উত্তর কলকাতা
হিন্দু সৎকার সমিতি
জমির ফাঁসে মর্গ
মোড়কবন্দি হয়ে আছে মর্গের দামি যন্ত্রপাতি। জমি পেলেও মেলেনি জমির মালিকানা। মর্গ তৈরির পরিকল্পনা তাই কাগজে-কলমেই আটকে আছে। চরম অনিশ্চয়তায় ৮০ বছরের হিন্দু সৎকার সমিতির কর্তারা এখন মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান।
মহাত্মা গাঁধী রোডে সমিতির নিজস্ব বাড়িতে বছর আটেক আগেই মর্গ তৈরির পরিকল্পনা করেছিল সমিতি। যন্ত্রপাতিও আনা হয়। যে সব বাড়ির ছেলেমেয়েরা দূরে বা বিদেশে থাকেন তাঁরা যাতে প্রয়াত স্বজনদের শেষ দেখা দেখতে পান, সেই উদ্দেশ্যেই এই মর্গ তৈরির কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ আপত্তি তোলায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা যায়নি। সমিতির অন্যতম কর্তা সন্দীপ মুখোপাধ্যায় এ কথা জানিয়ে বলেন, “এর পরে পুরসভা ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে মর্গের জন্য একখণ্ড জমি চেয়েছিলাম। গত বছর গোড়ার দিকে রাজ্য সরকার বিনামূল্যে আমাদের নিউ টাউনে ১০ কাঠা জমি বরাদ্দ করে। রাজনৈতিক পালাবদলের পরে সেই জমি আর হাতে পাইনি।”
গত ফেব্রুয়ারি মাসে হিডকো-র বৈঠকে নিউ টাউনে যে সব জমি বরাদ্দ করা হয়েছিল, ক্ষমতায় আসার পরে সেগুলি বাতিল করে দেয় নতুন সরকার। হিন্দু সৎকার সমিতির জমিটিও ছিল সেই শয্যা-সংখ্যা। তবে কাজ চলাকালীন হাসপাতাল বন্ধ থাকবে না কোনও ভাবেই।
সব মিলিয়ে এই কর্মকাণ্ডের খরচ ধার্য হয়েছে ৩ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। বরাহনগর পুরসভা সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ সৌগত রায়ের সহায়তায় পুরো টাকাটাই আসছে ‘ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ফিনান্স কর্পোরেশন’-এর ‘কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সেবিলিটি ফান্ড’ (সিএসআর) থেকে। সৌগতবাবুর বক্তব্য, “এমন ফান্ডের অস্তিত্ব আছে। ফান্ড আনতে শুধু লেগে থাকতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় আবাসন ও শহরাঞ্চলের দারিদ্র দূরীকরণ মন্ত্রকের অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘হিন্দুস্তান প্রিফ্যাব লিমিটেড’ এই কাজের টেকনিক্যাল দিক দেখবে। আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে রেলের একটি শাখা সংস্থা। এর আগে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত জম্মু কাশ্মীরেও এরা সফল ভাবে বাড়ি তৈরির কাজ করেছে। অর্থের জোগান ও কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থা দু’টিকে কেবলমাত্র পাশে থেকে সাহায্য করবে স্থানীয় প্রশাসন। তা ছাড়া আর কোনও ভূমিকা থাকবে না বরাহনগর পুরসভার। তবে এটি পিপিপি মডেল নয়। কারণ, হাসপাতাল তৈরির পরে সংস্থা দু’টির কোনও ভূমিকা থাকবে না। বরাহনগর পুরসভাই আগের মতো স্বাধীন ভাবে হাসপাতাল পরিচালনা করবে।”
‘হিন্দুস্তান প্রিফ্যাব লিমিটেড’-এর চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জয়বীর শ্রীবাস্তব বলেন, “পরিকল্পনা তৈরি ও তার রূপায়ণের কাজ করছে আমাদের সংস্থা। পুরো বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা মেনে হচ্ছে। যেহেতু চালু হাসপাতাল, তাই সতর্কতার সঙ্গে কাজ করা হবে। আগামী ১৫ অগস্ট থেকে কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করতে চেষ্টা করব। আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়া হাসপাতাল তৈরির কোনও অর্থ নেই। তাই সিভিল ওয়ার্ক শেষ হলে এই খাতে অন্য কোনও সংস্থা থেকে আর্থিক সহায়তা নেওয়া হবে।”
অন্য দিকে, বরাহনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক বলেন, “মাতৃসদনের উন্নয়নে পুরসভার পক্ষে এত টাকা খরচ করা সম্ভব ছিল না। রোগীদের যাতে সমস্যা না হয়, তা মাথায় রেখেই কাজ করবে সংস্থাটি। আপাতত ‘আইপিপি-৮’-এর নতুন বাড়িতে ৮০ টাকার টিকিটে শুরু হয়েছে পলিক্লিনিক। পরবর্তী কালেও এটি চালু থাকবে।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.