|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর |
মাতৃসদন |
পুনর্জন্ম |
জয়তী রাহা |
রূপ বদল হচ্ছে বরাহনগর পুরসভা পরিচালিত মাতৃসদনের। অথচ এর জন্য একটি পয়সাও খরচ করতে হচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসনকে। টাকার সংস্থান ছিল না। প্রয়োজন ছিল চেষ্টার। সেই চেষ্টাই এত দিনে সার্থক হল বলে জানাচ্ছে বরাহনগর পুরসভা।
বরাহনগর পুরসভা লাগোয়া এই মাতৃসদনের উদ্বোধন হয় ১৯৪৭ সালে। এক সময়ে বরাহনগরের প্রাণকেন্দ্র এই মাতৃ সদনটি উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব, যথেষ্ট সংখ্যক চিকিৎসক এবং অন্য কর্মী না থাকা এবং প্রয়োজনীয় অর্থসাহায্য না মেলার কারণে ধীরে ধীরে প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। এলাকাবাসীর বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরেই পুর-বোর্ডের কাছে এই মাতৃসদনটির পুনরুজ্জীবনের দাবি জানিয়ে এসেছেন তাঁরা। কিন্তু বেহাল আর্থিক অবস্থার কথা বলে বারবার উন্নয়নের কাজে পিছু হটেছে পুরসভা। প্রাক্তন বাম পুরবোর্ড বা বর্তমান তৃণমূল বোর্ডের কাছে মাতৃসদনের পরিকাঠামো উন্নয়নই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।
|
|
রূপ বদলের প্রস্তাব অনুযায়ী, ইতিমধ্যে হাসপাতালের পুরনো বাড়ি থেকে শিশু ও মাতৃকল্যাণ প্রকল্প (আইপিপি-৮)-এর নতুন দোতলা বাড়িতে শয্যা স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানকার দু’টি তলায় চলছে বহির্বিভাগ ও সদ্য শুরু হওয়া অপারেশন থিয়েটার। এই বাড়িটির উপরে গড়ে তোলা হবে আরও দু’টি তল। মাতৃসদনের পুরনো বাড়িটিতে থাকছে শুধু অপারেশন থিয়েটারটি। এই বাড়িটিকে ভেঙে নতুন করে গড়ে তোলা হবে। বর্তমানে ৪০টি বেড নিয়ে চলছে মাতৃসদন। তবে পুনরুজ্জীবনের পরে এটি হবে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। থাকবে অস্থি, মেডিসিন, শল্য, ইএনটি, স্ত্রীরোগ-সহ বিভিন্ন বিভাগের বহির্বিভাগ এবং পুরুষ ও মহিলাদের জন্য অন্তর্বিভাগ। প্রাথমিক ভাবে ১০০ শয্যা দিয়ে শুরু করা হবে। পরে ধীরে ধীরে বাড়ানো হবে শয্যা-সংখ্যা। তবে কাজ চলাকালীন হাসপাতাল বন্ধ থাকবে না কোনও ভাবেই।
সব মিলিয়ে এই কর্মকাণ্ডের খরচ ধার্য হয়েছে ৩ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। বরাহনগর পুরসভা সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ সৌগত রায়ের সহায়তায় পুরো টাকাটাই আসছে ‘ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ফিনান্স কর্পোরেশন’-এর ‘কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সেবিলিটি ফান্ড’ (সিএসআর) থেকে। সৌগতবাবুর বক্তব্য, “এমন ফান্ডের অস্তিত্ব আছে। ফান্ড আনতে শুধু লেগে থাকতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় আবাসন ও শহরাঞ্চলের দারিদ্র দূরীকরণ মন্ত্রকের অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘হিন্দুস্তান প্রিফ্যাব লিমিটেড’ এই কাজের টেকনিক্যাল দিক দেখবে। আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে রেলের একটি শাখা সংস্থা। এর আগে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত জম্মু কাশ্মীরেও এরা সফল ভাবে বাড়ি তৈরির কাজ করেছে। অর্থের জোগান ও কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থা দু’টিকে কেবলমাত্র পাশে থেকে সাহায্য করবে স্থানীয় প্রশাসন। তা ছাড়া আর কোনও ভূমিকা থাকবে না বরাহনগর পুরসভার। তবে এটি পিপিপি মডেল নয়।
কারণ, হাসপাতাল তৈরির পরে সংস্থা দু’টির কোনও ভূমিকা থাকবে না। বরাহনগর পুরসভাই আগের মতো স্বাধীন ভাবে হাসপাতাল পরিচালনা করবে।” |
|
‘হিন্দুস্তান প্রিফ্যাব লিমিটেড’-এর চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জয়বীর শ্রীবাস্তব বলেন, “পরিকল্পনা তৈরি ও তার রূপায়ণের কাজ করছে আমাদের সংস্থা। পুরো বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা মেনে হচ্ছে। যেহেতু চালু হাসপাতাল, তাই সতর্কতার সঙ্গে কাজ করা হবে। আগামী ১৫ অগস্ট থেকে কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করতে চেষ্টা করব। আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়া হাসপাতাল তৈরির কোনও অর্থ নেই। তাই সিভিল ওয়ার্ক শেষ হলে এই খাতে অন্য কোনও সংস্থা থেকে আর্থিক সহায়তা নেওয়া হবে।”
অন্য দিকে, বরাহনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক বলেন, “মাতৃসদনের উন্নয়নে পুরসভার পক্ষে এত টাকা খরচ করা সম্ভব ছিল না। রোগীদের যাতে সমস্যা না হয়, তা মাথায় রেখেই কাজ করবে সংস্থাটি। আপাতত ‘আইপিপি-৮’-এর নতুন বাড়িতে ৮০ টাকার টিকিটে শুরু হয়েছে পলিক্লিনিক। পরবর্তী কালেও এটি চালু থাকবে।”
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
|
|
|