জমি নিয়ে বিবাদকে কেন্দ্র করে নাবালক সন্তানদের সামনেই এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠল জ্যাঠতুতো শ্বশুরের বিরুদ্ধে। উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার কেন্দুয়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার ভোররাতে। সাবিনা বিবি-র (২৫) দেহ উদ্ধার করে বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ।
ঘটনার সময় থাকা তাঁর তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় ছেলে সাত বছরের আলমগির হোসেন পুলিশকে জানিয়েছে, তাদের মারধর করে মায়ের উপরে অত্যাচার করে তাঁকে মেরে ফেলে পালিয়ে যায় দাদু ফকির আলি। যদিও পুলিশের দাবি, সাবিনা বিবিকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে কিনা তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলেই স্পষ্ট হবে। অভিযুক্ত ফকির আলি-সহ আরও কয়েকজনকে সন্দেহের তালিকায় রেখে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। খতিয়ে দেখা হচ্ছে আলমগিরের বক্তব্যও। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকা উত্তেজনা থাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, হাড়োয়ার কেন্দুয়া মাছের বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের ধারে স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকেন শেখ জাহাঙ্গির হোসেন। কাছেই মাদারতলা গ্রামে জাহাঙ্গিরের পৈত্রিক ভিটে। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা ফকির আলি সম্পর্কে জাহাঙ্গিরের জ্যাঠামশাই। দু’জনেই পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। তাদের বাড়ির মধ্যে যাতায়াতের একটি রাস্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দু’জনের বিবাদ চলছিল। বৃহস্পতিবার রাত ২টো নাগাদ জাহাঙ্গির মাছ নিয়ে ভোরের ট্রেন ধরার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ভোর ৫টা নাগাদ তাঁর বড় ছেলে আলমগির কাঁদতে কাঁদতে বাজারে একটি চায়ের দোকানে গিয়ে বলে, ‘আমার মাকে মেরে ফেলেছে দাদু’। সেই সময় দোকান খুলে সবেমাত্র উনুনে কয়লা দিচ্ছিলেন রাজীব মণ্ডল। সব শুনে কয়েকজনকে নিয়ে তিনি দৌড়ে আলমগিরদের বাড়িতে যান। খবর পেয়ে পৌঁছে যায় আশপাশের লোকজন। রাজীবের কথায়, “গিয়ে দেখি মেঝেয় বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে আছে মহিলার দেহ। আলমগিরের ভাইবোন ভয়ে খাটের নীচে লুকিয়েছিল।”
গ্রামবাসীর কাছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন হাড়োয়ার সিআই প্রশেন মুখোপাধ্যায়, ওসি সুমিত মণ্ডল। ইতিমধ্যে খবর পেয়ে চলে আসেন জাহাঙ্গির। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আলমগির পুলিশকে জানায়, বাবা চলে যাওয়ার পরে তাদের ঘরে ঢোকে দাদু। |
তাদের তিন ভাইবোনকে মারধর করে খাটের তলায় ঢুকিয়ে দিয়ে মায়ের উপরে অত্যাচার করে। তারপরে চলে যাওয়ার সময় মায়ের গলায় গামছা পেঁচিয়ে খুন করে। দাদু চলে যাওয়ার পরে সে ঘরের তালা খুলে বেরিয়ে চায়ের দোকানে গিয়ে খবর দেয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকলে দুষ্কৃতী ঘরে ঢুকল কী ভাবে? আবার যদি যাওয়ার সময় তালা দিয়ে চলে যায় তাহলে কি চাবি বারান্দায় ফেলে গিয়েছিল। তা ছাড়া গামছা পেঁচিয়ে খুনের কথা বলা হলেও পুলিশ কোনও গামছা পায়নি। এমনই নানা অসঙ্গতি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, মহিলার গলায় কাপড়ের ফাঁস লাগিয়ে খুন করা হয়েছে। আশপাশের বাসিন্দারা পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই দিন রাত একটা নাগাদ জাহাঙ্গিরের বাড়ি থেকে তাঁরা চিৎকার শোনেন। কিন্তু কেন চিৎকার হচ্ছে তা আর তাঁরা জানতে যাননি। এই খুনের পিছনে অন্য ঘটনা আছে কি না বা একাধিক লোক জড়িত কি না তা তদন্ত করছে পুলিশ। সাবিনার স্বামীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
|