বর্ষা আসতে না আসতেই ফের হয়রানি। কোথাও জল-কাদায় মাখামাখি আবার কোথাও রাস্তা জল থইথই। ছবিটা খাস বহরমপুরেরই।
দীর্ঘদিনের অবহেলায় সরেছে পিচের চাদর। রাস্তা যে কোনও কালে পিচ দিয়ে ঢালাই হয়েছিল তাও আর বোঝার উপায় নেই। কার্যত মাটির রাস্তাই হয়ে দাঁড়িয়েছে ভরসা। বহরমপুর লাগোয়া শ্রীগুরু পাঠশালা থেকে স্বর্ণময়ী বাজার পর্যন্ত ৪০ ফুট চওড়া দেড় কিলোমিটারের ওই সড়কই সুতির মাঠে যাওয়ার রাস্তা। অল্প বৃষ্টিতেই এবড়ো-খেবড়ো ওই রাস্তা জলকাদায় মাখামাখি। নিত্য ভোগান্তির মুখে পড়ছেন এলাকার বাসিন্দারা। একই হাল বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড চত্বরেরও। বর্ষার দোহাই দিয়ে বন্ধ রয়েছে পুর এলাকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সংস্কারের কাজও। চুঁয়াপুর রেলগেট থেকে স্বর্ণময়ী বাজার হয়ে বিদ্যাসাগর মূর্তির মোড় পর্যন্ত ‘ম্যাস্টিক’ রাস্তা তৈরির কাজ থমকে রয়েছে বৃষ্টির জন্যই। একই হাল মোহনের মোড় থেকে কৃষ্ণনাথ কলেজ পর্যন্ত রাস্তারও। বিবেকানন্দ মূর্তি থেকে জজ কোর্ট হয়ে নিমতলা মোড়, গোরাবাজার রাজা মিঞার মোড় থেকে বিবেকানন্দ মূর্তির মোড়, আইসিআই গলির রাস্তা সংস্কারের কাজও বৃষ্টিতে থেমে রয়েছে। বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “২৫টি ওয়ার্ডের বেশ কিছু জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই মত টেন্ডারের পরে ওয়ার্কঅর্ডারও দেওয়া হলেও ঠিকাদার সংস্থা বর্ষায় কাজ শুরু করতে পারছে না। তবে বৃষ্টি থামলেই সমস্ত বেহাল রাস্তার খানা-খন্দগুলি সংস্কার করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।” তা হলে বর্ষার আগেই বেহাল সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ হল না কেন? বিশেষ করে বানজেটিয়া সরকারি আবাসন ও বানজেটিয়া বন দফতর লাগোয়া রাস্তায় তো খানাখন্দ বৃষ্টিতে ডোবার তেহারা নিয়েছে। তৈরি হয়েছে মরণফাঁদ। প্রশাসন অবশ্য নির্বিকার। স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য অবিলম্বে ওই রাস্তা সংস্কারের দাবি তুলেছেন। |
বহরমপুর-জিয়াগঞ্জ রাজ্য সড়ক। —নিজস্ব চিত্র। |
কেন্দ্রীয় সরকারের বিআরজিএফ (ব্যাকওয়ার্ড রিজিওন গ্র্যান্ট ফান্ড) প্রকল্পের আওতায় পঞ্চাননতলা মোড় থেকে লালগোলা পর্যন্ত দু-চার কিমি অন্তর বাদ দিয়ে ২৪ কিমি রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হবে বলে জানান পূর্ত দফতরের (বহরমপুর ডিভিশন-২) নির্বাহী বাস্তুকার অর্জুন মণ্ডল। তিনি বলেন, “অনুমোদন পেতে দেরি হওয়ায় রাজ্য সড়কের কাজ থমকে ছিল। টেন্ডার পরে ওয়ার্কঅর্ডারও দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে ওই রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হবে।” ক্ষুব্ধ কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সোমেশ রায় বলেন, “এটা পুরসভার অপদার্থতা। শহরের বেশ কিছউ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বর্ষায় বেহাল হয়ে পড়েছে। রিকশা উল্টে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। রাস্তা সংস্কারের ব্যাপারে পুরসভার আগাম ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তারা তা করেনি। কেএন কলেজের সামনের রাস্তা, গোরাবাজার বাবুপাড়া, মানকুমারি রোড, স্বর্ণময়ী বাজারের রাস্তায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে ওই রাস্তা সংস্কারের প্রয়োজন।”
একই ভাবে সামান্য বৃষ্টিতেই বাসস্ট্যান্ডের সামনের রাস্তায় জল জমে থাকছে। নিত্যযাত্রী থেকে সাধারণ যাত্রীদের ওই জল-কাদা মাড়িয়ে বাসস্ট্যান্ডে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাঁদের। পুরপ্রধান বলেন, “বাসস্টান্ডের ওই রাস্তা মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের অধীনে রয়েছে। জেলা পরিষদ যদি ওই রাস্তা সংস্কারের উদোগী না হয়, তাহলেও আমরা ওই রাস্তা সংস্কার করে দেব।” জেলাপরিষদের সভাধিপতি পূর্ণিমা দাস অবশ্য বলেন, “সরকার কোনও খাতেই অর্থ বরাদ্দ করছে না। সমস্ত উন্নয়ন থমকে রয়েছে।” |