সরকারি ভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফল প্রকাশের আগে থেকেই আনন্দের আবহ ছিল জঙ্গিপুরে। সেই সঙ্গে কিছুটা বিষাদও। নিজের সংসদীয় এলাকায় প্রায়ই আসতেন সদা ব্যস্ত মানুষটি। তাঁকে কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছিল। এখন তিনি যেন অনেক দূরের কেউ হয়ে গেলেন।
বিধায়ক মইনুল হক বলেন, “আমাদের সঙ্গে তাই খুব তাড়াতাড়ি খুব ভাল সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল।” আর এক বিধায়ক ইমানি বিশ্বাসের কথায়, “প্রত্যন্ত এই এলাকার কথা তাঁর জন্যই দ্রুত সারা দেশের লোকও জানত। কথাটা কম নয়—খোদ প্রণববাবুর সংসদীয় কেন্দ্র। তাই একটা প্রচ্ছন্ন গর্বও হত।” মইনুল বলেন, “এখন খারাপ লাগছে, আমাদের সঙ্গে সেই সংযোগ সূত্রটা কমে যাবে।’’
রবিবার রঘুনাথগঞ্জে কংগ্রেস কর্মীরা ঢাক ঢোল সহ মিছিলও বার করেছেন। আবির ছড়ানো হয়েছে সর্বত্র। তবে সবই হয়েছে মাত্রা রেখে। বিধায়ক আখরুজ্জামানের কথায়, “আমরা গর্বিত।” |
কংগ্রেস কর্মীদের মনে যদিও হতাশাই কাজ করছে বেশি। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আলফাজুদ্দিন বলেন, “মাথার উপর থেকে ছাদ সরে গেল।” প্রকাশ সাহার কথায়, “রাজনৈতিক অভিভাবককে হারালাম আমরা।” কখনও বহুতলির বাসিন্দা এক কংগ্রেস কর্মী অসুস্থ শুনে তাঁদের দেখতে চলে গিয়েছিলেন। কখনও দলের কোনও পঞ্চায়েত প্রধানের সন্তানের বিয়েতে চলে গিয়েছেন সেখানে। রাইসিনা হিলসের বাসিন্দার কাছে কি এ বার অত সহজে যাওয়া যাবে? না কি তিনিই আসতে পারবেন? সাগরদিঘির কংগ্রেস নেতা রাজেশ ভকতের বাড়ি দু’বার গিয়েছেন প্রণববাবু। তাঁর কথায়, “জঙ্গিপুর ছিল পিছিয়ে পড়া একটা জায়গা। কিন্তু প্রণববাবুর জন্যই তা নজরে পড়ে সকলের। শুধু তাই নয়, অনেক সমস্যার সমাধানও হয়েছিল। হয়তো সব হয়নি, কিন্তু অনেকটাই করেছিলেন তিনি। এখন তো আবার সেই পুরনো দিনে ফিরে যেতে হবে।”
ডিএন কলেজের শিক্ষক সাধন দাসের অবশ্য বক্তব্য, “প্রথমবার সাংসদ হয়ে প্রণববাবু কিছু উন্নয়নের কাজ করলেও পরের তিন বছর প্রায় কিছুই করেননি।” সাগরদিঘির পরিতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল তাঁকে ঘিরে, তা পূরণ হয়নি।” আরএসপি’র জানে আলম মিঞার বক্তব্য, “কাজের মানুষ বলে তিনি পরিচিত। কিন্তু এখানকার জন্য কোনও কাজই তিনি করেননি।” তবে গত বারে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “এখন তিনি রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন, তাই তাঁকে নিয়ে কোনও বিতর্কই আর উচিত নয়।” |