বিপাশা, কর্ণ, লক্ষ্মী, নকুল ও সহদেবের পরে শুক্রবার দশরথের খাঁচা ফাঁকা হয়েছে। ওই খাঁচাগুলি কখনও পূরণ হবে কিনা খয়েরবাড়ির বনকর্মীদের কেউ জানেন না। একের পর এক রয়্যাল বেঙ্গলের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ায় তাঁরা বিষন্ন হয়ে পড়েছেন। যে পাঁচটি বাঘ এখন রয়েছে তার কতদিন থাকবে সেটা ভাবতে বিচলিত হয়ে পড়ছেন অনেকে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, খুব বেশি হলে ওই বাঘগুলি তিন বছর টিকতে পারে। এর পরে কী সেখানে পর্যটকরা ভিড় করবেন, সেই প্রশ্নেই উদ্বিগ্ন বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা। সমস্যার সমাধানে কমিটির তরফে রাজার মত সুন্দরবনের অসুস্থ রয়্যাল বেঙ্গল খয়েরবাড়িতে নিয়ে আসার জন্য বন দফতরের কর্তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। বন সুরক্ষা কমিটির সঙ্গে একমত রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্য প্রাণ) সীতাংশু শেখর মণ্ডল। তিনি বলেন, সার্কাসের “বাঘগুলি বড় জোর বছর তিনেক বাঁচবে। সুন্দর বনে অসুস্থ বাঘ উদ্ধারের পরে দেখা যায় বনে ছাড়া ঠিক হবে না তবে ওই বাঘকে খয়েরবাড়িতে রাখা যেতে পারে।” তিন বছর আগে অসুস্থ অবস্থায় সুন্দরবন থেকে উদ্ধার করা রাজার পিছনের একটি পায়ের কিছু অংশ সংক্রমণের জন্য কেটে বাদ দেন চিকিৎসকরা। ওই অবস্থায় রাজার পক্ষে বনে ঘুরে শিকার করা সম্ভব নয়। তাই তাকে খয়েরবাড়িতে রাখায় হয়। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সিংহ, বাঘের খেলা নিষিদ্ধ হওয়ার পরে সার্কাস কর্তৃপক্ষ রয়্যাল বেঙ্গল গুলিকে নিজেদের বাগানবাড়িতে রেখে দেন। বাঘেদের খাবার জোটাতে হিমসিম দশা হয় তাঁদের। সার্কাস মালিকদের একাংশ বাঘগুলিকে বসিয়ে খাওয়াতে রাজি ছিলেন না। কয়েক দফায় আলোচনার পরে অবশেষে রাজ্য বন দফতর বাঘগুলি উদ্ধার করে খয়েরবাড়ি রেসকিউ সেন্টারে নিয়ে যায়। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালে বিভিন্ন সার্কাস কোম্পানির বাগানবাড়ি থেকে ১৮টি বাঘ নিয়ে আসা হয় ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রে। সহজে বাঘ দেখবার সুযোগ মেলায় সেখানে পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে। ফলে স্থানীয় বনবস্তির বাসিন্দারা বিকল্প রোজগারের পথ খুঁজে পায়। খয়েরবাড়ির এক বন কর্মীর কথায়, “বনে ঘুরে চিতাবাঘের খোঁজ মিললেও রয়্যাল বেঙ্গলের দেখা মিলবে না। এখানে সেই সুযোগ রয়েছে। তাই পর্যটকরা ভিড় করেন।”
এখন খয়েরবাড়িতে রাম, শ্যাম, সীতা, রাজা, যমুনা নামে ৫টি বাঘ রয়েছে। তার মধ্যে রাম ও সীতার বয়স ১৯। শ্যামের বয়স ১৪ বছর। বয়সের কারণে ওদের দাঁত খয়ে যাচ্ছে। তাই প্রতিদিন বরাদ্দ ৮ কেজি মাংসের মধ্যে ৬০ শতাংশ হাড় ছাড়া দেওয়া হচ্ছে। অসুস্থ না হলেও বয়সজনিত কারণে ওই বাঘগুলি যে কোনও দিন মারা যেতে পারে বলে মনে করছেন জলদা পাড়ার প্রাণী চিকিৎসক অশোককুমার সিংহ। তিনি বলেন, “বাঘের গড় আয়ু ১৪ বছর। খয়েরবাড়ির প্রতিটি বাঘ গড় আয়ু পার করেছে। এখন ওরা সুস্থ রয়েছে। তবে যে কোনও দিন অসুস্থ হয়ে মারা যেতে পারে। |