ভোরের আলো ফুটতেই একরাশ আতঙ্ক আর উদ্বেগ নিয়ে জলের তোড়ে ভেঙে যাওয়া বাঁধের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন নরপ্রসাদ, দেওরাজরা। দেখেছেন, সব মিলিয়ে ১০০ সেনা জওয়ান বালির বস্তা দিয়ে কাজ করে চলেছেন। এক রাতেই ৩০০ মিটারের যে বাঁধ তৈরির কাজ প্রায় সম্পূর্ণ করে ফেলেছেন তাঁরা। ফ্যাকাশে মুখটা কিছুটা লাল হয়ে উঠে দেওরাজদের। হাসি হাসি মুখে তাঁরা বলেন, “সেনা জওয়ানরা যে কাজ করেছেন তা কল্পনা করা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে অনেকটা সুরক্ষিত।” শুক্রবার সকালে শিলিগুড়ির মিলন মোড়ের সেই ভাঙা বাঁধের কাছে গিয়ে দেখা যায়, তদারকি করছেন দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। এলাকাবাসীরা অনেকেই জানান, প্রায় রাতভর জেলাশাসক, এসডিও-র মতো কর্তারা জেগে তদারকি করেছেন। |
দুপুর ২টা নাগাদ সেখানে গিয়ে পৌঁছন রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ, স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়। বাঁধের কাজ দেখে সন্তোষপ্রকাশ করেন তাঁরা। মুখ্য সচিব বলেন, “যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেনাবাহিনীর কর্মীরা কাজ করছেন। অস্থায়ী বাঁধ তৈরির কাজ চলছে। বর্ষার পর স্থায়ী বাঁধের কাজ শুরু করা হবে।” জেলাশাসক বলেন, “সেনা কর্মীরা একরাতের মধ্যে বাঁধের কাজ প্রায় সম্পূর্ণ করে ফেলেছেন। কাজে যাতে অসুবিধে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেছি।” রবিবার রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টিতে মহানন্দার বাঁধ ভেঙে যায়। সেচ দফতরের তরফে মঙ্গলবার অস্থায়ী বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হয়। |
বুধবার ফের অস্থায়ী বাঁধ ভেঙে গোটা এলাকা প্লাবিত হয় পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠায় বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রশাসনের তরফে সেনা তলব করা হয়। বিকাল থেকে রাতভর বাঁধ তৈরির কাজে নামে সেনা জওয়ানরা। সুকনার সেনা বাহিনীর ‘স্ট্রাইকিং লাইন ডিভিশনে’র জওয়ানরা একজন ব্রিগেডিয়ারের নেতৃত্বে বাঁধ তৈরির কাজ শুরু করেন। পাঁচটি জেসিপি দিয়ে প্রথমে বালু ও পাথর দিয়ে ৩০০মিটার জায়গা বাঁধার কাজ শুরু করেন। কয়েক হাজার বস্তায় বালি ভরে লোহার তারজালিতে তা ভরে অস্থায়ী বাঁধ ঘেঁষে গার্ড দেওয়ার কাজ করেন তাঁরা। সেটাও প্রায় পাঁচ ফুট উঁচু করা হয়। সেনা কর্মীরা জানান, আরও অন্তত পাঁচ ফুট উঁচু করা হবে। নদীর জল তখন গতিপথ বদল করে ফেলেছে। সেনার এক অফিসার বলেন, “আমাদের বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য ওই দল বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সেখানে ৫৩-ইঞ্জিনিয়ার রেজিমেন্টের অফিসরারা রয়েছে। এ ছাড়াও জওয়ানরা রয়েছেন।” সেনা অফিসাররা দফায় দফায় নজরদারি চালান। হেলিকপ্টারেও নজরদারি চলে। এ দিন সকালে অবশ্য সেচ দফতর, প্রশাসনের তরফে ১০০ দিনের কাজের প্রচুর শ্রমিক সেখানে সেনা জওয়ানদের সঙ্গে কাজ শুরু করে। সেচ দফতরের তরফেও সেনাবাহিনীর কর্মীদের সাহায্যের জন্য শ্রমিক দেওয়া হয়। প্রায় ৩০০ শ্রমিক এ দিন কাজ করছেন। ৮টি পে লোডার কাজে লাগানো হয়েছে। |