সাত পাঁকে বাঁধা পড়ে এ-পার বাংলার নড়াইল ছেড়েছিলেন মাত্র ১৭ বছর বয়সে। তখন কে জানত, যাঁরা সঙ্গে বাঁধা পড়লেন, তাঁর সহধর্মিনী হয়েই এক দিন ঢুকতে হবে দিল্লির ‘রাইসিনা হিল’-এ।
তিনি শুভ্রা মুখোপাধ্যায়। প্রণব মুখোপাধ্যায় ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনিই এখন ‘ফার্স্ট লেডি’।
বর্তমান বাংলাদেশের নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা গ্রামেই জন্ম হয়েছিল শুভ্রাদেবীর। কৈশোর কেটেছে এখানেই। কিন্তু ব্যস্ত রাজনীতিককে বিয়ে করলে যা হয়। স্বামীর ব্যস্ততা যতই বেড়েছে ততই কমেছে বাপের বাড়িতে আসা। তার উপরে বাপের বাড়ি অন্য দেশে। |
নরাইলে শুভ্রা মুখোপাধ্যায় (মাঝখানে)।— ফাইল চিত্র |
কিন্তু তা বলে বাপের-বাড়ির টান এতটুকুও কমেনি। ভাইদের ভোলেননি শুভ্রাদেবী। ভোলেননি শিশু-কৈশোরের সঙ্গীদেরও। আজ যখন স্বামী প্রণব মুখোপাধ্যায় ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হচ্ছেন, তখন উৎসবে মেতে উঠছে ভদ্রবিলায় শুভ্রাদেবীর আপনজনেরাও। ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণববাবু জেতার পরে মিষ্টি বিতরণ চলছে বাংলাদেশে। শুভ্রাদেবীর ভাই কানাইলাল ঘোষ জানালেন, মিরাটির পাশাপাশি আনন্দে-উচ্ছ্বলতায় মুখর ভদ্রবিলাও। ভগ্নিপতির সুখবরে আজ তাঁকে সারা দিন অতিথি আপ্যায়ন করতে হয়েছে। কানাই বাবু বলেন, “জামাইবাবু পর পর দু’বার পরিকল্পনা করেও গ্রামের বাড়িতে আসতে পারেননি। ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণেই আসা হয়নি। তবে দিদি এসেছিলেন ৯৫ সালে।” |
শুভেচ্ছার জোয়ার নড়াইলে। —নিজস্ব চিত্র |
উচ্ছ্বাসে-আবেগে তখন কানাইলালের চোখে জল। আর্দ্র গলায় বললেন, “এই মাটি, এই ঘর, চিত্রা নদী! এখানে তো আমাদের সঙ্গেই ওর কৈশোর কেটেছে। এই মাটির প্রতি ওর টানই আলাদা।”বাংলাদেশে শুভ্রাদেবীর সঙ্গী ছিলেন মিনতি বোস। তিনি বলেন, “সে বার এসে দিদি নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি। পৈতৃক বাড়িটা দেখে তো কেঁদেই ফেললেন।” কানাইলাল জানান, এখনও দিদি-জামাইবাবুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বেশ গাঢ়। নিয়মিত কুশল বিনিময় চলে। এ-পারের ইলিশ মাছ আর গাছের মিষ্টি আম তো প্রতি বছর ওঁদের জন্য বাঁধা থাকে। পাঠিয়ে দেন তিনি নিজেই। |