আর এক বাঙালির স্বপ্নসূচনা
টাইগারের ‘চিপ’ দেখেই স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল অনির্বাণের
খমলের মতো সবুজ কোর্স, কিন্তু সব সময়ই বইছে বেসামাল হাওয়া। স্ট্রোকের সামান্যতম ভুলচুকে বল চলে যাবে এ দিক-ওদিক। ব্রিটিশ ওপেন বলে কথা। বিশ্ববিখ্যাত গল্ফারদের চাঁদের হাট। অ্যাডাম স্কট, গ্রেম ম্যাকডাওয়েল, টাইগার উডস, সদ্য স্কটিশ ওপেন জিতে ওঠা জীব মিলখা সিংহ, কে নেই সেখানে?
১৪১ বছরের টুর্নামেন্ট, আভিজাত্য ও ঐতিহ্যে ব্রিটিশ ওপেন গল্ফারদের কাছে শীর্ষস্থানীয়দের মধ্যে অন্যতম। আর সেই টুর্নামেন্টেই কি না বিশ্বের ২২৬ নম্বর গল্ফার এবং এত বড় টুর্নামেন্টে প্রথমবার অভিষেক হওয়া ২৫ বছরের ভারতীয় অনির্বাণ লাহিড়ি নয় নম্বর ‘হোল’-এ করে ফেললেন অভাবনীয় ‘হোল ইন ওয়ান’। তাঁর মারা স্ট্রোক প্রায় ১৬৫ গজ উড়ে গিয়ে পড়ল একেবারে নয় নম্বর গর্তে। এ বারের ব্রিটিশ ওপেনের প্রথম ‘হোল ইন ওয়ান’। ভারতে ক্রিকেটারদের বাদ দিলে সাইনা নেহওয়াল ও জীব মিলখা সিংহের পরে অনির্বাণ তৃতীয় ভারতীয় ক্রীড়াবিদ, যিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এত বড় টুর্নামেন্টে খেললেন। ৮৪ জনের মধ্যে অনেক তারকা গল্ফারকে টপকে ৩১তম হয়েছেন অনির্বাণ। ওপেন জিতেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এর্নি এলস। জীব মিলখা সিংহ ৬৯।
শনিবার রয়্যাল লিথ্যাম সেন্ট অ্যানের বিখ্যাত গল্ফ কোর্সে বেঙ্গালুরু নিবাসী বারেন্দ্র ব্রাক্ষ্মণ বঙ্গসন্তান যখন অবিশ্বাস্য কাণ্ডটি ঘটাচ্ছেন, ভিআইপি গ্যালারি ফেটে পড়ছিল তুমুল উচ্ছাসে। আর সেখানে আনন্দাশ্রুতে ভাসছিলেন অনির্বাণের বাবা ডাক্তার কর্নেল তুষার লাহিড়ি। যিনি ছেলের দিকে ছুঁড়ে দেন উড়ন্ত চুমু। যা নিয়ে অভিভূত অনির্বাণ বলেছেন, “নিজেকে কী ভাবে প্রকাশ করব বুঝতে পারছিলাম না। এই সব মুহূর্ত জীবনে রোজ রোজ ঘটে না।”
‘হোল ইন ওয়ান’-এর পথে অনির্বাণ।
কী ভাবে সম্ভব হল অবিশ্বাস্য ‘হোল ইন ওয়ান’? যে অনির্বাণ এর আগে মাত্র দুটো এশীয় ট্যুর খেতাব জিতেছেন? “ক্লাবগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে নাইন আয়রন বেছে নিয়েছিলাম। সুইংটা খুব ভাল হয়েছিল। মনে হচ্ছিল, বলটা হোলের ডান দিকে চলে যাচ্ছে। কিন্তু ঠিক জায়গায় বলটা ড্রপ পড়ে। ফ্রেন্ডলি বাউন্স বলতে পারেন। বলটা একেবারে গর্তে গিয়ে থামল। জীবনের সেরা মুহূর্ত,” বলেছেন অনির্বাণ। যিনি জানাচ্ছেন, তিন নম্বর হোলে টাইগার উডসের নিখুঁত ‘চিপ’ দেখে তাঁর স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল। “টাইগারকে অত কাছ থেকে দেখাটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা। ওর চিপগুলো দেখে মনে হচ্ছিল, আমিও তো এ ভাবে ভাবতে পারি। স্বপ্ন দেখতে পারি।”
বাবা সেনাবাহিনীর কর্নেল ছিলেন, কঠোর নিয়মানুবর্তিতার বৃত্তে বেড়ে ওঠা। আট বছর বয়সে বাবার হাত ধরে প্রথমবার গল্ফ কোর্সে ঢোকা, কিন্তু বয়স পনেরো হওয়ার আগে জুনিয়র সার্কিটে সে ভাবে চোখে পড়েননি অনির্বাণ। ২০০৬ এশিয়ান গেমসে রুপোজয়ী দলের সদস্য। ২০০৯-এ পেশাদার হওয়া এবং পিজিটিএ অর্ডার অব মেরিট পাওয়া। দুটো এশীয় খেতাবের মধ্যে একটা প্যানাসনিক ওপেন আর সেইল-এসবিআই গল্ফ।
গত দু’তিন বছরে ভারতীয় গল্ফাররা বিশ্বসেরাদের সঙ্গে কাঁধ ঘষাঘষি করে সাফল্য পাচ্ছেন। জীব মিলখা সিংহ, অর্জুন অটওয়াল, জ্যোতি রণধাওয়া, গগনজিৎ ভুল্লার, রাহুল গাঞ্জির সঙ্গে রয়েছেন কলকাতার শিবশঙ্কর প্রসাদ চৌরাসিয়া। নতুন সংযোজন অনির্বাণ। সদ্য স্কটিশ ওপেন জেতা জীব বলছেন, “ও ভারতীয় গল্ফের ভবিষ্যৎ। দিনে বারো ঘণ্টা গল্ফের জন্য দিয়েও ক্লান্ত হয় না। খুব তাড়াতাড়ি ও কোনও মেজর জিতলে আমি অন্তত চমকে উঠব না।” ভোরে উঠে নিয়মিত যোগাসন দিয়ে দিন শুরু হয় আর সেটাই নাকি কোর্সে একাগ্র থাকার রহস্য। এ ছাড়া ভাল লাগা বলতে গান আর টাইগার উডস।
২০১২-তে দেশের সর্বোচ্চ পদে যে দিন বাঙালির অভিষেক, তার ঠিক আগের দিনই লিথ্যাম সেন্ট অ্যানসের কোর্সে ইতিহাস আর এক বাঙালির। অভিষেকেই যিনি ব্রিটিশ ওপেনে সাড়া ফেলতে পারেন, তাঁকে নিয়ে তো স্বপ্ন দেখাই যায়। এটা তো মহড়া মাত্র!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.