সাংমার পক্ষে এ রাজ্যের তিন বিধায়ক, সন্দেহ তুঙ্গে
দেশের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পথে সামান্য ‘কাঁটা’ থেকে গেল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নিজের রাজ্য থেকেই! পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাষ্ট্রপতি ভোটে অংশগ্রহণকারী সব দলের ‘ঘোষিত সমর্থন’ ছিল প্রণববাবুর দিকেই। কিন্তু ভোট-গণনার পরে দেখা গেল, প্রণববাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী পূর্ণ অ্যাজিটক সাংমা এ রাজ্যের তিন বিধায়কের সমর্থন পেয়েছেন! হিসাবমতো রাজ্যের ভোটদানকারী ২৮২ জন বিধায়কের ভোটই যাওয়ার কথা প্রণববাবুর ঝুলিতে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোট যে হেতু গোপন ব্যালটে হয়, তাই কোন পক্ষের তিন জন ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করলেন তা নিয়ে সন্দেহ এবং চাপানউতোর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। তৃণমূলের সন্দেহের তির সিপিএমের দিকে। বামেদের সংশয় আবার তৃণমূলকে নিয়ে!
পশ্চিমবঙ্গের মতোই পরিস্থিতি ছিল কেরলে। সে রাজ্যের সবক’টি ভোটই প্রণববাবু পেয়েছেন। একই রকম ঘটনা পশ্চিমবঙ্গেও ঘটবে বলে আশাবাদী ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু রবিবার ব্যালট-বাক্স খুলে দেখা গিয়েছে, এ রাজ্য থেকে যে ২৮২ জন বিধায়ক ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে চার জনের ভোট ‘অবৈধ’ বলে গণ্য হয়েছে। বাকিদের মধ্যে ২৭৫ জনের (অর্থাৎ ৪১ হাজার ৫২৫ ভোট) সমর্থন পেয়েছেন প্রণববাবু এবং সাংমা পেয়েছেন তিন জনের ভোট (অর্থাৎ ভোটমূল্যে ৪৫৩)। প্রসঙ্গত, রাজ্যের মোট ২৯৮ জন বিধায়কের মধ্যে সিপিআই, আরএসপি এবং এসইউসি মিলিয়ে ১০ জন ভোটদানে বিরত ছিলেন। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তৃণমূলের দু’জন বিধায়ক ভোট দিতে আসেননি।
কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবের প্রতিক্রিয়া, “নিজেই বুঝতে পারছি না, কী হল! স্রেফ ভুল না ইচ্ছাকৃত, কিছুই বুঝতে পারছি না! আশ্চর্য হচ্ছি, কী ভাবে এমন হল! আমরা ভেবেছিলাম, সাংমা এখানে একটাও ভোট পাবেন না। কী করে যে তিন জনের ভোট পেয়ে গেলেন, বুঝতে পারছি না।!
তৃণমূল এবং সিপিএম শিবিরের অবশ্য সন্দেহ পরস্পরের দিকে। এমনকী, কংগ্রেসের দিকেও আঙুল তুলতে ছাড়ছে না তৃণমূল শিবির। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, তাঁদের দলের সকলেই প্রণববাবুকে ভোট দিয়েছেন। ‘কিছু’ হলে বামফ্রন্ট বা কংগ্রেসের দিক থেকে হয়ে থাকতে পারে। তবে তৃণমূলের তরফে প্রকাশ্যে কেউ এই নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র সিপিএমের পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শেষে রাতে দিল্লি থেকে কলকাতার বিমান ধরেছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে সিপিএমের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুর রহমানের বক্তব্য, “আমাদের দলের কেউ সাংমাকে ভোট দেবেন না। দলের নির্দেশ ছিল প্রণববাবুকে ভোট দেওয়ার। ভুল করে কিছু হয়ে থাকলে অন্য কথা।” রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য প্রণববাবুকে ‘অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা’ জানিয়ে আনিসুরের আরও মন্তব্য, “কংগ্রেসের বিধায়কেরাই বা কেন সাংমাকে ভোট দিতে যাবেন? যাঁরা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে প্রণববাবুকে সমর্থন করেছেন, তাঁদের দিকে কী হয়েছে, কে জানে!” স্পষ্টতই আনিসুরের ইঙ্গিত তৃণমূলের দিকে। তৃণমূল-সহ রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের ধারণা, প্রণববাবুকে সমর্থনের প্রশ্নে সিপিএমের মধ্যে যে হেতু বিভাজন ছিল, তাই গোপন ব্যালটে তাদের দলের কেউ ‘অন্য রকম’ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন! এই সূত্রেই তৃণমূলের একাংশের ইঙ্গিত সিপিএমের ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা বলে পরিচিত আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার দিকে। রেজ্জাকের অবশ্য দাবি, “আমাদের দলের কেউ ক্রস ভোটিং করেছেন বলে মনে হয় না। আমাদের দল অনেক সুসংহত এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ। তবে অনেক নতুন বিধায়ক এসেছেন। কারও ভুল হয়ে থাকলে সেটা অন্য ব্যাপার।” ‘ভুল’ কার হল এবং ‘সচেতন’ ভাবে হল কি না আপাত নিস্তরঙ্গ রাষ্ট্রপতি ভোটের শেষ পর্বে আচমকাই উত্তেজনা এনে দিল এই প্রশ্ন!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.