ফুটবল খেলা বুঝতে হলে যেমন ফ্রি-কিক, পেনাল্টি, থ্রো, অফসাইড ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হয়, ক্রিকেটের ক্ষেত্রে যেমন জানতে হয় নো বল, রান আউট, হিট উইকেট, এলবিডব্লিউ, ডাকওয়ার্থ লুইস ইত্যাদি তেমনই বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য জানতে হয় পিই রেশিও, বুক ক্লোজিং, লক-ইন, সিআরআর ইত্যাদি সম্পর্কে। বাজারে প্রচলিত এই শব্দগুলি সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান থাকলে সুবিধা হয় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে। আজ আমরা পরিচিত হব এই রকম কিছু শব্দের সঙ্গে।
• ১) নিট অ্যাসেট ভ্যালু বা ‘ন্যাভ’: মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এই শব্দটি। একটি মিউচুয়াল প্রকল্পে যত তহবিল সংগৃহীত হয়, তা লগ্নি করা হয় বিভিন্ন শেয়ার এবং/অথবা ঋণপত্রে। কোনও একটি দিনে এই সব লগ্নির মোট বাজার দর থেকে ওই প্রকল্পের সব খরচ ও দায় বাদ দিলে পাওয়া যায় প্রকল্পটির মোট নিট অ্যাসেট ভ্যালু। মোট ন্যাভ-কে ওই প্রকল্পের মোট ইউনিটের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় ইউনিট পিছু নিট অ্যাসেট ভ্যালু বা ‘ন্যাভ’। এই ন্যাভের উত্থান-পতন দেখে আমরা বুঝতে পারি, বাজার সম্পর্কিত কোনও প্রকল্পে লগ্নি করে কেমন ফল মিলছে। ন্যাভ-এর ভিত্তিতে তুলনা করা যায় একই সময়ে ইস্যু করা এক জাতীয় বিভিন্ন মিউচুয়াল প্রকল্পের মধ্যে। ন্যাভ দেখে আমরা বুঝতে পারি, কোনও একটি দিনে লগ্নি করা ইউনিট বিক্রি করলে আমরা কত টাকা পেতে পারি। ন্যাভ দেখে যদি মনে হয়, কোনও প্রকল্প বাজারের তুলনায় ভাল ফল দেখাতে পারছে না, তবে ওই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে এসে অন্য কোনও ভাল প্রকল্পে প্রবেশ করার কথা ভাবা যেতে পারে।
• ২) সুইচ ওভার: কোনও একটি প্রকল্প বা ওই প্রকল্পের অন্তর্গত একটি বিকল্প থেকে বেরিয়ে অন্য প্রকল্প বা বিকল্পে যোগদানকে সংক্ষেপে ‘সুইচ’ বলা হয়। এই পরিভাষাটি বেশি ব্যবহৃত হয় ইউলিপের ক্ষেত্রে।
• ৩) এসআইপি: পুরো কথা সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান। মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় শব্দটি। নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মাসের কোনও একটি নির্দিষ্ট দিনে একটি মেয়াদে নিয়মিত লগ্নিকে ‘এসআইপি’ বলা হয়।
• ৪) এমআইএস/এমআইপি: ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্পের নাম মান্থলি ইনকাম স্কিম বা ‘এমআইএস’। মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে তা মান্থলি ইনকাম প্ল্যান বা ‘এমআইপি’।
• ৫) টিডিএস: কোনও আয়ের উৎসমূলে কর কেটে নেওয়া অর্থাৎ ট্যাক্স ডিডাক্টেড অ্যাট সোর্স-কে ছোট করে বলা হয় ‘টিডিএস’।
• ৬) প্যান: আয়কর দফতরে নিজের নাম নথিবদ্ধ করালে পাওয়া যায় পার্মানেন্ট অ্যাকাউন্ট নাম্বার বা ‘প্যান’।
• ৭) এনএসসি: ডাকঘর জাতীয় সঞ্চয়পত্র। ইংরেজিতে ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট।
• ৮) পিপিএফ: পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড। খোলা যায় বড় ডাকঘরে ও অনেক ব্যাঙ্কে।
• ৯) লক-ইন: একটি লগ্নির ন্যূনতম মেয়াদ, যার আগে তা ভাঙানো যায় না।
• ১০) ইপিএস: আর্নিং পার শেয়ার অর্থাৎ শেয়ার পিছু আয়। একটি কোম্পানির নিট লাভকে ওই কোম্পানির ইস্যু করা মোট শেয়ার দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় ‘ইপিএস’। ইপিএস দেখে বোঝা যায় কোম্পানিটি কতটা ভাল অথবা খারাপ করছে।
