ভক্তিনগরের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে মতানৈক্য
সার্কিট বেঞ্চ দ্রুত চালুর দাবিতে সহমত সব দল
সার্কিট বেঞ্চ দ্রুত চালু ও ভক্তিনগর থানাকে শিলিগুড়ি কমিশনারেটের আওতায় আনার বিরোধিতা, এই দুই দাবিকে কেন্দ্র করে ফের তাতছে জলপাইগুড়ি। দ্রুত সার্কিট বেঞ্চ চালুর দাবিতে বৃহস্পতিবার পথ অবরোধ করেছে যুব কংগ্রেস। আজ শুক্রবার সিপিএমের তরফে পথসভা করে সার্কিট বেঞ্চ উদ্বোধনের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি, ভক্তিনগর থানাকে জলপাইগুড়ির অধীনে রাখার দাবিতে আগামী রবিবার ভক্তিনগর থানা ঘেরাও করবে যুব কংগ্রেস। সোমবার জেলা আদালত অবরোধের কর্মসূচি রয়েছে। প্রয়োজনে জলপাইগুড়ি বন্ধেরও হুমকি দিয়ে রেখেছে যুব কংগ্রেস। উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে যাতায়াতের অসুবিধে দূর করার জন্য দ্রুত সার্কিট বেঞ্চ চালু করা প্রয়োজন বলে আন্দোলনকারীরা মনে করছেন। সেই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে ডান-বাম সব পক্ষই। আন্দোলনকারীরা জানান, প্রায় ১৫ বছর ধরে সার্কিট বেঞ্চ চালু হওয়ার আশায় দিন গুনছে উত্তরবঙ্গ। এমতাবস্থায়, আগামী ১ সেপ্টেম্বর স্থায়ী পরিকাঠামোর কাজের সূচনা করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জলপাইগুড়িতে যাওয়ার কথা। জলপাইগুড়ির বাসিন্দারা তো বটেই, উত্তরবঙ্গের আইনজীবী মহলের অনেকেই আশা করেছিলেন, স্থায়ী পরিকাঠামোর শিলান্যাস হলে অস্থায়ী জায়গায় সার্কিট বেঞ্চ চালুর কাজ ত্বরাণ্বিত হবে। অথচ কলকাতা হাইকোর্টের সবুজ সঙ্কেত না পেলে তা হওয়া যে অসম্ভব সেটা সকলের কাছেই স্পষ্ট। বস্তুত, স্থায়ী পরিকাঠামো যেখানে হবে ও অস্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি রয়েছে যে জায়গায়, দুটির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট যে উদ্বিগ্ন সে কথা প্রশাসনের কর্তারাও স্বীকার করেছেন। শুক্রবার দুপুরে পাহাড়পুর লাগোয়া সার্কিট বেঞ্চের প্রস্তাবিত স্থায়ী ভবনের জমিতে গিয়ে দেখা গেল বিস্তীর্ণ এলাকায় জল জমে রয়েছে। পাশাপাশি, অস্থায়ী ভাবে যেখানে সার্কিট বেঞ্চ চালু হওয়ার কথা, সেই জেলা পরিষদের ডাকবাংলো, বিচারপতিদের আবাসন তিস্তাভবন বা সার্কিট হাউসের সম্প্রসারিত অংশে অবশ্য বৃষ্টির জল জমে থাকার সমস্যা নেই বলে প্রশাসনের দাবি।
সার্কিট বেঞ্চের প্রস্তাবিত স্থায়ী ভবনের জমিতে জল জমে রয়েছে। ছবি: সন্দীপ পাল।
তবে দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় অস্থায়ী ভবন আগাছায় ভরে গিয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত ‘পার্কিং ব্যবস্থা’ নেই। অস্থায়ী ভবন লাগোয়া এলাকায় যানজট ঠেকাতে বিকল্প একটি রাস্তা তৈরির জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সেই রাস্তার কাজও এখনও সমাপ্ত হয়নি। তাই রাজ্য সরকারের তরফে দ্রুত স্থায়ী পরিকাঠামোর কাজের জন্য আরও অর্থ বরাদ্দ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের থাকার জন্য নতুন আবাসন খোঁজা হচ্ছে জলপাইগুড়িতে।
