মার্বেল প্যালেস সম্পর্কে রীতা বসুর (১৬-২) মন্তব্যের প্রতিবাদে ইন্দিরা মল্লিকের লেখা চিঠিটি (১১-৬) পড়লাম। ভারতে মার্বেল প্যালেসের মতো এত বড় মিউজিয়াম খুব কম জায়গাতেই আছে। কিন্তু অদ্ভুত লাগে, এই ঐতিহ্যপূর্ণ প্যালেসে ঢুকতে গেলে পর্যটন ব্যুরো থেকে অনুমতিপত্র নিতে হয়। যাদের প্যালেসের ভিতরে বা বাইরে কোনও অফিস নেই, প্যালেসে ঢোকার জন্য প্যালেসের মধ্যেই কাউন্টার থাকলে সাধারণ মানুষের কত উপকার হয়। এই জটিল পদ্ধতির জন্য ভারতের জনসাধারণ এই বিশাল মিউজিয়াম দেখতে পায় না।
ভারতের যেখানে যেখানে এই রকম বাড়ি আছে, সেখানে ঢুকতে গেলে প্যালেস-লাগোয়া কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। কিছু দিন আগে মাইসোর প্যালেস দেখে এলাম। |
সেটাও ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এমনকী পশ্চিমবঙ্গে হাজারদুয়ারী, ভিক্টোরিয়া বা কোচবিহার পালেস দেখতে গেলেও প্যালেস-লাগোয়া কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। কিন্তু মার্বেল প্যালেসে ঢুকতে গেলে প্যালেস-লাগোয়া কোনও কাউন্টার নেই। তাই এত হয়রানি।
আমি ইন্দিরাদেবীকে অনুরোধ জানাচ্ছি মার্বেল প্যালেস যদিও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন, তবুও এই বিশাল প্যালেসের রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য আর্থিক সাহায্য দরকার। আর সেটা যদি জনসাধারণের কাছ থেকে পাওয়া যায়, তা হলে ক্ষতি কী? জনসাধারণও প্যালেসের সামনে টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে প্যালেসে ঢুকে এই মূল্যবান মিউজিয়াম দেখে হতবাক হয়ে যাবেন। সারা ভারতের লোক কিন্তু এই সরল ব্যবস্থায় উপকৃত হবেন। আমারও এই প্যালেস দেখার সৌভাগ্য আবারও হবে। তাই মার্বেল প্যালেসে ঢোকার জটিল পদ্ধতি সরলীকরণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি ইন্দিরাদেবীকে।
দিলীপকান্তি বসুচৌধুরী। আসানসোল
|
বিকাশ সিংহ মহাশয় ‘বিক্ষুব্ধ ধরণী’ (১৭-৬) প্রবন্ধে লিখেছেন: “...১৭৮০ সালে জেমস ওয়ট আবিষ্কার করলেন রেলগাড়ি, জলের বাষ্পে এঞ্জিন চলতে আরম্ভ করল।” কিন্তু রেলগাড়ি আবিষ্কার করেছিলেন ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার জর্জ স্টিফেনসন (৯ জুন ১৭৮১-১২ অগস্ট ১৮৪৮)। ১৮২০ সালে। স্কটিশ ইঞ্জিনিয়ার জেমস ওয়ট (১৯ জানুয়ারি ১৭৩৬-২৫ অগস্ট ১৮১৯) বাষ্পচালিত ইঞ্জিনকে উন্নত করেছিলেন। সেটা ১৭৭৬ সালের কথা।
স্বপনকুমার দে। শিক্ষক, বাংলা বিভাগ,
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা-৭৩
|
সত্যেন্দ্রনাথ বসু একজন উচ্চমার্গের শ্রদ্ধেয় মানুষ। ৫ নং ঈশ্বর মিল লেনের বাড়িটাতে গেলে বোঝাই যেত না যে, এখানে কত বিখ্যাত মানুষের আগমন ঘটেছে বছরের পর বছর। পাড়ার লোকে সত্যেন্দ্রনাথকে ভগবান মনে করতেন। একবার ওঁর সঙ্গে ওঁর গাড়িতে করেই একটা সভায় যাচ্ছি। রাস্তায় চলতে চলতে একটি যুবক আমাদের গাড়ির সামনে এসে পড়ল। গাড়িটা থেমে গেল। যুবকটি রেগে গিয়ে গাড়ির ড্রাইভার ও আরোহীদের গালাগাল করতে লাগল। বোঝা গেল, যুবকটি স্থানীয় নয়। ঘটনাটি ঘটতেই পাড়ার অসংখ্য মানুষ রে-রে করে ছুটে এলেন। যুবকটির জীবনসংশয়। অবস্থা সামাল দিতে সত্যেন্দ্রনাথ গাড়ি থেকে নামলেন ও যুবকটিকে গণধোলাইয়ের হাত থেকে বাঁচালেন।
সত্যেন্দ্রপুত্র রথীন্দ্রনাথ শিবপুর বি ই কলেজে আমার সহপাঠী ছিলেন। কলেজে ভর্তি হওয়ার দিনটিতে আমাদের হস্টেলে (ব্যারাক) সত্যেন্দ্রনাথ এসেছিলেন পুত্রের সঙ্গে। মাঠে বসে আমাদের সঙ্গে অনেক গল্প করলেন। |
পরবর্তী জীবনে অনেক ভাবে আমরা পেয়েছি সত্যেন্দ্রনাথকে। আমরা ‘বাংলা প্রবর্তন সমিতি’ নাম দিয়ে একটা মঞ্চ গড়েছিলাম। তার সভাপতি ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু এবং অন্যতম সম্পাদক ছিলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। আমার ১ নং গারস্টিন প্লেসের অফিসে ওই সংস্থার অনেক মিটিং হত। আমরা আচার্য সত্যেন্দ্রনাথকে নিয়ে অনেক জায়গায় গেছি সভা করতে। তখন এক বারও মনে হত না, তাঁর ও আমাদের মধ্যকার উচ্চতার পার্থক্যটা।
ঈশ্বর মিল লেনে শনিবার বিকেলের আসরে গিয়ে আমি অনেক দিনই ঘুগনি খেয়েছি। খুব স্বাভাবিক ভাবেই সতেন্দ্রপুত্র রথীন বলতে পেরেছেন যে, বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিবারের অন্যদের বিজ্ঞান বিষয়ে সমালোচনার অবকাশ ছিল না। নামকরা বিজ্ঞানীরাই থাকতেন আচার্যের সঙ্গে বিজ্ঞান বিষয়ে আলোচনা করতে।
তাই ‘ঈশ্বর কণা’র আবিষ্কারের ‘গৌরবার্থে’ বসু পরিবার তাঁদেরকে শামিল করেননি। সত্যেন্দ্রনাথ বসু নিজের আলোতেই সমুজ্জ্বল ছিলেন। ঈশ্বর কণার আবিষ্কারের সঙ্গে তাঁর নামটিকে প্রকারান্তরে যুক্ত করবার প্রয়াসে ঈশ্বর মিল লেনের ঐতিহ্যপূর্ণ বাড়িটিকে টুনি বাল্ব দিয়ে সাজানোর প্রয়োজন পড়েনি।
শিশিরকুমার নিয়োগী। সল্টলেক, কলকাতা-৯১ |