চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে ক্লাসের মধ্যে ছাত্রদের ‘হোমটাস্কের’ খাতা দেখছিলেন এক শিক্ষক। হঠাৎ পিছন ফিরে দেখেন তাঁর চেয়ারে একটা সাপ! আৎকে ওঠেন তিনি। রবারের সাপটিকে আসল সাপ ভেবে শিক্ষক চমকে ওঠায় ক্লাসের কিছু ছেলে হেসে ওঠে। এর আগে বইয়ের ভিতরে রবারের টিকটিকি রেখে এক শিক্ষিকাকেও ক্লাস টেনের এ- সেকশনের ছেলেরা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন।
ওই ক্লাসের কিছু ছাত্রের বিরুদ্ধে এমনই ‘উশৃঙ্খলতার’ অভিযোগ এনে গত বুধবার থেকে তাঁদের ক্লাস নেওয়া বন্ধ করেছেন স্কুলের শিক্ষকেরা। স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এমনই চলবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্কুলের স্টাফ কাউন্সিল। ঝালদা ২ ব্লকের বেগুনকোদর উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘটনা। পরিস্থিতি সামাল দিতে আজ শনিবার অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বুধবার ক্লাস টেনের এ-সেকশনে ভৌতবিজ্ঞান পড়াতে গিয়েছিলেন শিক্ষক জনার্দন কুণ্ডু। তাঁর অভিযোগ, “আমি চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের খাতা দেখছিলাম। হঠাৎ পিছন থেকে এক ছাত্র এসে তার খাতা দেখাতে চায়। পিছন ফিরতেই দেখি আমার চেয়ারের উপর একটা সাপ। আচমকা সাপ দেখে ঘাবড়ে যাই। পরে বুঝতে পারি ওটা রবারের সাপ। কিন্তু অবিকল আসল সাপের মতই দেখতে। তা দেখে ক্লাসের কয়েকজন ছাত্র হাসাহাসি করে। বিরক্ত হয়ে আমি ক্লাস ছেড়ে বেরিয়ে যাই।”
স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, স্টাফরুমে জনার্দনবাবুর কাছে ঘটনাটি শুনে অনেকেই ওই ছাত্রদের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠেন। তাঁদের অভিযোগ, আগেও ওই ছাত্রেরা কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে এমন ব্যবহার করেছে। কয়েকদিন আগে বইয়ের মধ্যে রবারের টিকটিকি ঢুকিয়ে এক শিক্ষিকাকে দিয়ে এমনই অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে ওই ছাত্রেরা। স্কুলের এক শিক্ষক তিমির চক্রবর্তীর ক্ষোভ, “কিছুদিন ধরেই ওদের উশৃঙ্খলতা চলছে। কিন্তু বুধবারের ঘটনা আমাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। রবারের সাপ হলেও তা হঠাৎ দেখলে যে কোনও মানুষই ভয় পাবেন। দুর্বল প্রকৃতির হলে তো দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারত।” স্টাফ কাউন্সিল বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়, স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা না নিলে তাঁরা ওই ক্লাস নেবেন না। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ওই ছাত্রদের ক্লাস করেননি শিক্ষকেরা।
প্রধান শিক্ষক দেবদাস অধিকারী বলেন, “ওই দিন আমি স্কুলে ছিলাম না। তবে এমন ঘটনা অব্যাহত থাকলে পড়াশোনার পরিবেশ থাকে না। এ ব্যাপারে আমরা শনিবার পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকেছি। ওই বৈঠকে অভিভাবকদেরও ডাকা হয়েছে।” তিনি জানান, এই ঘটনায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে তাঁদের এই ধরনের কাজ করতে মানা করা হবে। তা নাহলে ভবিষ্যতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের ভবিষ্যত নষ্ট হতে পারে।
স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক অজয় কর্মকার বলেন, “ওই ক্লাসের কিছু ছাত্রের আচরণ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। এক ছাত্রকে ক্লাস থেকে পালানোর সময় বাধা দেওয়ায় পরিচালন সমিতির এক সদস্যের সঙ্গে সে দুর্ব্যবহার করে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিভাবকদের জানিয়ে দেব এ সব আর সহ্য করা হবে না।” |