লেখা-পরীক্ষার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছিলেন, তাঁদের তালিকায় হোসেনের নাম ছিল না! অর্থাৎ, চূড়ান্ত বাছাই তালিকায় কল্যাণী থেকে নাম উঠেছে মাত্র এক জনের, যিনি পরীক্ষাই দেননি! নদিয়ার জেলাশাসক গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রানাঘাটের মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়ে কল্যাণী মহকুমার জন্য ১৬ জন অসামরিক প্রতিরক্ষার প্রশিক্ষণপ্রাপ্তের নাম পাঠাতে বলেছিলেন। তা হলে কল্যাণীতে মাত্র এক জনকে নেওয়া হল কেন, সে প্রশ্নও উঠেছে।
কল্যাণীর যে ২৪ জন লেখা পরীক্ষায় ডাক পেয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম চন্দন মণ্ডল বলেন, “অন্যায় ভাবে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অসামরিক প্রতিরক্ষা ও দমকল মন্ত্রী জাভেদ খান, নদিয়ার জেলাশাসক এবং মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে অভিযোগ জানিয়েছি।” মন্ত্রীর বক্তব্য, “অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলাশাসক অভিনববাবুর কথায়, “অভিযোগ সত্য হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে নদিয়ার অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের আধিকারিক অসীমবাবু বলেন, “অন্যায়ের অভিযোগ ঠিক নয়। ওটা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি। আসলে বিতর্কিত নামটির পাশে এলাকার নাম কালিগঞ্জ হওয়ার কথা। ভুল করে কল্যাণী লেখা হয়েছে। কল্যাণীর এক জনও উত্তীর্ণ হননি।” |