কর্নাটকে ভোট পেলেন বিজেপি বিধায়কদেরও |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জোটসঙ্গীদের ধরে রাখতে না পারায় আগেই মুখ পুড়েছিল বিজেপির। আজ আর একবার মুখ পুড়ল তাদের। গত কয়েক বছর ধরে যে রাজ্যটি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সবথেকে বেশি বেগ দিয়েছে, আজ রাষ্ট্রপতি ভোট গণনার সময় দেখা গেল, নিতিন গডকড়ীর নেতৃত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলে সেই কর্নাটকেই এক ডজনের বেশি বিজেপি বিধায়ক প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ভোট দিয়েছেন!
কর্নাটকে ‘ক্রস ভোটিং’-এর খবর আসার পরেই দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার জন্য নিতিন গডকড়ী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন।
তবে বিজেপি নেতারা মেনে নিচ্ছেন, এটি তাঁদের কাছে বড়সড় ধাক্কা।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নীতীশ কুমার, বাল ঠাকরে, শিবু সোরেনের মতো জোটসঙ্গীদের এমনিতেই ধরে রাখতে পারেননি বিজেপি নেতৃত্ব। এ বারে নতুন সঙ্কট তৈরি হল। কর্নাটকে নেতৃত্ব পরিবর্তন করেও যে সেখানকার সঙ্কট মেটেনি, এখনও যে কর্নাটকের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে চাইছেন, রাষ্ট্রপতি ভোটে তা প্রমাণিত হওয়ায় নড়েচড়ে বসতে হচ্ছে গডকড়ীদের।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “রাষ্ট্রপতি নির্বাচনটিকে কেন্দ্র করে দল প্রথমে লোকসভা ভোটের একটি মহড়া সেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু কোনও কৌশলই কাজে এল না। নবীন পট্টনায়ক ও জয়ললিতার মতো অ-কংগ্রেসি দুই অতিথিকে বরণ করতে গিয়ে পুরনো সঙ্গীরাই দূরে চলে গিয়েছেন।” যার ফলে লোকসভার আগে যে বৃহত্তর এনডিএ গড়ার স্বপ্ন দেখছিলেন বিজেপি নেতারা, তা এখন বিশ বাঁও জলে। তার উপর কর্নাটকের ঘটনা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে এমনিতেই এনডিএ জোটে ভাঙন ধরাতে পেরেছিল কংগ্রেস। এ বারে তারা হানা দিল বিজেপির ঘরেও।
বিকেল চারটে নাগাদ কর্নাটকের বিধায়কদের গণনা সম্পূর্ণ হয়। তার পরেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট তথা সংসদীয় মন্ত্রী পবন বনশল উল্লসিত হয়ে গণনা কেন্দ্র থেকে ছুটে বাইরে এলেন। প্রথম ফোনটিই করলেন প্রণববাবুকে। তাঁকে সবিস্তার জানানোর পরে সাংবাদিকদের বলেন, “এই ফল অপ্রত্যাশিত!” রাজীব শুক্লের মতে, “রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি লোকসভার মহড়া দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এই মহড়ায় এগিয়ে থাকল কংগ্রেসই! এই নির্বাচনের মাধ্যমে লোকসভার নতুন সমীকরণ তৈরির ক্ষেত্রে আমাদের সামনে অনেক পথ খুলে গেল।” শুক্লের ব্যাখ্যা, বিহারে নীতীশ কুমার, ঝাড়খণ্ডে শিবু সোরেন-আজসু, মহারাষ্ট্রে শিবসেনা রাষ্ট্রপতি ভোটে সকলেই কংগ্রেসের সঙ্গে থেকেছে। বিজেপি অন্ধ্রপ্রদেশে জগন্মোহনের দলের সমর্থনের প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু তারাও প্রণববাবুকে ভোট দিয়েছে। তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি বা তেলুগু দেশম ভোটদানে বিরত থেকে ইউপিএ-র প্রার্থীকেই সুবিধা করে দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পূর্ণ সাংমাকে বাদ দিয়ে শেষ পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন প্রণববাবুকে।
বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, এনডিএ-র বিস্তারের থেকে নিজেদের ঘর সামলানোই এখন তাদের সামনে বড় কাজ। এমন নয়, অন্য রাজ্য থেকে বিজেপি সমর্থিত প্রার্থী পূর্ণ সাংমা ক্রস ভোটের মাধ্যমে বাড়তি কিছু পাননি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে অপ্রত্যাশিত ভাবে তিনটি ভোট ছাড়াও রাজস্থান, জম্মু-কাশ্মীর, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, ত্রিপুরা এবং হরিয়ানা থেকে বাড়তি কিছু ভোট পেয়েছেন সাংমা। হিসেব করে দেখা যাচ্ছে, যে ৮১টি ভোট বাতিল হয়েছে, তার সিংহভাগই কংগ্রেসের। অর্থাৎ এতে পরোক্ষে সুবিধা হতে পারত সাংমারই।
কিন্তু সব হিসেব গুলিয়ে দিয়েছে কর্নাটকের ক্রস ভোট। দক্ষিণে দখল করা বিজেপি-র প্রথম রাজ্য কর্নাটক থেকে প্রণববাবু যে ভাবে সাংমার থেকে বেশি ভোট পেলেন, তাতে রীতিমতো স্তম্ভিত দলীয় নেতৃত্ব। বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নকভি বলেন, “খুব শীঘ্রই এই বিষয়টি অনুসন্ধান করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।” তবে তাতে কতটা কাজ হবে, সংশয় রয়েছে দলের মধ্যেই। |