|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
‘পাঠককে তাঁদের খুঁজে নিতে হয়’ |
‘চুপ করো অবিশ্বাসী! কথা কোয়ো না।’ ... আমার বরাবরই মনে হয়েছে ‘ডাকঘর’ নাটকের তুঙ্গ মুহূর্ত এটিই এবং মঞ্চে নাটকটি দাঁড়াল কিনা তা শেষ পর্যন্ত নির্ভর করে এর বাচিকতায়।” অমিয় দেব লিখছেন তাঁর ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ প্রবন্ধে। রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে তাঁর নানা রকম লেখা ‘আমার রবীন্দ্রনাথ: একটি ব্যক্তিগত নিবন্ধ’, ‘গোরা গৌর গৌরমোহন’, ‘রবীন্দ্রনাথের ননিবালা ও আরো কেউ কেউ’, ‘রবীন্দ্রনাথের আত্মপ্রতিকৃতি: এক অনভিজ্ঞের চোখে’ প্রভৃতির সংকলন বের করেছে সূত্রধর, কী ফুল ঝরিল (২০০.০০)। ছবি-সহ শেষোক্ত রচনাটিতে লেখক তাঁর নতুন ভাবে কবিকে আবিষ্কারের কথা জানাচ্ছেন ‘এই এক আলোকচিত্র-সম্ভূত বারোটি প্রতিকৃতিকে বোধহয় আত্মপ্রতিকৃতি বলতে বাধা নেই। এই বারোটি জুড়ে যা প্রধান লক্ষণীয় তা এই যে কোনোটিতেই আর আলোকচিত্রের সেই জগজ্জয়ী রবীন্দ্রনাথ নেই, তার বদলে বেরিয়ে এসেছেন এক অন্য রবীন্দ্রনাথ যাঁকে দেখে মনে হয় দুঃখী, হয়তো বা ঈষৎ বিমূঢ়ও, যদিও অন্বেষা পুরো জাগরূক। কোনো মহিমার চিহ্ন কোথাও নেই, কোনো প্রশান্তির বা স্থৈর্যের। যেন বা এক নির্মোক ভেঙে নিজেকে খোঁজার প্রক্রিয়া চলছিল।’
আবার অমিয় দেব তাঁর দুই তিরিশে অক্টোবর-নভেম্বর/ সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ও বুদ্ধদেব বসু-র (এবং মুশায়েরা, ২০০.০০) মুখবন্ধে জানাচ্ছেন ‘৩০ অক্টোবর ১৯০১-এ জন্ম সুধীন্দ্রনাথ দত্তের, ৩০ নভেম্বর ১৯০৮-এ জন্ম বুদ্ধদেব বসুর। তিরিশের সুবাদে তাঁদের এখানে অন্বয়ের কারণ শুধু এই নয় যে তাঁরা রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কবিতার দুই প্রধান ও ঈষৎ বিষম প্রতিনিধি, এও যে তাঁরা উভয়েই ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শিক্ষক।’ দুই কবিরই ব্যক্তিসত্তা বা আত্মজীবন নিয়ে আলোচনা করেছেন লেখক, তাঁদের সাহিত্যকীর্তি নিয়েও।
এবং মুশায়েরা থেকে বেরিয়েছে বিষয়: ইতালি, দান্তে, গ্রামশি (২০০.০০)। সংকলনটিতে লেখক ও তাঁদের লেখালেখি নিয়ে সম্পাদক দেবেশ রায়ের অভিমত: ‘‘চঞ্চলকুমার চট্টোপাধ্যায় দান্তে পাঠ করেছিলেন, নিজের উৎসাহে। সারা জীবন ধরে তিনি সেই উৎসাহের সামর্থ্য রক্ষা করেছেন। শ্যামলকুমার গঙ্গোপাধ্যায় পোর্ট কমিশনার্সে চাকরি করতেন। দান্তে-র কাছে তিনি পৌঁছেছিলেন গভীর নির্জন পথ বেয়ে, সেই ভাষা আয়ত্ত করে। জ্যোতিপ্রকাশ-মালবিকা দান্তের শহরে গিয়েছিলেন, ‘দীন যথা যায় দূর তীর্থদরশনে’। এই সমকালে সৌরীন ভট্টাচার্য ও শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় এক তাত্ত্বিক সম্পূর্ণতার ব্রতেই গ্রামশিকে বাঙালি পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার তাড়া বোধ করেন।” আছে দান্তে ও তাঁর কাব্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধও। বোকাচ্চিয়োর গল্প অনুবাদ করেছেন সমরেশ রায়। আর আছে দেবেশ রায়ের আশ্চর্য রচনা ‘গ্রামশ্চির দান্তে’।
