সিআইডি-র উপরে উচ্চ আদালতের আস্থা কম। তাই তরুণী অন্তর্ধানের তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়ার পরে রাজ্যে জাল স্ট্যাম্প পেপার চক্র কী ভাবে কাজ করছে, তা খুঁজে বার করার দায়িত্বও ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকেই দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
জাল স্ট্যাম্প পেপার কেলেঙ্কারির মূল পাণ্ডাকে খুঁজে বার করার আবেদন জানিয়ে বিকাশ দত্ত নামে এক ব্যক্তি হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলা করেন। ওই মামলার শুনানির শেষে হাইকোর্ট শুক্রবার সিআইডি কিংবা রাজ্য পুলিশকে দায়িত্ব না-দিয়ে সরাসরি সিবিআই-কে ওই তদন্তভার অর্পণ করেছে। সিআইডি-র উপরে হাইকোর্টের আস্থা যে তলানিতে ঠেকেছে, বৃহস্পতিবারেই তা বোঝা গিয়েছিল। কমবেশি দু’মাস আগে রাজ্যের দু’টি হোম থেকে মোট ৪০টি তরুণী নিখোঁজ হয়ে যান। তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে সিআইডি হাইকোর্টে জানায়। তাদের ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই তরুণীদের খুঁজে বার করার জন্য ওই দিন সিবিআই-কে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
জাল স্ট্যাম্প নিয়ে জনস্বার্থের মামলা দায়ের করে বিকাশবাবু হাইকোর্টে জানান, তিনি পারিবারিক সূত্রে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরে দু’কাঠা জমি পান। সেই জমি তাঁর নামে রেজিস্ট্রি করা হয়। দলিল খুলে তিনি দেখেন, তাঁর ভাগে দু’কাঠা জমি থাকলেও দলিলে ২৭ কাঠা জমি লেখা আছে। তা থেকেই সন্দেহ হয় তাঁর। আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি জনস্বার্থের মামলা দায়ের করেন।
এ দিন মামলার শুনানির সময় আবেদনকারীর আইনজীবী তাপস ঘোষ প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল ও বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চকে জানান, সন্দেহ থাকায় তাঁরা ২০টি দলিল নিয়ে জেলা কালেক্টরের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কালেক্টর দলিলগুলি পরীক্ষা করার জন্য পাঠান। পরীক্ষার পরে জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই ২০টি দলিলে যে-সব স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলি জাল। ওই নম্বরের কোনও স্ট্যাম্প বাজারে বিক্রিই করেনি প্রশাসন।
তাপসবাবু তাঁর সওয়ালে বলেন, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে দীর্ঘদিন ধরে জাল স্ট্যাম্পের কারবার চলেছে। অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও জেলা পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। জাল স্ট্যাম্প পেপারের কারবারের ফলে এক দিকে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব-ক্ষতি হচ্ছে। অন্য দিকে সারা জীবনের সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে যাঁরা এক টুকরো জমি বা একটি ছোট ফ্ল্যাট কিনেছেন, তাঁরা প্রতারিত হচ্ছেন। কারণ, জাল স্ট্যাম্পের দলিল নিয়ে তাঁরা আদালতে গেলে সেখানে ওটা গ্রাহ্যই হবে না।
ওই সব দলিল যাঁরা লিখেছেন, তাঁরা নিজেদের আইনজীবী বলে পরিচয় দিচ্ছেন বলে তাপসবাবু এ দিন আদালতে জানান। তাঁর অভিযোগ, ওই সব ব্যক্তি জেলার বিভিন্ন রেজিস্ট্রি অফিসে বসেই দলিল লেখার কাজ করেন। কিন্তু বার কাউন্সিলে খোঁজ করে দেখা গিয়েছে, ওই সব ব্যক্তির নাম বার কাউন্সিলের আইনজীবী হিসেবে নথিভুক্ত নেই। অর্থাৎ ওঁরা প্রকৃত অথের্র্ আইনজীবী নন।
আদালতে তাপসবাবুর আর্জি, “জাল স্ট্যাম্পের রমরমা কারবার অবিলম্বে বন্ধ করার ব্যবস্থা হোক। নইলে ওই জালিয়াত চক্র অন্য জেলাতেও ছড়িয়ে পড়বে। বোঝা যাচ্ছে, একটি বড় চক্র কাজ করছে। চক্রটিকে অবিলম্বে ধরা দরকার।” আইনজীবীর বক্তব্য শুনে ডিভিশন বেঞ্চ বিস্ময় প্রকাশ করে। সিআইডি বা রাজ্যের অন্য কোনও সংস্থাকে তদন্ত করতে না-দিয়ে সরাসরি সিবিআই-কেই এই দায়িত্ব দেয় তারা। |