• ১১) পি ই রেশিও: পুরো নাম প্রাইস আর্নিং রেশিও। বাংলায় দাম ও আয়ের অনুপাত। কোনও একটি কোম্পানি শেয়ারের বর্তমান বাজার দরকে ওই কোম্পানির ইপিএস দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ‘পি ই রেশিও’। এই অনুপাত দিয়ে একটি কোম্পানিকে তুলনা করা যায় একই শিল্পের অন্তর্গত অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে। শেয়ার বাছার এটি একটি ভাল রাস্তা।
• ১২) বুক ক্লোজিং: মূলত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) এবং ডিভিডেন্ড প্রদানের সময় শেয়ার হস্তান্তর খাতা বন্ধ রাখতে হয় সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে, যার প্রচলিত নাম ‘বুক ক্লোজিং’। এই সময়ে শেয়ার হস্তান্তর হলে তা ওই মেয়াদের মধ্যে নথিবদ্ধ করা হয় না। ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টে কোনও শেয়ার কেনা হলে তা ওই বছরের ডিভিডেন্ড প্রদানের জন্য বিবেচিত হয় না।
• ১৩) রেকর্ড ডেট: রাইট, বোনাস অথবা কোনও ব্যাপারে ভোটের অধিকার কারা পাবেন, তা নির্ধারণের জন্য অনেক সময় একটি নির্দিষ্ট দিন ধার্য করা হয়, যার প্রচলিত নাম ‘রেকর্ড ডেট’। অর্থাৎ ওই দিন যাঁদের নাম কোম্পানির খাতায় নথিবদ্ধ থাকবে, তাঁরাই সংশ্লিষ্ট অধিকার পাবেন।
• ১৪) এক্স-ডিভিডেন্ড: বুক ক্লোজিং-এর সময় শেয়ার কিনলে ক্রেতা ওই বছরের ডিভিডেন্ড পাওয়ার অধিকারী হন না, অর্থাৎ তিনি শেয়ার কেনেন ‘এক্স ডিভিডেন্ড’ শর্তে। এর আগে শেয়ার কিনলে তিনি শেয়ার কেনেন ‘কাম ডিভিডেন্ড’ শর্তে।
• ১৫) সিআরআর: পুরো কথা ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে তাদের মোট আমানতের যে-অংশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কে বাধ্যতামূলক ভাবে জমা রাখতে হয়, তা-ই হল নগদ জমার অনুপাত বা ‘সিআরআর’। তা বাড়ানো-কমানোর দায়িত্ব রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে। সিআরআর বাড়ানো হলে বাজারে টাকার জোগান কমে। উল্টোটা হয় কমানো হলে। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সিআরআর একটি বড় হাতিয়ার।
• ১৬) রেপো এবং রিভার্স রেপো রেট: যে-সুদের হারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয়, তা হল ‘রেপো রেট’। অন্য দিকে যে-সুদে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের কাছ থেকে টাকা ধার নেয়, তা হল ‘রিভার্স রেপো রেট’। এই দুই হারের হেরফের করে বাজারে সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করে দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
• ১৭) সেনসেক্স: মুম্বই বাজারের মূল সূচক। বিভিন্ন শিল্পের ৩০টি বড় মাপের (লার্জ ক্যাপ) শেয়ার নিয়ে তৈরি।
• ১৮) নিফ্টি: জাতীয় শেয়ার বাজার অর্থাৎ ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে নথিবদ্ধ ৫০টি বড় শেয়ার নিয়ে গঠিত সূচক।
• ১৯) আইপিও/এফপিও: কোম্পানির প্রথম পাবলিক ইস্যু হল ‘আইপিও’। পরের ইস্যুকে বলা হয় ‘এফপিও’। নতুন শেয়ার যদি শুধু কোম্পানির সদস্যদের আনুপাতিক হারে ইস্যু করা হয়, তবে সেই ইস্যুকে বলা হয় ‘রাইট ইস্যু’।
• ২০) ইসিএস/এনইএফটি/আরটিজিএস: ‘অন-লাইন’ টাকা প্রদান পদ্ধতি। নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে বিশদ তথ্য আপনার লগ্নিকৃত সংস্থায় দাখিল করে, ‘অন-লাইন’ পদ্ধতিতে অতি দ্রুত ডিভিডেন্ড, সুদ ইত্যাদি নিজের অ্যাকাউন্টে জমা হিসাবে পেতে পারেন। |