সার্কিট বেঞ্চ দ্রুত চালু করার দাবিতে সব দল একমত হলেও ভক্তিনগর থানাকে শিলিগুড়ি কমিশনারেটের আওতার আনার বিরোধিতায় আন্দোলনকারীদের মধ্যেই দ্বিমত রয়েছে। কারণ, দূরত্বের কারণে কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ জলপাইগুড়িতে করার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। ভক্তিনগরকে শিলিগুড়ি কমিশনারেটের আওতায় আনার প্রস্তাবের পক্ষে সেই একই যুক্তি দেখানো হলে তার বিরোধিতা করা হবে কী ভাবে সেই প্রশ্নে দ্বিমত রয়েছেন আন্দোলনকারীদের মধ্যে। বিশেষত, ভক্তিনগরের বাসিন্দাদের মধ্যে শিলিগুড়ির সঙ্গে সংযুক্তির পক্ষে মত ক্রমশ জোরাল হচ্ছে। কারণ, ভক্তিনগর থানার কিছু এলাকার সঙ্গে জলপাইগুড়ি আদালতের দূরত্ব পঞ্চাশ কিলোমিটারেও বেশি। সে কারণে এলাকার বিচারপ্রার্থীদের আদালতে কিছু সময়ের কাজ থাকলেও যাতায়াতে গোটা দিন লেগে যায়। সেই সঙ্গে গরিব মানুষদের বেশি খরচও হয়, এই যুক্তিকে উড়িয়ে দিতে পারেননি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বও।
এ ব্যাপারে ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য প্রবাল রাহা বলেন, “ভক্তিনগর কমিশনারেটে যাবে কি যাবে না সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র অধিকার সেখানকার স্থানীয় মানুষদের। জলপাইগুড়িতে বসে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটা মানবিক দিক থেকে সঠিক হবে না।”
এই যুক্তি মানতে চাননি জলপাইগুড়ি বার আসোসিয়েশনের সম্পাদক অভিনন্দন চৌধুরী। তিনি বলেন, “সেই হিসেবে চললে তো প্রতিটি শহরে একটি করে আদালত চাই। বিভিন্ন মহল থেকে এমনও বলা হচ্ছে যে সার্কিট বেঞ্চ হলে জলপাইগুড়িতে মামলার সংখ্যা বাড়বে। তার বদলে ভক্তিনগরকে শিলিগুড়ির আওতায় নেওয়া মেনে নিতে পারব না। সার্কিট বেঞ্চের সঙ্গে জেলা আদালতের কোনও সম্পর্ক নেই।” জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের যুব কংগ্রেস সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “কিছুতেই ভক্তিনগরকে শিলিগুড়িতে যেতে দেব না। আগামী রবিবার ভক্তিনগর থানার সামনেই আন্দোলন করব।”
সঙ্গে একমত নয় জেলা কংগ্রেস. যদিও জেলা কংগ্রেসের এই মনোভাবে একমত নন কংগ্রেসের ফুলবাড়ি-ডাবগ্রাম ব্লক কমিটি। কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিক বলেন, “ফুলবাড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে আদালতের প্রয়োজনে জলপাইগুড়ি যেতে যে সমস্যা হয়, ভক্তিনগর শিলিগুড়ি কমিশনারেটে অর্ন্তভুক্ত হলে তা লাঘব হবে। এই প্রস্তাবের বিরোধিতায় যুব কংগ্রেস আন্দোলন করছে। তবে সেটা তাঁদের মতাতত। কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির বৈঠকে ভক্তিনগর নিয়ে আলোচনা হয়নি। আলোচনা হলে আমরা আমাদের মতামত জানিয়ে দেব।”
সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলার ডাবগ্রাম জোনাল কমিটির সম্পাদক দিলীপ সিংহও জানান, তাঁদের দলেও ভক্তিনগর নিয়ে আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, “ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি মানুষের হয়রানি লাঘব করতেই ভক্তিনগর শিলিগুড়ি কমিশনারেটে অর্ন্তভুক্ত হলে ভাল হয়।” তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিক জানান, মানুষের স্বার্থে ও আইন মোতাবেক যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সেটা রাজ্য সরকার নেবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.