সুবীর মণ্ডল সম্পাদিত উবাচ-র (কবীর, ১২৫.০০) সম্পাদকীয় অনুযায়ী, “দশবছরে ‘কবীর’-এ প্রকাশিত চল্লিশজন কবির সাক্ষাৎকার সংকলন হিসেবে প্রকাশিত হল ‘উবাচ’।” শঙ্খ ঘোষ তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেছেন ‘‘সমকালীন কবিতা পড়বার বা বুঝবার বা তার থেকে আনন্দ পাবার মতো পাঠক সব দেশেই সব যুগে কম। সেইসঙ্গে ‘এখন আর কবিতা পড়ে না কেউ’ এই বিলাপটাও কিন্তু সর্বকালীন।” আর মণীন্দ্র গুপ্ত: ‘অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি যে কত বড় সাহিত্যিক তা দিনে দিনে টের পাওয়া যাচ্ছে। এই বুড়ো বয়সেও আমি অবনীন্দ্রনাথ পড়ি। অথচ তাঁর বই-এর তো অন্য ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ হয়নি। প্রচার হয়নি তেমনভাবে। আমরা বাঙালিরাই বা তাঁর লেখা ক’জন পড়ি।’
সুধীর চক্রবর্তীর কবিতার খোঁজে-তে (পত্রলেখা, ২০০.০০) আলোচিত কবিরা শীতল চৌধুরী প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায় আনন্দ বাগচী অরবিন্দ গুহ সুনীলকুমার নন্দী সঞ্জয় ভট্টাচার্য সুধেন্দু মল্লিক সুজিত সরকার অনির্বাণ ধরিত্রীপুত্র হেমচন্দ্র বাগচী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সুকুমার ঘোষ প্রাণেশ সরকার তপন ভট্টাচার্য জলধি হালদার কুমুদরঞ্জন মল্লিক ফরহাদ মজহার রাজা মিত্র শিশিরকুমার দাশ। শুরুতেই আত্মপক্ষ-এ সুধীরবাবু জানিয়েছেন ‘আমার মতো করে কজন বাঙালি কবিকে এখানে পরিচায়িত বা আলোকিত করতে চেয়েছি, যাঁদের ... শুদ্ধতার সাধনা অকৃত্রিম।’
সুবোধ ঘোষ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নরেন্দ্রনাথ মিত্র গোপাল হালদার নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় নবেন্দু ঘোষ বিমলচন্দ্র ঘোষ অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের সাক্ষাৎকার যেমন নিয়েছিলেন যৌবনে অমলেন্দু চক্রবর্তী, তেমনই নিজেও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন পরিণত বয়সে। অমলেন্দু চক্রবর্তীর এই কথাবার্তা-র (সূত্রধর, ২০০.০০) সম্পাদক রুশতী সেন লিখেছেন, ‘যারা অমলেন্দু চক্রবর্তীর কথা বলার, বিশেষত গল্প বলার মনমাতানো ধরনটির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, তারা যে অনেক পরিণত বয়সে দেওয়া সাক্ষাৎকার দুটিতে তাদের চেনা জমাটি কথককে অনেক বেশি করে পাব, অল্পবয়সে নেওয়া সাক্ষাৎকারগুলির তুলনায়, এ-তো স্বাভাবিক।’ যেমন লেখালেখির প্রচার ও বাজার নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে অমলেন্দু বলছেন ‘আমি এখানে দেবেশ রায়ের তিস্তা পারের বৃত্তান্ত-র কথা বলব। আসলে এইসব লেখকরা তো মিডিয়ার সমর্থন পান না ফলে অনেক সময় পাঠককে তাঁদের খুঁজে নিতে হয়।’ |
|
|
|
|
|