জেরায় বললেন বিক্রম
৮ সঙ্গীর মৃত্যুতে ভয় পেয়েই খুন করা হয় পার্থদের
শালবনিতে ‘এনকাউন্টারে’ আট সঙ্গীর মৃত্যুর পরেই বহিরাগতদের ভয় পেতে শুরু করেছিল মাওবাদীরা। সেই ভয়েই পুরুলিয়ার অযোধ্যা স্কোয়াড পার্থ-সৌম্যজিৎকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করে। ধৃত মাওবাদী নেতা বিক্রম ওরফে অর্ণব দাম জেরায় এই কথা জানিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।
ভয়ের কারণ নিহিত ছিল মাস চারেক আগের একটি ঘটনায়। ২০১০ সালের ১৬ জুন পশ্চিম মেদিনীপুরে শালবনিতে রঞ্জার জঙ্গলে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে আট মাওবাদী স্কোয়াড সদস্যের মৃত্যু হয়েছিল। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার দাবি, এর পরেই মাওবাদীরা বাড়তি ‘সতর্ক’ হয়ে ওঠেন বলে বিক্রম জানিয়েছেন। তাঁদের কাছে খবর ছিল, ওই সংঘর্ষের ঠিক আগে অচেনা লোক রঞ্জার জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করছিল। সম্ভবত তারা পুলিশের চর। সে কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছিল, অচেনা লোক দেখলেই যেন খবর দেওয়া হয়।
ওই বছর ২২ অক্টোবর বিকেলে অযোধ্যা পাহাড়ে যেখান থেকে আইবি ইন্সপেক্টর পার্থ বিশ্বাস ও স্কুলশিক্ষক সৌম্যজিৎ বসুকে ধরা হয়, সেই জায়গা জঙ্গলের অনেক গভীরে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী বলে প্রথমে তাঁরা পরিচয় দিয়েছিলেন। এ দিকে, মাওবাদীদের কাছে খবর ছিল, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী সেজেই পুলিশের চরেরা জঙ্গলের আনাচে-কানাচে ঘোরাঘুরি করছে। ফলে, পার্থ যে গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার তা প্রকাশ হতেই মাওবাদীরা ধরে নেয়, খবরাখবর নিতে দু’জন জঙ্গলে তাদের ডেরার কাছে ঘুরছিল। রাতে তাঁদের খুন করা হয়। এর আগে ধরা পড়া দু’এক জন স্কোয়াড সদস্যের থেকেও পুলিশ এ ব্যাপারে জেনেছে। সোমবার রাতে অযোধ্যা পাহাড় ঘেঁষা বলরামপুর থেকে গ্রেফতারের পরে পুলিশ বিক্রমকে পুরুলিয়া শহরে একটি আস্তানায় রেখেছে। রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি স্পেশাল টাস্ক ফোর্স, ঝাড়খণ্ড পুলিশ, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং মাওবাদী দমনের জন্য প্রশিক্ষিত বিশেষ বাহিনী কোবরা-র কর্তারা দফায় দফায় তাঁকে জেরা করছেন। পুলিশ সূত্রের দাবি, বিক্রম জেরায় কোনও ‘অসহযোগিতা’ করছেন না। খোলামেলা ভাবেই নানা কথাবার্তা চলছে। খাওয়া-দাওয়াও ঠিক মতো করছেন। তবে নিজের মতাদর্শ থেকে এক চুল সরতে তিনি নারাজ। ঘাড়ে স্পন্ডেলাইটিসের ব্যথার কথা জানানোয় প্রথম দিনেই চিকিৎসক তাঁকে দেখে যান। অন্য শারীরিক সমস্যার কথা তিনি জানাননি।
এর আগে ধৃত কয়েক জন মাওবাদী পুলিশকে জানান, এই বছরের গোড়ায় অযোধ্যা পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর তাড়ায় পালানোর সময়ে তাঁরা পাহাড়ের কিছু জায়গায় আগ্নেয়াস্ত্র লুকিয়ে রাখেন। পুলিশের ধারণা, সেই জায়গাগুলি বিক্রমের জানা। পুরুলিয়ার এএসপি এন সুধীর কুমার বলেন, “প্রয়োজনে বিক্রমকে অযোধ্যা পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হবে।” তবে ২৮ জুলাই মাওবাদীদের ‘শহিদ সপ্তাহ’ শুরু হওয়ায় তাঁদের বাড়তি সতর্কতাও নিতে হচ্ছে। ঘটনাচক্রে, ওই দিনই আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বর্ধমান ও পুরুলিয়ায় যাওয়ার কথা। শুক্রবার বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরে হরিপুর বাজারে হিন্দি ও বাংলায় সাদা কাগজে লাল কালি দিয়ে লেখা কয়েকটি পোস্টার মেলে। মাওবাদীদের সশস্ত্র বাহিনী ‘পিএলজিএ’র নামাঙ্কিত ওই সব পোস্টারে দাবি করা হয়েছে, “দু’চার জন ধরা পড়ায় আমরা কমজোর হয়ে যাইনি। বরং আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছি।” তাদের হুঁশিয়ারি, “তৃণমূল না ছাড়লে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করো। আমাদের কথা না শোনার পরিণাম এই মাসেই দেখাব।” দুর্গাপুরের এডিসিপি কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “কারা এই পোস্টার দিয়েছে, আমরা তা খতিয়ে দেখছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.