অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হল নফরচন্দ্রপুরের। জমির অধিকার পেলেন তাঁরা।
তেহট্টের বেতাই ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের একেবারে সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম নফরচন্দ্রপুরে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে নফরচন্দ্রপুরে বসতি বেঁধেছিলেন বিহারের দুমকা থেকে আসা বেশ কয়েকটি আদিবাসী পরিবার। কিন্তু এই দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরে তাঁরা সেই জমির মালিকানা পাননি। তেহট্টের মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল বলেন, “যে জমিতে এই আদিবাসী পরিবারগুলি বসবাস করছিলেন, তা ১৯৭৫ বাস্তুজমি অধিগ্রহণ আইনের বলে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।” সেই জমির সঙ্গে সঙ্গে এক এক করে মিলে গেল এতদিন ধরে না পাওয়া নানা সরকারি সুযোগ সুবিধাও। শুক্রবার নফরচন্দ্রপুর আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে একটি অনুষ্ঠানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামের ৭২টি পরিবারকে মোট ৪.২২ ডেসিমেল বাস্তুজমি দেওয়া হল। সেই সঙ্গে ২৩টি পরিবারকে ইন্দিরা আবাস যোজনার চেক, ১৪৮টি পরিবারকে রেশন কার্ড, ২০টি পরিবারকে তফসিলি উপজাতির শংসাপত্র ও ১০০ জন ছেলে মেয়েকে নতুন পোশাক দেওয়া হয়। এদিন গোটা গ্রাম ছিল রীতিমত উৎসবের মেজাজে। কাঁটাতারের বেড়ার মাঝখানে দ্বীপের মতো এই গ্রামের মানুষকে যাতায়াত করতে হয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীদের রাস্তা দিয়েই। সন্ধ্যা ছ’টার পর আবার সেই রাস্তা দিয়ে হাটতে গেলে বিএসএফের ‘হুকুম’ লাগে। তাছাড়া সীমান্তে থাকার হাজার ঝক্কি তো লেগেই রয়েছে। গ্রামে প্রায় ৩৩১ ঘর লোকের বাস। সকলেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের। গ্রামের সকলেই প্রায় দিনমজুর। শিক্ষিতের হার মেরেকেটে ১০ শতাংশ। যাতায়াতের মাধ্যম বলতে হাঁটা, সাইকেল কিংবা ভ্যানরিকশা। গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি জুনিয়র হাই স্কুল ও একটি আইসিডিএস কেন্দ্র রয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ থেকে প্রায় বছর পঞ্চাশ আগে এই আদিবাসীরা বিহারের দুমকা থেকে নফরচন্দ্রপুরে এসে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু জমি নিজের নয় বলে গ্রামের বহু মানুষ ইন্দিরা আবাস যোজনার মতো বেশ কিছু সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছিলেন। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্বশিক্ষক জিতেন্দ্রনাথ সর্দার বলেন, “বহু দৌড়ঝাঁপ করে অবশেষে সেই স্বপ্ন আজ সত্যি হল।” জমির মালিকানা বা রায়তি রেকর্ড হাতে পেয়ে রবি সর্দার, ধীরেন সর্দার, প্রমিলা মাহাতোরা আনন্দে কেঁদে ফেলেন। তাঁরা বলেন, “এটা আমাদের কাছে দ্বিতীয় স্বাধীনতা।”
তেহট্ট ১ ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক অভিজিত ভুইঞা বলেন, “১৯৭৫ সালের বাস্তুজমি অধিগ্রহণ আইনের বলে এদিন গ্রামের ৭২টি পরিবারকে বাস্তুজমি প্রদান করা হল।’’ মহকুমাশাসক অচিন্ত্যবাবু বলেন, “এটা প্রশাসনের কাছেও একটা বিরাট সাফল্য। প্রশাসনের সমস্ত দফতরের সমন্বয় ছাড়া এটা সম্ভব হত না। তবে ওই এলাকায় সরকারিভাবে আরও কী কী সুযোগ সুবিধা দেওয়া যায়, সেই বিষয়েও আমরা চেষ্টা করছি।” এদিনের অনুষ্ঠানে সরকারি দফতরগুলির সমন্বয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক সৌজন্যও ছিল চোখে পড়ার মতো। সিপিএমের বিধায়কের সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সভাপতিও। দুজনেই এদিন উন্নয়নের পক্ষেই সওয়াল করেন। |